Advertisement
E-Paper

সবচেয়ে বড় জলের ট্যাঙ্ক মহাকাশে!

হদিশ মিলল এই ব্রহ্মাণ্ডের সবচেয়ে বড় জলের ট্যাঙ্কের! যেখান থেকে জল নিয়ে আসতে পারা গেলে আর কোনও দিনই জলকষ্টে ভুগতে হবে না মানবসভ্যতাকে। এই বাসযোগ্য গ্রহে জলাভাব হবে না কোনও দিন। সেই জলের ট্যাঙ্কে কতটা জল রয়েছে, জানেন? আটলান্টিক আর প্রশান্ত মহাসাগর-সহ এই পৃথিবীতে যত নদী, সমুদ্র আর মহাসাগর রয়েছে, সেই সবকটিকেই অন্তত এক লক্ষ ৪০ হাজার বার পুরোপুরি ভরে ফেলতে পারা যাবে ব্রহ্মাণ্ডের ওই সবচেয়ে বড় ট্যাঙ্কের জলে।

সুজয় চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৫ ১১:০৯

হদিশ মিলল এই ব্রহ্মাণ্ডের সবচেয়ে বড় জলের ট্যাঙ্কের!

যেখান থেকে জল নিয়ে আসতে পারা গেলে আর কোনও দিনই জলকষ্টে ভুগতে হবে না মানবসভ্যতাকে। এই বাসযোগ্য গ্রহে জলাভাব হবে না কোনও দিন।

সেই জলের ট্যাঙ্কে কতটা জল রয়েছে, জানেন?

আটলান্টিক আর প্রশান্ত মহাসাগর-সহ এই পৃথিবীতে যত নদী, সমুদ্র আর মহাসাগর রয়েছে, সেই সবকটিকেই অন্তত এক লক্ষ ৪০ হাজার বার পুরোপুরি ভরে ফেলতে পারা যাবে ব্রহ্মাণ্ডের ওই সবচেয়ে বড় ট্যাঙ্কের জলে।

আর এটাই ব্রহ্মাণ্ডের সবচেয়ে পুরনো জলের ট্যাঙ্ক। যার বয়স ১৩০০ কোটি বছর। এর মানে, ‘বিগ ব্যাং’ বা মহা-বিস্ফোরণের পর একশো কোটি বছরের মধ্যেই গড়ে উঠেছিল ওই জলের ট্যাঙ্ক। যা বয়সে পৃথিবীর চেয়ে ছয় বা সাড়ে ছয় গুণ বুড়ো! কিন্তু বুড়ো হাড়েই সে ভেল্কি দেখাতে পারে। এই ব্রহ্মাণ্ডকে জলে ভাসিয়ে দিতে পারে ওই ‘বুড়ো’ই! যাকে নাসা বলছে, ‘Largest and the oldest water-reservoir in the Universe’।

সবচেয়ে বড় এই প্রাচীনতম জলের ট্যাঙ্কের হদিশ মেলার খবরটি প্রকাশিত হয়েছে বিজ্ঞান-জার্নাল ‘নেচার-অ্যাস্ট্রোনমি’র সাম্প্রতিক সংখ্যায়। চার বছর আগে প্রথম এই বিশালতম ও প্রাচীনতম জলের ট্যাঙ্কটি নজরে পড়েছিল মহাকাশে হাব্‌ল স্পেস টেলিস্কোপ ও পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের ৩৭০ কিলোমিটার ওপরে থাকা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের। তথ্যাদি বিশ্লেষণের পর নাসার ‘সার্টিফিকেট’ মিলেছে হালে। এ বছরের মাঝামাঝি।

পাসাডেনায় নাসার জেট প্রোপালসান ল্যাবরেটরির তরফে মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিল্লোল গুপ্ত জানাচ্ছেন, ‘‘ছবি ও সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি খতিয়ে দেখে আমরা এক রকম নিশ্চিত হয়েছি, পৃথিবী থেকে ১২০০ কোটি আলোক-বর্ষ দূরে (এক আলোক-বর্ষ বলতে বোঝায়, সেকেন্ডে এক লক্ষ ৮৬ হাজার মাইল গতিবেগে ছুটলে এক পার্থিব বছরে আলো যতটা দূরে যাবে, ততটা দূরত্ব) থাকা এই জলের ট্যাঙ্কই ব্রহ্মাণ্ডের সবচেয়ে বড় ও সবচেয়ে প্রাচীন জলের সঞ্চয়। যা জলে ভরা জলীয় বাস্পের মেঘ হয়ে জমাট বেঁধে রয়েছে।’’

সেই জলে ভরা মেঘ মহাকাশে উড়ে বা ভেসে যাচ্ছে না কেন?

হিল্লোলবাবু জানাচ্ছেন, ‘‘আমাদের থেকে ১২০০ কোটি আলোক-বর্ষ দূরে ওই জলে ভরা ভারী ও বিশাল মেঘটি মহাকাশে কার্যত একই জায়গায় যেন দাঁড়িয়ে রয়েছে-‘APM(08279+5255)’ নামে একটি ‘কোয়াসার’-এর চার পাশে। ‘কোয়াসার’ আদতে একটি ব্ল্যাক হোলই। তার অত্যন্ত জোরালো অভিকর্য বলই জলীয় বাষ্প ভরা অত্যন্ত ঘন, ভারী ওই মেঘকে মহাকাশে উড়ে যেতে দেয় না। ১৩০০ কোটি বছর ধরে ভারী ওই মেঘকে ‘কোয়াসার’ তার চার পাশে ঠায় দাঁড় করিয়ে রেখেছে।’’

কতটা ভারী সেই মেঘ?

দু’টি হিসেব দিলে তা বুঝতে সুবিধা হবে। এক, এই সৌরমণ্ডলে সূর্যের যা ভর, তার চেয়ে দু’হাজার কোটি গুণ ভারী ওই জল-ভরা মেঘ। আর দুই, আমাদের গ্রহের চেয়ে ভারী প্রায় ১৫ হাজার কোটি গুণ।

জলের তো কোনও অভাব নেই আমাদের মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সিতে। তা হলে আমাদের গ্যালাক্সির জলের সঙ্গে সদ্য আবিস্কৃত জলের ট্যাঙ্কের ফারাকটা কোথায়?

হিল্লোলবাবুর ব্যাখ্যা, ‘‘আমাদের গ্যালাক্সিতে যে পরিমাণ জল রয়েছে, তার বেশির ভাগটাই রয়েছে জমাট বাঁধা বরফের অবস্থায়। আর আদতে ব্ল্যাক হোল ‘কোয়াসার’ APM-এর চার পাশে যে জলের ট্যাঙ্কের হদিশ মিলেছে হালে, তাতে আমাদের গ্যালাক্সির চেয়ে চার হাজার গুণ বেশি জলীয় বাষ্প রয়েছে। শুধু তাই নয়, মিল্কি ওয়েতে থাকা জলীয় বাষ্প যতটা গরম, তার চেয়ে অন্তত দশ গুণ বেশি তেতে রয়েছে ‘কোয়াসার’ APM-এর চার পাশে থাকা জলীয় বাষ্প ভরা ঘন মেঘ। যে মেঘের ঘনত্বও মিল্কি ওয়ের চেয়ে অন্তত একশো গুণ বেশি। আরও একটি অভিনবত্ব রয়েছে ব্রহ্মাণ্ডের এই প্রাচীনতম জলের ট্যাঙ্কের। আশপাশের তাপমাত্রা কম হলে জলীয় বাষ্প-কণার গায়ে সাধারণত জড়িয়ে লেপ্টে থাকে মহাজাগতিক ধূলি-কণা (কসমিক ডাস্ট)। মহাকাশের হিম শীতল ঠাণ্ডায় ওই মহাজাগতিক ধূলি-কণার ওপর জলীয় বাষ্প একটি বরফের চাদর বিছিয়ে দেয়। সেই বরফের চাদর অবধারিত ভাবেই, জলীয় বাষ্পের পরিমাণ অনেকটা কমিয়ে দেয়। যেমনটা হয়েছে আমাদের মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সিতে। কিন্তু ‘কোয়াসার’ APM-এর চার পাশে জমাট বাঁধা জলীয় বাষ্প ভরা ঘন মেঘ অনেক অনেক বেশি গরম। তা প্রচণ্ড তেতে রয়েছে বলে তার গায়ে লেপ্টে থাকা মহাজাগতিক ধূলি-কণায় বরফ জমতে দেয় না। সামান্য বরফ জমলেই তা তেতে থাকা জলীয় বাষ্পের তাপে ফের বাষ্পীভূত হয়ে ফের জলীয় বাষ্প হয়ে যায়। তাই ওই জলের ট্যাঙ্কে জলের প্রাচুর্য সংশয়াতীত।’’

পাসাডেনায় নাসার জেট প্রোপালসান ল্যাবরেটরির মিডিয়া সেলের মুখপাত্র মিশেল হুইট্‌নি ই মেলে পাঠানো প্রশ্নের জবাবে জানিয়েছেন, ‘‘ওই ‘কোয়াসার’টি ১৯৯৮ সালে আবিষ্কৃত হলেও খুব সম্প্রতি হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের ক্যালটেক অবজারভেটরি ওই ‘কোয়াসার’ থেকে আসা বিকিরণের বর্ণালী বিশ্লেষণ করতে গিয়ে এই বৃহত্তম ও প্রাচীনতম জলের ট্যাঙ্কটির হাল-হদিশ জানতে পেরেছে।’’

MostReadStories
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy