রাগ হলে তা উগরে দিলেই স্বস্তি! প্রচলিত ধারণা এমনই বলে। উদাহরণ হিসাবে প্রেশার কুকারের কথা বলা হয়। তা থেকে ধোঁয়া বেরিয়ে এলেই তার চাপ কমে। যেমন রাগ প্রকাশ করলেই তা প্রশমিত হয় বলে মনে করেন বহু মানুষ। যদিও বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই প্রচলিত ধারণা ঠিক নয়। আমেরিকার ওহায়ো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা রাগ নিয়ে ১৫৪টি গবেষণাপত্র খতিয়ে দেখেছেন। তাঁদের দাবি, কিছু ক্ষেত্রে রাগ প্রকাশ করলে তা আরও বেড়ে যেতে পারে।
২০২৪ সালে ওহায়ো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাটি প্রকাশিত হয়। সেখানে গবেষক ব্র্যাড বুশম্যান বলেন, ‘‘রাগ প্রকাশ করলেই তা প্রশমিত হবে, মন শান্ত হবে— এই ধারণা ভাঙা দরকার। রাগ প্রকাশ করার বিষয়টি আপাত ভাবে ভাল মনে হলেও তার বৈজ্ঞানিক কোনও ভিত্তি নেই।’’ বিজ্ঞানীরা বলছেন, তা বলে রাগকে উপেক্ষা করাও ঠিক নয়। রাগের প্রতিফলন বরং তার কারণ তুলে ধরতে পারে। নিজের আবেগকেও যাচাই করা যায়।
গবেষণা বলছে, অনেক মানুষই রাগ প্রশমিত করতে শরীর চর্চা শুরু করে দেন। যেমন ব্যায়াম করেন বা দৌড়োতে যান। গবেষণা বলছে, তাতে শরীর ভাল থাকলেও রাগ কিন্তু প্রশমিত হয় না। সে তার জায়গাতেই রয়ে যায়।
আরও পড়ুন:
১০ হাজার ১৮৯ জনকে নিয়ে গবেষণাগুলি করা হয়েছিল। যাঁদের উপরে গবেষণা করা হয়েছে, তাঁদের বয়স, লিঙ্গ, সংস্কৃতি, জাতি ভিন্ন। বিজ্ঞানীদের দাবি, শারীরিক উত্তেজনা প্রশমিত করলে তা রাগও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। বুশম্যান বলেন, ‘‘রাগ কমানোর সবচেয়ে ভাল উপায় হল এমন কিছু কাজকর্ম করা, যা শারীরিক উত্তেজনা কমায়।’’ সে কারণেই রাগের সময় দু’পাক দৌড়ে এলে তা প্রশমিত হয় না। কারণ, দৌড়োনোর ফলে শারীরিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়।
বেশ কিছু দেশের কিছু জায়গায় রয়েছে ‘রেজ রুম’। রাগ হলে সেখানে গিয়ে জিনিসপত্র ভাঙাভাঙি করেন লোকজন। বিনিময়ে মেটাতে হয় টাকা। গবেষণার সময়ে সেই ‘রেজ রুম’-এও উঁকি দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। সেখানে গিয়ে খোঁজখবর নিয়েছেন। বিজ্ঞানী সোফি কেজায়েরভিকের মতে, গবেষণা করে দেখা গিয়েছে, রাগ প্রশমনের ক্ষেত্রে শারীরিক উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণ করা খুব দরকার। বিজ্ঞানীদের একাংশ এ-ও মনে করেন, রাগের আসলে দু’টি অংশ। এক, শারীরবৃত্তীয়, দুই, জ্ঞান বা বোধ বিষয়ক। এর আগে বিজ্ঞানীরা রাগের এই জ্ঞান বা বোধ বিষয়ক অংশ নিয়েই গবেষণা করেছেন। সেই মতো মানুষজনকে রাগ প্রশমনের পরামর্শ দিতেন চিকিৎসকেরা।
তা হলে কী ভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে রাগ? বিজ্ঞানীরা বলছেন, তার জন্য শারীরিক উত্তেজনা প্রশমন করে এমন কাজকর্ম করতে হবে। তাঁরা বলছেন, হালকা যোগ বা পেশিকে শিথিল করে, এমন কিছু করতে হবে। জোরে জোরে গোল গোল করে শ্বাস নেওয়া এবং ছাড়াও অভ্যাস করা যেতে পারে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, যোগ করে শারীরিক উত্তেজনা বৃদ্ধির সম্ভাবনা যে নেই, তা নয়। তবে তাতে রাগও প্রশমিত করা সম্ভব। বিজ্ঞানী সোফি বলছেন, যে উপায়ে চাপ নিয়ন্ত্রণ করা যায়, সেই পদ্ধতিতে রাগ প্রশমনও সম্ভব। বুশম্যান বলছেন, শারীরিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়, এমন কাজকর্মে হৃদ্যন্ত্র ভাল থাকতে পারে। তবে রাগ কমবে না। বিজ্ঞানীদের মতে, রাগ প্রশমনের সবচেয়ে ভাল উপায় হতে পারে, রাগের সময়ে এক থেকে ১০ পর্যন্ত গোনা।