Advertisement
E-Paper

ভেঙে যাবে আফ্রিকা, মাঝে তৈরি হবে নতুন মহাসাগর! মাটির নীচের ‘হৃৎস্পন্দন’ খবর দিল বিজ্ঞানীদের

বিজ্ঞানীরা আরও একটি বিষয়ে সতর্ক করেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, ভুগর্ভ থেকে লাভা উদ্গীরণের সঙ্গে সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে কার্বন-ডাই-অক্সাইড এবং সালফার ডাই-অক্সাইড তৈরি হবে। তার প্রভাব পড়বে পৃথিবীর জলবায়ুতে।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৯:০০
Scientists found a geological heartbeat that is forming a new ocean

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

মাটির গভীরে ‘ধুকপুক’ করছে লাভা। ঠিক যেন হৃৎস্পন্দন! সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, সেই ‘ভূতাত্ত্বিক হৃৎস্পন্দন’-ই নড়িয়ে দিতে পারে মহাদেশের ভিত। তেমনটাই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁরা মনে করছেন, পূর্ব আফ্রিকার নীচে চলা সেই ‘ভূতাত্ত্বিক হৃৎস্পন্দন’ যা আদতে লাভার স্পন্দন, বদলে দিতে পারে আফ্রিকা মহাদেশের আকার, আকৃতি। তবে তাতে সময় লাগবে কয়েক কোটি বছর। তার পরে কী হবে? বিজ্ঞানীরা বলছেন, তার পরে আফ্রিকার শিং মূল ভূখণ্ড থেকে আলাদা হয়ে যেতে পারে। তার মাঝে নতুন করে জন্ম নিতে পারে মহাসাগরের খাত।

‘নেচার জিয়োসায়েন্স’ পত্রিকায় একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তাতেই নতুন এই গবেষণার কথা তুলে ধরা হয়েছে। ভূ-গর্ভে উত্তাপ এতটাই বেশি যে শিলাখণ্ড, খনিজ থেকে বিভিন্ন পদার্থ গলিত অবস্থায় থাকে, যা লাভা নামে পরিচিত। লাভার চাপবৃদ্ধির কারণে ভূগর্ভে তৈরি হয় স্পন্দন। তাকেই বিজ্ঞানীরা বলছেন ‘ভূতাত্ত্বিক হৃৎস্পন্দন’ (জিয়োলজিক্যাল হার্টবিট)। তাঁরা জানিয়েছেন, ইথিওপি য়ার আফার অঞ্চলে ভূগর্ভ থেকে উঠে আসছে লাভা। তার জেরে ক্ষয়ে ক্ষয়ে দুর্বল হচ্ছে শিলাস্তর, ওই অঞ্চলে বার বার ভূমিকম্প হচ্ছে, সক্রিয় হচ্ছে আগ্নেয়গিরি। আর তার জেরেই ভূখণ্ডের এক অংশ থেকে অন্য অংশ ভবিষ্যতে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।

‘অতিসক্রিয়’

ইথিওপিয়ার আফার অঞ্চলের ভূতাত্ত্বিক গঠন গোটা পৃথিবীতেই বেশ বিরল। লোহিত সাগর পাত, এডেন উপসাগর পাত, মূল ইথিওপিয়ান পাত— এই তিনটি টেকটনিক পাতের সংযোগস্থলে রয়েছে আফার অঞ্চল। তাই একে বলে ‘ত্রিপল জাংশন’। ভূতাত্ত্বিক গঠনের কারণে ইথিওপিয়ার আফার অঞ্চলে প্রায়ই ভূমিকম্প হয়। মাঝেমধ্যেই আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুৎপাত হয়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই অঞ্চলে ভূগর্ভ থেকে লাভা প্রায় দিনই উদ্গত হচ্ছে। সে কারণেই অতি সক্রিয় হয়ে থাকে টেকটনিক পাত। কখনও একে অপরের সঙ্গে ধাক্কা খায়। আর তার জেরে ওই অঞ্চলে প্রায়ই লেগে থাকে ভূমিকম্প বা অগ্ন্যুৎপাত।

ম্যাগমা গহ্বর

বিজ্ঞানীরা ইথিওপিয়ার আফার অঞ্চলের ১৩০টি আগ্নেয়গিরির লাভা নিয়ে পরীক্ষা করেছেন। আর তা থেকেই বেশ কিছু বিষয় তাঁদের কাছে স্পষ্ট হয়েছে। ভূপৃষ্ঠের কঠিন শিলাস্তরের নীচে ম্যান্টেল স্তরে থাকে গলিত লাভা। ওই অংশের তাপমাত্রা এতটাই বেশি থাকে যে, সেখানে কঠিন শিলাখণ্ডও গলে লাভায় পরিণত হয়। ওই ম্যান্টেল স্তরে থাকা লাভার তাপমাত্রা আশপাশের শিলাখণ্ডের থেকে অনেক বেশি। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, আফার অঞ্চলের নীচে যে ম্যান্টেল স্তর রয়েছে, তার মধ্যে অভিন্নতা নেই। এক এক জায়গায় সেই ম্যান্টেল স্তর এক এক রকম। তার লাভারও প্রভেদ রয়েছে। এক এক জায়গার লাভার রাসায়নিক গঠন এক এক রকম। সাদাম্পটনের এক কলেজের অধ্যাপক তথা প্রবন্ধের অন্যতম লেখক টম গার্নন জানিয়েছেন, ম্যান্টেল স্তরে যে লাভা রয়েছে, তা হৃৎস্পন্দনের মতোই নড়েচড়ে। তা ধাক্কা দেয় উপরের শিলাস্তরে। আর তার জেরেই ভূপৃষ্ঠে ফাটল দেখা দেয়, যেখান থেকে গলিত লাভা উদ্গত হয়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই প্রক্রিয়া আসলে নতুন সমুদ্রখাতের জন্ম দেয়।

কী ভাবে খণ্ডিত হবে আফ্রিকা?

ভূগর্ভ থেকে ক্রমাগত লাভা বেরিয়ে আসার কারণে সোমালি পাত থেকে ধীরে ধীরে আলাদা হয়ে যাবে নুবিয়ান পাত। তার মাঝে তৈরি হবে গভীর উপত্যকা। লক্ষ লক্ষ বছর ধরে লোহিত সাগর এবং এডেন উপসাগরের জল ওই গভীর উপত্যকায় গিয়ে জমা হতে থাকবে। তার ফলে তৈরি হবে নতুন এক মহাসাগর। আফ্রিকার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে তার শিং। মনে করা হয়, এ ভাবেই ইউরোপ থেকে উত্তর আমেরিকাকে বিচ্ছিন্ন করেছিল আটলান্টিক মহাসাগর। লক্ষ লক্ষ বছর ধরে আফ্রিকাকে খণ্ডিত করে তার মাঝে যে মহাসাগর তৈরি হবে, তার তীরে থাকবে উগান্ডা, রাওয়ান্ডা, ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গো। এখন আফ্রিকার এই দেশগুলি সমুদ্র থেকে অনেক দূরে রয়েছে। লক্ষ লক্ষ বছর পরে এই তিনটি দেশের অবস্থান হবে সমুদ্রের উপকূলে।

এই গবেষণা কেন গুরুত্বপূর্ণ?

লাভা যখন টেকটনিক পাতে ধাক্কা খায়, তখন ঠিক কী হয়? ভূপৃষ্ঠে তার কী প্রভাব পড়ে? এ সব নিজেদের গবেষণায় স্পষ্ট ভাবে তুলে ধরেছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁরা মনে করছেন, কোটি কোটি বছর আগে এ ভাবেই দক্ষিণ আমেরিকা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল আফ্রিকা। তার মাঝে উদ্ভব হয়েছিল আটলান্টিক মহাসাগরের। তবে বিজ্ঞানীরা আরও একটি বিষয়ে সতর্ক করেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, ভুগর্ভ থেকে লাভা উদ্গিরণের সঙ্গে সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে কার্বন-ডাই-অক্সাইড এবং সালফার ডাই-অক্সাইডের জন্ম হবে। তার প্রভাব পড়বে পৃথিবীর জলবায়ুতে। বহু প্রজাতি পৃথিবীর বুক থেকে চিরতরে হারিয়ে যেতে পারে।

তবে এই পরিবর্তন এক-আধ বছরে হবে না। সময় লাগবে কয়েক কোটি বছর। পাতের নীচে কী ভাবে লাভার স্রোত বয়ে যায়, তা নিয়ে ভবিষ্যতে আরও গবেষণা হবে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। আর তা থেকেই জানা যেতে পারে, ঠিক কোথায় হতে পারে ভূমিকম্প। সেই মতো সতর্কতা অবলম্বন করতে পারবে সেই এলাকার প্রশাসন। মোট কথা ‘ভূতাত্ত্বিক হৃৎস্পন্দন’-ই ভেঙে দিতে পারে আস্ত একটা মহাদেশ। জন্ম দিতে পারে নতুন মহাসাগরের।

Ocean Africa
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy