Advertisement
E-Paper

শিম্পাঞ্জিদের বুদ্ধি নিয়ে ধারণা বদলে দেন গুডঅল! লড়াই ছিল পুরুষপ্রধান গবেষণাক্ষেত্রের সঙ্গেও

মনুষ ছাড়া অন্য প্রাণীরাও যে কোনও সরঞ্জামকে প্রয়োজনমতো কাজে লাগাতে পারে, গুডঅলের আবিষ্কারের আগে সেই ধারণা ছিল না বিজ্ঞানীদের। মাত্র ২৬ বছর বয়স থেকে হাফ হাতা জামা-প্যান্ট পরে, গলায় দূরবীন ঝুলিয়ে, পায়ে স্নিকার গলিয়ে ঘুরে বেড়াতেন জাতীয় উদ্যানে।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০২৫ ১৩:১৪
প্রয়াত ব্রিটিশ নৃতত্ত্ববিদ ভ্যালেরিন জেন মরিস গুডঅল।

প্রয়াত ব্রিটিশ নৃতত্ত্ববিদ ভ্যালেরিন জেন মরিস গুডঅল। —ফাইল চিত্র।

শিম্পাঞ্জিরাও যে মানুষের মতো করে ভাবতে পারে, মানুষের মতো কৌশল রপ্ত করতে পারে— তা প্রথম চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছিলেন তিনিই। গোটা জীবন তিনি কাটিয়েছেন শিম্পাঞ্জিদের নিয়ে গবেষণা করে। কথা হচ্ছে ব্রিটিশ নৃতত্ত্ববিদ ভ্যালেরিন জেন মরিস গুডঅলকে নিয়ে। তাঁর গবেষণা এবং শিম্পাঞ্জিদের প্রতি তাঁর আত্মিক টানের জন্য ‘শিম্পাঞ্জিদের মা’ (মাদার অফ শিম্পাঞ্জিজ়) নামেই পরিচিত গুডঅল। গত বুধবার আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ায় বয়সজনিত কারণে মৃত্যু হয় ৯১ বছর বয়সি এই প্রাণীবিদের।

শিম্পাঞ্জিদের নিয়ে তাঁর গবেষণা শুরু হয় পূর্ব আফ্রিকার তানজ়ানিয়ায়। সেখানে গম্বি স্ট্রিম জাতীয় উদ্যানে কাজ শুরু করেন তিনি। যে সময়ে তিনি গবেষণা শুরু করেন, ওই সময়ে বন্য প্রাণীদের বিভিন্ন সাঙ্কেতিক নাম বা নম্বর দিয়েই চিহ্নিত করার চল ছিল। তবে সে পথে হাঁটেননি গুডঅল। প্রত্যেক শিম্পাঞ্জির আলাদা আলাদা নামকরণ করেছিলেন তিনি।

ওই জাতীয় উদ্যানেই ১৯৬০ সালে দুই শিম্পাঞ্জিকে খুব কাছ থেকে লক্ষ করেন গুডঅল, যা শিম্পাঞ্জিদের নিয়ে গোটা বিশ্বের ধারণা বদলে দেয়। জঙ্গলের মধ্যে একটি উইয়ের ঢিবির সামনে বসেছিল দু’টি শিম্পাঞ্জি। দু’টি পুরুষ শিম্পাঞ্জি। গুডঅল দেখেন, তারা গাছের সরু ডাল ব্যবহার করে উইয়ের ঢিবি থেকে পোকা বার করে আনছে। তার পরে সেই ডালের আগা মুখে পুরে চেটে খেয়ে নিচ্ছে পোকাদের। শিম্পাঞ্জিরা যে মানুষের মতো বিভিন্ন সরঞ্জামকে প্রয়োজনমতো কাজে লাগাতে পারে— তার প্রথম দলিল এটিই। ব্রিটিশ নৃতত্ত্ববিদ গুডঅলই প্রথম এটি লক্ষ্য করেন।

মনুষ ছাড়া অন্য প্রাণীরাও যে কোনও সরঞ্জামকে প্রয়োজনমতো কাজে লাগাতে পারে, গুডঅলের আবিষ্কারের আগে সেই ধারণা ছিল না বিজ্ঞানীদের। মাত্র ২৬ বছর বয়সে ব্রিটেন থেকে তানজ়ানিয়ার জাতীয় উদ্যানে পা রাখেন তিনি। ওই সময়ে তাঁর কোনও আগাম প্রশিক্ষণও ছিল না, বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিও ছিল না। ছিল শুধু পশুদের প্রতি ভালবাসা। হাফ হাতা জামা-প্যান্ট পরে, গলায় দূরবীন ঝুলিয়ে, পায়ে স্নিকার গলিয়ে ঘুরে বেড়াতেন জাতীয় উদ্যানে। তিনি এমন একটি সময়ে নৃতত্ত্ব এবং প্রাণী গবেষণায় পা রাখেন, যখন এই গবেষণাক্ষেত্রটি ছিল মূলত ‘পুরুষপ্রধান’। বেশির ভাগ গবেষকই ছিলেন পুরুষ। এমনকি সেই সময়ে ঋণের জন্য ব্রিটিশ মহিলাদের পুরুষ গ্যারান্টারের প্রয়োজন পড়ত।

গুডঅলের গবেষণার শুরুর দিকে অনেকেই তাঁকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে চাননি। কিন্তু সেই ব্রিটিশ মহিলাই গোটা বিশ্বকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেন, শিম্পাঞ্জিরাও মানুষের মতো কৌশল রপ্ত করতে পারে। এমনকি সমসাময়িক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমেও তাঁকে নিয়ে বিভিন্ন প্রতিবেদনে সেই আভাস পাওয়া যায়। আলাদা করে ‘মহিলা গবেষক’, ‘মহিলা বিজ্ঞানী’ বলে উল্লেখ করা হত তাঁকে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে এমনও বলা হত— ‘পুরুষদের থেকে বানরদের সঙ্গে সময় কাটানোয় বেশি স্বচ্ছন্দ তিনি’। যত না আলোচনা হত তাঁর গবেষণা নিয়ে, তার চেয়ে বেশি আলোচনা চলত ‘সাদা চুলের মহিলা গবেষক’ প্রসঙ্গে। এমন বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার মাঝেই গবেষণা চালিয়ে যান তিনি, যা প্রাণীজগতকে নিয়ে বিশ্ববাসীর ধ্যানধারনাই বদলে দেয়।

একটি আলোচনাসভায় বক্তৃতার জন্য সম্প্রতি আমেরিকার ক্যালিফর্নিয়ায় গিয়েছিলেন গুডঅল। কিন্তু ওই বক্তৃতা আর করা হয়নি। তার আগেই গত বুধবার রাতে (স্থানীয় সময় অনুসারে) মৃত্যু হয় তাঁর। ওই আলোচনাসভায় ‘জেন গুডঅল ইনস্টিটিউট’-এর তরফে এরিন ম্যাককম্ব তাঁর মৃত্যুসংবাদ ঘোষণা করেন। মৃত্যুর আগে গুডঅলের রেকর্ড করা একটি ভিডিয়োও দেখানো হয় সেখানে। ওই ভিডিয়োতেও গুডঅল মানুষ এবং প্রাণীজগতের মধ্যে সমন্বয় নিয়েই কথা বলে যান তিনি।

Chimpanzee animals
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy