Advertisement
E-Paper

ঠ্যাং চিবোতে চিবোতেই মৃত্যু! ডাইনোসরের নতুন প্রজাতির জীবাশ্ম আবিষ্কার, মুখে এক ‘শত্রু’ প্রাণীর হাড়গোড়

মেগারাপটর ডাইনোসরদের আবাস মূলত ছিল দক্ষিণ আমেরিকায়। এ বার আর্জেন্টিনা থেকে সেই মেগারাপটরদের নতুন এক প্রজাতির খোঁজ মিলল। মুখে এক শত্রু প্রাণীর হাড়গোড়।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৯:০৯

ছবি: এআই সহায়তায় প্রণীত।

বিশাল মুখগহ্বরের ভিতর বড়, মোটা ছুরির ফলার মতো পর পর দাঁত। তা চেপে বসে আছে ‘খাদ্যের’ উপর। মুখের ভিতরেই রয়েছে হাড়গোড়! সম্প্রতি ডাইনোসরের এমনই এক জীবাশ্মের খোঁজ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তা নিয়ে কৌতূহলও তুঙ্গে। শুধু তো ডাইনোসরের নতুন প্রজাতি নয়, তার খাদ্যাভ্যাসের ইঙ্গিতও যে একই সঙ্গে মিলেছে! যেন এক ঢিলে দুই পাখি!

মেগারাপটর ডাইনোসরদের আবাস মূলত ছিল দক্ষিণ আমেরিকায়, আগেই তা জানা গিয়েছে। এ বার আর্জেন্টিনা থেকে সেই মেগারাপটরদের নতুন এক প্রজাতির খোঁজ মিলেছে। জীবাশ্ম নিয়ে যাঁরা ঘাঁটাঘাঁটি করেন, তাঁরা নতুন জীবাশ্মটি নিয়ে বেশ উৎসাহিত। জীবাশ্মের মুখে যে প্রাণীর দেহাংশ পাওয়া গিয়েছে, তাকে বর্তমান কুমিরের কোনও পূর্বপুরুষ বলে মনে করা হচ্ছে। অর্থাৎ, কুমির প্রজাতির কোনও প্রাণী নতুন আবিষ্কৃত এই ডাইনোসরদের খাদ্য ছিল। প্রাথমিক ভাবে তেমনটাই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। যদিও মুখে হাড়গোড় থাকা মানেই যে ওই প্রাণী ওই ডাইনোসরের খাদ্য, তা অনেকে মানতে রাজি নন। তাঁদের দাবি, অন্য কোনও ভাবেও ডাইনোসরের মুখে কুমিরের হাড় চলে আসতে পারে। এ নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন।

মেগারাপটর ডাইনোসরের নতুন প্রজাতির বিজ্ঞানসম্মত নাম জোয়াকুইনরাপটর কাসালি। তার মুখ থেকে যে হাড়গোড় পাওয়া গিয়েছে, সেটি কুমির জাতীয় প্রাণীর সামনের দিকের একটি পায়ের হাড়। জীবাশ্মটি বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এই ডাইনোসর নাক থেকে লেজ পর্যন্ত মোট ২৩ ফুট লম্বা। ওজন প্রায় হাজার কিলোগ্রাম। এই ডাইনোসরটির বয়স ১৯ বছরের বেশি নয়। মৃত্যুকালে এটি যৌনমিলনে সক্ষম ছিল। তবে তাকে পূর্ণবয়স্ক বলা যায় না। জীবাশ্মটি ৬ কোটি ৮০ লক্ষ বছরের পুরনো, হিসাব কষে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

যে সমস্ত মাংসাশী ডাইনোসর মূলত দু’পায়ে ভর দিয়ে হাঁটত, তাদের থেরোপড বলে। এই থেরোপডদের মধ্যে খুব পরিচিত নাম টাইর‌্যানোসরস্‌। উত্তর আমেরিকা মহাদেশ জুড়ে এদের আনাগোনা ছিল। আমেরিকার পশ্চিম অংশ এবং কানাডার বেশ কিছু অংশে এদের অস্তিত্বের প্রমাণ মিলেছে। কিন্তু টাইর‌্যানোসরস্‌ সীমাবদ্ধ ছিল উত্তরেই। দক্ষিণ আমেরিকায় রাজত্ব করত থেরোপডদের অন্য প্রজাতি মেগারাপটর। আর্জেন্টিনার নতুন জীবাশ্ম তাদেরই এক জন।

টাইর‌্যানোসরদের মতো মেগারাপটরেরাও মাংসাশী ছিল। তবে তারা ঠিক কী কী খেত, এখনও সে বিষয়ে সম্পূর্ণ নিশ্চিত নন বিজ্ঞানীরা। মনে করা হচ্ছে, সম্প্রতি আবিষ্কৃত জীবাশ্ম থেকে মেগারাপটরদের খাদ্যাভ্যাসের সবচেয়ে স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। আর্জেন্টিনার প্যাটাগনিয়ান ইনস্টিটিউট অফ জিওলজি অ্যান্ড প্যালেওনটোলজির জীবাশ্ম বিশারদ লুসিয়ো ইবিরিসু বলেছেন, ‘‘আমরা ডাইনোসরের নীচের দিকের চোয়ালের হাড়ের মধ্যে একটা হিউমেরাস (সামনের পায়ের উপরের হাড়) পেয়েছি। এর থেকে মনে করা যায়, এই ডাইনোসরটি কুমির প্রজাতির কোনও প্রাণীকে খাচ্ছিল। সেই সময় তার মৃত্যু হয়েছে। তবে এটা অনুমান মাত্র। অকাট্য প্রমাণ নয়।’’ বিজ্ঞানীদের অনেকেই মনে করছেন, ডাইনোসরটির মৃত্যুর পর তার মুখে অন্য কোনও ভাবে হাড়টি চলে এসেছিল। তবে ওই হাড়ে দাঁতের দাগও ছিল। তা কামড়ের ফলে তৈরি হয়েছে বলে কেউ কেউ দাবি করছেন। তাঁদের মতে, দু’টি প্রাণীর মধ্যে লড়াই চলছিল।

ডাইনোসরের জীবাশ্মটিতে কেবল চোয়াল, মাথার খুলি, পা এবং লেজের কিছু অংশের হাড় পাওয়া গিয়েছে। তবে সেটাও কম কিছু নয়। কারণ এর আগে কোনও মেগারাপটরের দেহের এতটা অংশ খুঁজে পাওয়া যায়নি। কিছু অংশ মেলার পর বাকিটা কল্পনায় জুড়ে নিতে হয়েছে বিজ্ঞানীদের। শুধু দক্ষিণ আমেরিকা নয়, মেগারাপটরদের অস্তিত্ব ছিল অস্ট্রেলিয়াতেও। নতুন জীবাশ্ম আবিষ্কারের পর এই সংক্রান্ত গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে ‘নেচার কমিউনিকেশন্‌স’ পত্রিকায়। সেখানেই নতুন প্রজাতি এবং তাদের খাদ্যাভ্যাস নিয়ে মতামত জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞেরা। ওই জীবাশ্ম এখন প্রত্নতত্ত্ববিদদের আকর্ষণের কেন্দ্রে। তা নিয়ে আরও গবেষণা চলছে।

Dinosaurs Food Habit Argentina South America
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy