E-Paper

শুভাংশুর অভিজ্ঞতা এগিয়ে দেবে গগনযানকে

২০২৫ সালে দাঁড়িয়ে তরুণ বয়সের কথা বলে ফেলা অনাবশ্যক স্মৃতিচারণ মনে হতেই পারে। কিন্তু বোঝাতে চাইলাম, কোনও দেশ থেকে প্রথম কারও মহাকাশে যাওয়ার প্রভাব কী হতে পারে। ৪১ বছর পেরিয়ে শুভাংশু ফের মহাকাশে পাড়ি দিলেন।

তপন মিশ্র (প্রাক্তন অধিকর্তা, স্পেস অ্যাপ্লিকেশন সেন্টার, ইসরো)

শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০২৫ ০৮:৩৭
দ্বিতীয় ভারতীয় হিসেবে মহাকাশ ছোঁয়ার আগে কেনেডি স্পেস সেন্টারে শুভাংশু।

দ্বিতীয় ভারতীয় হিসেবে মহাকাশ ছোঁয়ার আগে কেনেডি স্পেস সেন্টারে শুভাংশু। ছবি: পিটিআই।

শুভাংশু শুক্ল তখন পাড়ি দিচ্ছেন মহাশূন্যের দিকে। মনে পড়ে যাচ্ছিল ৪১ বছর আগের কথা। এ ভাবেই তৎকালীন সোভিয়েটের বৈকানুর মহাকাশ কেন্দ্র থেকে মহাকাশে পাড়ি দিয়েছিলেন রাকেশ শর্মা। তাঁর সেই যাত্রা দেশের যুবসমাজে অসম্ভব প্রভাব ফেলেছিল। আমার মতো সদ্য ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ যুবকেরা আমেরিকার হাতছানি সরিয়ে ঢুকেছিলাম ইসরোর চাকরিতে।

২০২৫ সালে দাঁড়িয়ে তরুণ বয়সের কথা বলে ফেলা অনাবশ্যক স্মৃতিচারণ মনে হতেই পারে। কিন্তু বোঝাতে চাইলাম, কোনও দেশ থেকে প্রথম কারও মহাকাশে যাওয়ার প্রভাব কী হতে পারে। ৪১ বছর পেরিয়ে শুভাংশু ফের মহাকাশে পাড়ি দিলেন। হলফ করে বলতে পারি, তাঁর এই যাত্রা দেশের নবীন প্রজন্মকে মহাকাশ অভিযান, প্রযুক্তির দিকে টানবেই। রাকেশ শর্মার অভিযান আমাদের বুঝিয়ে ছিল, আমরাও মহাশূন্যে পা ফেলতে পারি। তার পরে অনেক বছর কেটে গিয়েছে। শুভাংশুর যাত্রা বুঝিয়ে দিল, দেরি হয়েছে ঠিকই। কিন্তু লক্ষ্যচ্যুত হইনি আমরা।

নতুন প্রজন্মের উৎসাহের মধ্যেই অবশ্য শুভাংশুর যাত্রা থেমে থাকবে না। ইসরোর ‘গগনযান’ (মহাকাশে মানুষ পাঠানোর প্রকল্প এবং শুভাংশু যে দলের অন্যতম সদস্য) প্রকল্পেও অ্যাক্সিয়োম-৪ অভিযান সাহায্য করবে। মহাকাশ অভিযান এমন এক ক্ষেত্র যেখানে বিভিন্ন দেশ সহযোগিতা করে ঠিকই কিন্তু প্রতিযোগিতাও সমান তালে থাকে। সেই প্রতিযোগিতার কারণে কোনও দেশ বা সংস্থাই নিজের অর্জিত জ্ঞান পুরোপুরি অন্যকে দেয় না। সেই জ্ঞান একমাত্র মিলতে পারে অভিযানের অভিজ্ঞতা থেকে। শুভাংশু যে অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরবেন তা থেকেই ইসরো সমৃদ্ধ হবে।

বিষয়টি আরও একটু বুঝিয়ে বলি। ‘গগনযান’ মহাকাশযান, তার ভিতরের বসার ব্যবস্থা, কন্ট্রোল প্যানেল তৈরি করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ইসরোর বিজ্ঞানীরা পৃথিবীতে বসে নিজেদের জ্ঞান, বুদ্ধি প্রয়োগ করেছেন। সে ক্ষেত্রে হয়তো ৯৯.৯ শতাংশই ঠিক করা হয়েছে। কিন্তু বাকি যে ০.১ শতাংশ, তা-ও ঠিক হওয়া প্রয়োজন। ওই সামান্য ত্রুটিতেই মহাকাশ অভিযানে বিপদ ঘটতে পারে। বহু ক্ষেত্রে একাধিক বার ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে ত্রুটি শুধরোনো হয়। কিন্তু মহাকাশচারীদের ক্ষেত্রে ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়ার অর্থ প্রাণের বিনিময়ে শিক্ষা। শুভাংশু যে জ্ঞান নিয়ে ফিরবেন তা দিয়ে ওই ০.১ শতাংশ ত্রুটিও শুধরে নেওয়া সম্ভব। কোনও বিপদ না ঘটিয়েই। মহাকাশ থেকে পৃথিবীতে ফেরার সময় কী ভাবে মহাকাশযান নিয়ন্ত্রণ করতে হয়, কী ভাবে নিরাপদে অবতরণ করতে হয়, সে সবও হাতেকলমে শিখতে পারবেন শুভাংশু। ‘গগনযান’-এর আগে এই অভিজ্ঞতার দাম অপরিসীম।

শুভাংশুর এই যাত্রা, তারপরে গগনযান—ভারতের মহাকাশ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে। বর্তমানে মহাকাশ প্রযুক্তি শিল্পের বাজারদর হয় তো টাকার অঙ্কে পেট্রোকেমিক্যালস বা অন্যান্য ভারী শিল্পের মতো নয়। কিন্তু আগামী দিনে এই প্রযুক্তির সম্ভাবনা বিরাট। অন্যান্য বিভিন্ন প্রযুক্তি ক্ষেত্রের উপরেও মহাকাশ প্রযুক্তির প্রভাব রয়েছে। কোনও দেশ যদি বর্তমানে মহাকাশ প্রযুক্তিতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে, তা হলে অন্যান্য শিল্প ক্ষেত্র-সহ সামগ্রিক অর্থনীতিকে তা শক্তি জোগায়।

কাজেই শুভাংশুর যাত্রা শুধু জাতির পক্ষে গর্বের বিষয় নয়, দেশের অর্থনীতি এবং ভবিষ্যতের জন্য আশার আলো।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Shubhanshu Shukla ISRO

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy