Advertisement
E-Paper

প্রতি সেকেন্ডে ৬০০ কোটি টন করে বাড়ছে নিঃসঙ্গ গ্রহের ভর! ধুলো আর গ্যাস নিয়ে ঘুরছে একা একাই

বয়স ১০-২০ লক্ষ বছর। মহাকাশে একা একা ঘুরে বেড়াচ্ছে ‘চা ১১০৭-৭৬২৬’। আপাত ভাবে গ্রহের বয়স অনেকটা মনে হলেও, এটি এখনও নবীন। বলা যায়, কৈশোরেও পা রাখেনি।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২৫ ০৮:৫৩
নিঃসঙ্গ গ্রহকে নিয়ে গবেষণায় উঠে এল নতুন তথ্য

নিঃসঙ্গ গ্রহকে নিয়ে গবেষণায় উঠে এল নতুন তথ্য —প্রতীকী চিত্র।

খোঁজ মিলেছিল ২০০৮ সালে। এক একাকী, নিঃসঙ্গ গ্রহ। মহাকাশ বিজ্ঞানীরা এর নাম রাখেন ‘চা ১১০৭-৭৬২৬’। পৃথিবী যেমন সূর্যের চারদিকে প্রদক্ষিণ করে, এই গ্রহের তেমন কোনও বালাই নেই। এটি কোনও নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করে না। একা একাই মহাবিশ্বে ঘুরে বেড়ায়। খুঁজে পাওয়ার দেড় দশকেরও বেশি সময় পরে জানা গেল, এই গ্রহ রেকর্ড গতিতে বেড়ে উঠছে। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গিল, প্রতি সেকেন্ডে ৬০০ কোটি টন (৬ লক্ষ কোটি কেজি) করে ভর বৃদ্ধি পাচ্ছে গ্রহটির।

ব্রহ্মাণ্ডে এমন অনেক গ্রহই রয়েছে, যারা নিঃসঙ্গ। কোনও গ্রহ নিজের নক্ষত্রমণ্ডল থেকে ছিটকে বেরিয়ে গেলে, এই ধরনের নিঃসঙ্গ গ্রহ তৈরি হতে পারে। আবার অনেক সময় কোনও গ্রহ মহাকর্ষীয় শক্তি দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার মতো পর্যাপ্ত ভর সংগ্রহ করতে না-পারলে, সেটিও বিচ্ছিন্ন গ্রহ হয়ে মহাকাশে ঘুরে বেড়ায়। তবে ‘চা ১১০৭-৭৬২৬’-এর এমন কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা বাকিদের থেকে এটিকে আলাদা করে তুলেছে। যে দ্রুত গতিতে এটির ভর বৃদ্ধি পাচ্ছে, তা এখনও পর্যন্ত অন্য কোনও নিঃসঙ্গ গ্রহের ক্ষেত্রে দেখা যায়নি।

পৃথিবী থেকে প্রায় ৬২০ আলোকবর্ষ (এক বছরে আলো যতটা পথ অতিক্রম করে সেই দূরত্বকে এক আলোকবর্ষ বলে) দূরে রয়েছে এই গ্রহ। বয়স ১০-২০ লক্ষ বছর। আপাত ভাবে গ্রহের বয়স অনেকটা মনে হলেও, এটি এখনও নবীন। বলা যায়, কৈশোরেও পা রাখেনি। সবে শৈশবকাল চলছে। পৃথিবী এবং আমাদের সৌরমণ্ডলের অন্য গ্রহগুলির বয়স ৪৫০ কোটি বছরের আশপাশে। সৌরমণ্ডলের সবচেয়ে বড় গ্রহ বৃহস্পতির যা ভর, এই নিঃসঙ্গ গ্রহের ভর তার চেয়েও ৫-১০ গুণ বেশি বলে অনুমান বিজ্ঞানীদের। প্রতিনিয়ত আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে গ্রহটির ভর। ‘দ্য অ্যাস্ট্রোফিজ়িক্স জার্নাল লেটার্‌স’ সাময়িকীতে গত বৃহস্পতিবারই এই সংক্রান্ত নতুন গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে।

গ্রহটির সন্ধান পাওয়ার পর থেকে বিভিন্ন শক্তিশালী টেলিস্কোপের মাধ্যমে এটির উপর নজর রাখা হচ্ছিল। সেগুলি থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে গবেষকেরা দেখেন, গত কয়েক মাসে গ্রহটির ভর তার আগের তুলনায় প্রায় আট গুণ দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর চারপাশে গ্যাস এবং ধূলিকণার একটি বলয় রয়েছে। গ্রহ আবিষ্কারের ১৬ বছর পরে ২০২৪ সালে এর বলয়টি ধরা পড়ে টেলিস্কোপে। ওই বলয় থেকে গ্যাস এবং ধূলিকণা ক্রমাগত গ্রহের উপরে এসে পড়ছে এবং সেখানেই জমা হচ্ছে। প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৬০০ কোটি টন হারে গ্যাস এবং ধূলিকণা গিলে খাচ্ছে ‘চা ১১০৭-৭৬২৬’।

তবে এই গ্রহের ভর যে সব সময় একই হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে, এমন নয়। গত এপ্রিল-মে মাসে মোটামুটি একটি নির্দিষ্ট হারেই ভর বৃদ্ধি পাচ্ছিল গ্রহটির। তার পরেই আচমকা বৃদ্ধির হার অনেকটা বেড়ে যায় গত জুন-অগস্টের মধ্যে। গবেষকদলের সদস্য তথা স্কটল্যান্ডের সেন্ট অ্যান্ড্রুজ় বিশ্ববিদ্যালয়ের মহাকাশবিজ্ঞানী অ্যালেক্স স্কোলজ় বলেন, “আমি প্রথমে ভেবেছিলাম, এটি একটি সাময়িক ঘটনা। কারণ অনেক ক্ষেত্রেই এমন দেখা যায়। কিন্তু জুলাই এবং অগস্টেও এমন দ্রুত হারে বৃদ্ধি পেতে থাকায় আমি হতবাক হয়ে গিয়েছি।” ইটালির ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর অ্যাস্ট্রোফিজ়িক্সের মহাকাশবিজ্ঞানী তথা এই গবেষকদলের প্রধান ভিক্টর আলমেন্দ্রোসের কথায়, কোনও গ্রহের ভর বৃদ্ধির এমন অস্বাভাবিক হার আগে কখনও দেখা যায়নি।

এই অস্বাভাবিক বৃদ্ধি নজরে আসার পরে অতীতের তথ্যও ঘেঁটে দেখেন গবেষকেরা। তাতে দেখা যায়, ২০১৬ সালেও এক বার সাময়িক ভাবে দ্রুত হারে ভর বৃদ্ধি পাচ্ছিল গ্রহটির। পরে আবার তা কমেও যায়। তখন অবশ্য বিষয়টি নিয়ে বিশেষ নাড়াচাড়া হয়নি। এখন ২০১৬ সালের তথ্য এবং সাম্প্রতিক তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখছেন গবেষকেরা। তাঁদের অনুমান, একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর এমন অস্বাভাবিক হারে ভর বৃদ্ধি দেখা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে কত সময়ের ব্যবধানে এটি ঘটতে পারে, কত ক্ষণের জন্য এই অস্বাভাবিক গতি থাকতে পারে, তা নিয়ে আরও গবেষণা করতে চান বিজ্ঞানীরা।

সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ওই গ্রহের চারপাশে গ্যাস এবং ধুলোর বলয়ে রাসায়নিক পরিবর্তন এসেছে। যখন দ্রুত হারে গ্রহটির ভর বৃদ্ধি পাচ্ছিল, তখন বলয়ে বাষ্পের উপস্থিতি ছিল। কিন্তু আগে তা ছিল না। এত দিন পর্যন্ত কোনও নক্ষত্রের চারপাশে তৈরি হওয়া বলয়ে এই ধরনের রাসায়নিক পরিবর্তন দেখা গিয়েছে। গ্রহের ক্ষেত্রে এই প্রথম এমন ঘটনা ধরা পড়ল বলে দাবি গবেষকদের। তা থেকে গবেষকদের বক্তব্য, ‘চা ১১০৭-৭৬২৬’ আসলে একটি গ্রহ হলেও অনেক ক্ষেত্রে এটি নক্ষত্রের মতো আচরণ করে। গবেষকদের অনুমান, নিঃসঙ্গ এই গ্রহটিতে কতটা পরিমাণ ধুলো এবং গ্যাস এসে জমছে, তার সঙ্গে চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের একটি ভূমিকা থাকতে পারে। সাধারণত নক্ষত্রের ভর বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এই ধরনের ঘটনা দেখা যায়।

নিঃসঙ্গ এই গ্রহের ভর আমাদের সূর্যের ভরের ১ শতাংশেরও কম। তবে নক্ষত্রের তুলনায় অনেক কম ভরের মহাজাগতিক বস্তুরও ভর বৃদ্ধির নেপথ্যে শক্তিশালী চৌম্বকীয় ক্ষেত্র কাজ করতে পারে। এমনটাই আভাস মিলেছে নতুন গবেষণায়। যদিও আচমকা এত দ্রুত গতিতে ভর বৃদ্ধির কারণ এখনও পর্যন্ত স্পষ্ট নয়। এ নিয়ে এখনও গবেষণা চালানো হচ্ছে। তবে প্রাথমিক ভাবে বিজ্ঞানীদের অনুমান, বলয়ের রাসায়নিক পরিবর্তন এবং চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের যোগ থাকতে পারে অস্বাভাবিক হারে ভর বৃদ্ধির সঙ্গে।

planet Space Science Scientists
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy