Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
NASA

ঝাঁক বেঁধে উড়বে মহাকাশযান, সত্যি হবে 'স্টার ওয়ার্স'-এর দুনিয়া? উৎক্ষেপণ শনিবার

নিজেদের মধ্যে ‘কথা বলাবলি’ করবে। লেসার রশ্মি পাঠিয়ে। বেতার তরঙ্গের মাধ্যমে।

অন্য কিউবস্যাটকে বার্তা পাঠাচ্ছে একটি কিউবস্যাট। লেসার রশ্মির মাধ্যমে। ছবি- নাসার সৌজন্যে।

অন্য কিউবস্যাটকে বার্তা পাঠাচ্ছে একটি কিউবস্যাট। লেসার রশ্মির মাধ্যমে। ছবি- নাসার সৌজন্যে।

সুজয় চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০২১ ১২:৩৪
Share: Save:

আর কারও ‘দাদাগিরি’ মেনে নেবে না মহাকাশযান। গ্রাউন্ড কন্ট্রোলের প্রতি মুহূর্তের ‘কম্যান্ড’-এর পরোয়াই করবে না আর মহাকাশে। আর পরের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে না মহাকাশযানগুলিকে। তারা আক্ষরিক অর্থেই, হয়ে উঠবে আত্মনির্ভর। স্বাধীনচেতা!

নিজেদের মধ্যে ‘কথা বলাবলি’ করবে নিজেদের ইচ্ছেমতো। লেসার রশ্মি পাঠিয়ে। বেতার তরঙ্গের মাধ্যমে। মহাকাশে ছুটবে ঝাঁক বেঁধে (‘সোয়ার্ম’)। একে অন্যের সমস্যায় এগিয়ে আসবে। আবার যান্ত্রিক কারণে সেই মহাকাশযানগুলির ঝাঁকে যদি কোনও কোনওটি একটু বিগড়েও যায়, তা হলে তার জন্য ‘সব কাজ পণ্ড হল’ বলে আর হা-হুতাশ করতে হবে না।

ঝাঁকের যে মহাকাশযানের যন্ত্র বিগড়েছে, পারলে বাকিরা কমান্ড বা সিগন্যাল পাঠিয়ে তা সারানোর চেষ্টা করবে। না পারলে তাকে বাদ দিয়েই ঝাঁকের বাকি মহাকাশযানগুলি সেই কাজ সেরে দেবে। পৃথিবীর কোনও মহাকাশ স্টেশনের ‘দাদা’ গ্রাউন্ড কন্ট্রোলকে আর নাক গলাতে দেবে না।

আগামী দিনে যাতে এই ভাবেই ঝাঁকে ঝাঁকে মহাকাশযান নিজেদের মধ্যে কথা বলাবলি করে ছুটতে পারে মহাকাশে, সেই লক্ষ্যে ভারতীয় সময় শনিবার মধ্যরাতের পর পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ করবে নাসা। ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরালে আমেরিকার এয়ারফোর্স স্টেশন থেকে। স্পেস-এক্সের ফ্যালকন-৯ রকেটের পিঠে চেপে।

নাসার এই অভিযানের নাম- ‘ট্রান্সপোর্টার-১’। তার আরও একটি নাম রয়েছে। ‘পাথফাইন্ডার টেকনোলজি ডেমনস্ট্রেটর' (পিটিডি) মিশন।

শনিবার জেপিএল-এর একটি সূত্র জানিয়েছে, এই পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণে মহাকাশে পাঠানো হবে যে মহাকাশযানগুলিকে, সেগুলি আকারে বড়জোর একটা জুতোর বাক্সের মতো। মহাকাশ প্রযুক্তির পরিভাষায় যাদের বলা হয়, ‘কিউবস্যাট’। প্রাথমিক ভাবে, কিউবস্যাটগুলিকে পাঠানো হবে ভূপৃষ্ঠ থেকে খুব বেশি হলে ৪০০ কিলোমিটার উচ্চতার কক্ষপথে। যাকে মহাকাশবিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয়, ‘লো-আর্থ অরবিট’। পরে ধাপে ধাপে এগুলি পরীক্ষামূলক ভাবে পাঠানো হবে ভূপৃষ্ঠ থেকে আরও বেশি উচ্চতায়। পৃথিবীর আরও আরও দূরের কক্ষপথগুলিতে।

কফির মগের আকারের এমন কিউবস্যাটই শনিবার মহাকাশে পাঠানো হচ্ছে। ছবি সৌজন্যে- নাসা।

কফির মগের আকারের এমন কিউবস্যাটই শনিবার মহাকাশে পাঠানো হচ্ছে। ছবি সৌজন্যে- নাসা।

জেপিএল-এর সিনিয়র সায়েন্টিস্ট, নাসার আসন্ন ‘ইউরোপা (বৃহস্পতির একটি চাঁদ) মিশন’-এর অন্যতম প্রধান সদস্য গৌতম চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ভারতীয় সময় শনিবার মধ্যরাতের পর পরীক্ষামূলক ভাবে যে উৎক্ষেপণ করবে নাসা, তাতে থাকবে মোট ৩টি কিউবস্যাট। এই পর্বের অভিযানের নাম- ‘ভিআর-থ্রিএক্স’। এই পর্বে যে কিউবস্যাটগুলিকে পাঠানো হচ্ছে পৃথিবীর খুব কাছের কক্ষপথে, তাদের আকার কফি খাওয়ার একটি মগের মতো। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন রয়েছে ভূপৃষ্ঠ থেকে ৩৭০ কিলোমিটার উচ্চতার কক্ষপথে। তার থেকেও নীচের কক্ষপথে পাঠানো হচ্ছে এই ৩টি কিউবস্যাটকে।

জেপিএল সূত্রে খবর, এই অভিযানে ৩টি কিউবস্যাট মহাকাশে ছোটার সময় একে অন্যের চেয়ে ঠিক কতটা দূরত্ব বজায় রাখতে পারছে, ছোটার পথে খুব কাছাকাছি এসে পড়ছে কি না, তার উপর নজর রাখবে। গ্রাউন্ড কন্ট্রোলের ‘দাদাগিরি’ ছাড়াই মহাকাশে তারা একে অন্যকে সঠিক ভাবে বার্তা পাঠাতে পারছে কি না, পারলে কতটা পরিমাণে, তা পরখ করে দেখবে লেসার রশ্মি আর রেডিও তরঙ্গ পাঠিয়ে। মেপে দেখবে বিকিরণের মাত্রাও।

গৌতম বলছেন, ‘‘এই অভিযান ৩ মাসের। তবে আমরা যে বিষয়গুলি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে চাইছি, সেগুলি দু’সপ্তাহের মধ্যেই বুঝতে পারব বলে আশা করা হচ্ছে।’’

জেপিএল-এর অন্য একটি সূত্র জানাচ্ছে, এই ভিআর-থ্রিএক্স অভিযানের শেষ পর্যায়ে, ফেব্রুয়ারিতে, থাকবে আরও একটি চমক। একটি বেলুনে চাপিয়ে কফির মগের আকারের একটি কিউবস্যাটকে ভূপৃষ্ঠ থেকে পাঠানো হবে ১ লক্ষ ফুটেরও বেশি উচ্চতায়, পৃথিবীর কোনও একটি কাছের কক্ষপথে (মাথায় রাখতে হবে, কোনও আন্তর্জাতিক উড়ানকে সাধারণত, ৩০ থেকে ৩৫ হাজার ফুটের বেশি উচ্চতায় উড়তে দেওয়া হয় না)। সেই সময় পৃথিবীর ৪টি জায়গায় থাকবে ৪টি কিউবস্যাট। তারা মহাকাশে পাঠানো কিউবস্যাটের সঙ্গে কথা চালাচালি করবে গ্রাউন্ড স্টেশনের ‘খবরদারি’ ছাড়াই।

এমন প্রকল্প কেন?

গৌতম জানাচ্ছেন, বড় মহাকাশযান পাঠানোর বিপুল খরচের বোঝা অনেক সময়ই অভিযানকে বিলম্বিত করে। তা ছাড়া বড় মহাকাশযান মহাকাশে অনেক ছোট ছোট লক্ষ্যবস্তুর উপর নজরদারি চালাতে পারে না নিখুঁত ভাবে। তাই বড় মহাকাশযানের পরিবর্তে এখন বহু ছোট ছোট মহাকাশযান পাঠাতে শুরু করেছে নাসা এবং ‘ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি' (ইএসএ বা এসা)-র মতো বিভিন্ন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা। এই ছোট ছোট মহাকাশযানগুলিই কিউবস্যাট। বড় মহাকাশযান এ বার ছোটার পথে এমন অজস্র কিউবস্যাটকে ছেড়ে দিয়ে যাবে মহাকাশে। আগামী দিনে মঙ্গল গ্রহ থেকে পৃথিবীতে নিখুঁত ভাবে প্রচুর পরিমাণে বার্তা পাঠাতে হলে অনেক বড় আকারের অ্যান্টেনা বসানো দরকার মহাকাশে। যা আদৌ সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে এই কিউবস্যাটগুলিই নিজেদের মধ্যে গড়ে তোলা যোগাযোগের মাধ্যমে সেই কাজটা করে দিতে পারবে।

মহাকাশে এই কিউবস্যাটের ঝাঁকের উড়ান মনে করিয়ে দিতেই পারে 'স্টার ওয়ার্স' বা 'ফ্ল্যাশ গর্ডন'-এর মতো কল্পবিজ্ঞান ছবিতে দেখা দৃশ্যকে। তা হলে কি সত্যি হতে চলেছে সাহিত্যিক আইজাক অ্যাসিমভের মহাকাশ ফ্যান্টাসি 'ফাউন্ডেশন'-এর জগৎ? রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করছে পৃথিবী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

NASA NASA Space Mission Spacecraft
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE