Advertisement
E-Paper

বিপন্ন বিজ্ঞান, বিজ্ঞানীর ঢল ৬০০ শহরে

রাস্তায় নেমে মিছিল করা, দাবিদাওয়া আদায়ে গলা ফাটানো তাঁদের কাজ নয়। গবেষণাগার বা বিজ্ঞানের ক্লাসেই স্বচ্ছন্দ তাঁরা। কিন্তু বসুন্ধরা দিবসে কাল তাঁরাও নেমে এলেন পথে! ওয়াশিংটন মনুমেন্ট থেকে লন্ডন, জার্মানির ব্র্যান্ডেনবুর্গ থেকে স্পেনের মাদ্রিদ, বার্সিলোনা, এমনকী সুদূর উত্তরে গ্রিনল্যান্ডে— একই ছবি ৬০০টিরও বেশি শহরে।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৭ ০৩:৫৫
বাঁচাও: বিজ্ঞানকে আক্রমণ বা উপেক্ষা নয়, বরং গবেষণায় চাই আরও অর্থ। এই দাবিতে ওয়াশিংটনের পথে বিজ্ঞানী ও বিজ্ঞানপ্রেমীরা। ছবি: রয়টার্স

বাঁচাও: বিজ্ঞানকে আক্রমণ বা উপেক্ষা নয়, বরং গবেষণায় চাই আরও অর্থ। এই দাবিতে ওয়াশিংটনের পথে বিজ্ঞানী ও বিজ্ঞানপ্রেমীরা। ছবি: রয়টার্স

রাস্তায় নেমে মিছিল করা, দাবিদাওয়া আদায়ে গলা ফাটানো তাঁদের কাজ নয়। গবেষণাগার বা বিজ্ঞানের ক্লাসেই স্বচ্ছন্দ তাঁরা। কিন্তু বসুন্ধরা দিবসে কাল তাঁরাও নেমে এলেন পথে! ওয়াশিংটন মনুমেন্ট থেকে লন্ডন, জার্মানির ব্র্যান্ডেনবুর্গ থেকে স্পেনের মাদ্রিদ, বার্সিলোনা, এমনকী সুদূর উত্তরে গ্রিনল্যান্ডে— একই ছবি ৬০০টিরও বেশি শহরে। সকলের একটিই দাবি, বাঁচাতে হবে বিজ্ঞানকে। রাজনীতি আর কর্পোরেট সাম্রাজ্যের কব্জা থেকে মুক্ত করতে হবে বিজ্ঞানকে। একপেশে তথ্যের একচেটিয়া প্রচারের বদলে বিজ্ঞানের বিকল্প তথ্যগুলিও মেলে ধরার পথ খুলে দিতে হবে। নিজেদের পাওনাগণ্ডা বাড়ানো লক্ষ্য নয় এই বিজ্ঞানী বা বিজ্ঞানের শিক্ষক, লেখক ও ছাত্রদের। বিশ্বের দরবারে তাঁদের আর্জি, যথেষ্ট অর্থের সংস্থান থাক বিজ্ঞানের গবেষণায়।

বস্তুত এই সব নিয়েই বারবার রাজনীতির লোকজনের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির পরিবেশ বিজ্ঞানী মাইকেল ম্যান। এ দিন আর একা নন তিনি। অনেক সতীর্থকে পাশে নিয়ে বললেন, ‘‘সাধ করে এই লড়াইটা শুরু করিনি আমরা। কিন্তু অবস্থাটা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, আমাদের লড়তেই হবে। খুব বড় বিপদের মুখে এসে দাঁড়িয়েছি আমরা।’’

বিশ্বকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচানোর পণ করে ৪৭ বছর আগে যাঁরা ‘আর্থ ডে’ পালন শুরু করেন, ডেনিস হায়েস তাঁদের অন্যতম। এ বারের বসুন্ধরা দিবসের চেহারা দেখে অভিভূত তিনি। বললেন, ‘‘একটা জাদু ঘটে গিয়েছে যেন। সেই প্রথম বারের উদ্দীপনাটা যেন ফিরে এসেছে।’’ জেনিভার মিছিলে প্ল্যাকার্ড, ‘বিজ্ঞান, আঁধারে এক প্রদীপ’, ‘বিজ্ঞানই উত্তর’। বার্লিনের মিছিলে বার্তা, ‘আবেগে নয়, তথ্যের ভিতে হোক সিদ্ধান্ত’। এক শহরের মিছিলে ন’মাসের অন্তঃসত্ত্বা যুবতী, তো অন্য শহরে খুঁড়িয়ে চলা বৃদ্ধা। সকলের এক সুর, উষ্ণায়নই হোক বা ওষুধ— বিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠিত সত্যগুলিকে অস্বীকার কোরো না।

সমস্যাটা সার্বজনীন হলেও আমেরিকার ক্ষেত্রে বাড়তি উদ্দীপনার কারণ, প্রেসিডেন্ট এখন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এক তুড়িতে যিনি বলে দেন, বিশ্বের উষ্ণায়নটা স্রেফ কর্পোরেট প্রচার। আমেরিকার ডলার খাওয়ার খাঁচাকল। যাঁর সরকার কলমের এক খোঁচায় ২০ শতাংশ কমিয়ে দেয় ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের বরাদ্দ। বিজ্ঞানের জন্য মিছিল শুরুর অনেক ক্ষণ পরে ট্রাম্প যে বিবৃতিটি দিয়েছেন, আপাত ভাবে তা সকলেরই জানা। কিন্তু এর মধ্যেও যেন একটা কথাও খোঁচা রয়ে গিয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। তাঁর কথায়, ‘‘প্রকৃত বিজ্ঞান কোনও মতাদর্শের উপরে নির্ভর করে না। বরং সত্যনিষ্ঠ অনুসন্ধান ও নিখাদ বিতর্কই এর আসল ভিত।’’

বিজ্ঞানের জন্য পথে নামার ডাক দিয়েছিলেন যাঁরা, তাঁরা কিন্তু স্পষ্টই বলছেন, বিষয়টা বিশেষ কোনও সরকার বা দলকে নিয়ে নয়। বিজ্ঞানের জন্য ৩০, ২০ বা ১০ বছর আগেও তঁরা পথে হেঁটেছেন। তবে এটাও ঘটনা বর্তমানে বিজ্ঞানকে যে ভাবে সিধেসাপটা অস্বীকার ও আক্রমণ করা হচ্ছে, সেটা উদ্বেগের।

শিকাগোর উদ্ভিদবিজ্ঞানী, প্যাটি ভিট বোঝাতে চাইলেন, উদ্বেগের আসল চেহারাটা। তাঁর বক্তব্য, বেশির ভাগ মানুষ জানেনই না, বিজ্ঞানের জন্য ব্যয় করলে, আমাদের রোজকার জীবনে কতটা উপকার মেলে। চিকিৎসা ক্ষেত্রে যে কোনও উদ্ভাবন, খাবার, পোশাক, সেলফোন, কম্পিউটার— সবই তো বিজ্ঞানের ফসল।’’ ভিটের তাই হুঁশিয়ারি, ‘‘আজ যদি আমরা বিজ্ঞান গবেষণায় অর্থ বরাদ্দ বন্ধ করে দিই, ১০ বছর পরে আমরা যা পেতে পারতাম, তা আমরা পাব না।’’

শুধু কি ভবিষ্যৎ! বর্তমানও কি চলবে বিজ্ঞানের পথ রুখে? ওয়াশিংটনের পথে দাঁড়িয়ে ছিল বছর নয়ের স্যাম ক্লিমাস। এক বছর বয়সে ব্রেন ক্যানসার হয়েছিল পার্কার্সবুর্গের এই ছেলেটির। গত আট বছর ধরে ভাল আছে সে। তার হাতে লাল কালিতে লেখা বার্তাটি খুব ব্যক্তিগত, ‘‘বিজ্ঞান আমাকে বাঁচিয়েছে।’’

স্যাম যা লেখেনি, সেটাই বুঝে নিতে অসুবিধে হয় না। বিজ্ঞানকে বাঁচিয়ে রাখো। তবেই বাঁচব আমরা।

Science Politics Scientist Protest
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy