ক্লাস করান না নিয়মিত, কথা বলেন জাতপাত নিয়ে, ছাত্রীর প্রশ্নের উত্তরে এ বার ভারতীয় সংবিধান ছিঁড়ে জলে ভাসিয়ে দিতে বললেন শিক্ষক! যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে উঠল এমনই অভিযোগ। ইতিমধ্যেই উপাচার্য, সহ-উপাচার্য এবং বিভাগীয় প্রধানের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন ওই ছাত্রী। সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে পদক্ষেপের বার্তা দিয়েছেন যাদবপুরের উপাচার্য চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য।
জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের তৃতীয় সেমেস্টারের এক ছাত্রী ভারতীয় সংবিধান সংক্রান্ত পাঠ্যক্রমের কিছু প্রশ্ন নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক অরূপ ভট্টাচার্যকে ফোন করেছিলেন। তারই উত্তরে শিক্ষক দাবি করেন, ভারতীয় সংবিধান বিষয়ে পড়ার কিছু নেই। অভিযোগকারিণী ছাত্রী বলেন, “স্যার ফোনে বলেন, ভারতীয় সংবিধান টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে জলে ভাসিয়ে দাও। কে এই বাবাসাহেব অম্বেডকর? আজকের দিনে এই সংবিধানের কোনও মূল্য নেই। তোমরা আন্তর্জাতিক বিভাগের পড়ুয়া, অম্বেডকরের প্রস্তাবনা পড়ে কী করবে!”
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, প্রায় ৬ বছর আগে অরূপ যাদবপুরে যোগ দিয়েছেন। এর আগে পড়াতেন ক্ষুদিরাম বোস সেন্ট্রাল কলেজে। এর আগেও তাঁর বিরুদ্ধে ক্লাস না করানোর অভিযোগ উঠেছে।
আরও পড়ুন:
অভিযোগকারিণী ছাত্রীর দাবি, “কোনও দিনই ক্লাস ঠিক মতো করান না। এ বছর সমস্ত সংবিধানটি আমাদের নিজেদের মতো করে পড়ে নিতে বলেছেন। সে জন্যই কিছু প্রশ্ন করেছিলাম। তখনই ভারতীয় সংবিধান সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য করেন।”
অভিযুক্ত শিক্ষক ক্লাসে এসে জাতপাত নিয়ে নানা মন্তব্য করতেন বলেও অভিযোগ। এ বিষয়ে মুখ খুলেছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের আর এক ছাত্র অর্পণ ঘোষও। তিনি বলেন, “পাঠ্যক্রম সংক্রান্ত পড়াশোনা স্যর কোনও দিনই করাননি। বেশিরভাগ সময়ই অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে কথা বলে সময় কাটিয়ে দিতেন। এমনকি পাঠ্যক্রম বদলেও দিয়েছেন প্রথম বর্ষে।” অর্পণের দাবি, প্রথম বর্ষে ‘ইন্ডিয়ান পলিটিকাল থট’ বলে যে মডিউল ছিল, তা না পড়িয়ে ওই শিক্ষক পড়াতেন ‘ইন্ডিয়ান নলেজ সিস্টেম’। অভিযোগ, সেখানেই ব্রাহ্মণ্যবাদ এবং জাতপাত সংক্রান্ত নানা মন্তব্য করেছেন।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক শুভজিৎ নস্কর বলেন, “ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ক্লাস না নেওয়ার অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। দেশের সংবিধান রক্ষায় ব্রতী হওয়ার কথা যাঁদের, তাঁরাই যদি এমন মন্তব্য করেন, তা হলে মানসিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে হয়। অবিলম্বে ওই শিক্ষকের প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া উচিত।”
প্রাথমিক ভাবে অভিযুক্ত শিক্ষকের তরফে কোনও বক্তব্য জানা যায়নি। বার বার যোগাযোগ করার চেষ্টা হলেও তাঁর ফোন বন্ধ ছিল। দুপুরের পর অবশ্য ফোনে পাওয়া যায় অরূপকে। সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, “অভিভাবকসুলভ শিক্ষকেরা আতশকাচের তলায় থাকেন বরাবরই। আসলে আমি এ ধরনের মন্তব্য করতেই চাইনি। একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। সে জন্য ক্ষমা চাইছি। এর পর বিশ্ববিদ্যালয় তার মতো করে তদন্ত করবে।”
এ প্রসঙ্গে উপাচার্য চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য বলেন, “অভিযোগ পেয়েছি। তবে এই মুহূর্তে বাইরে রয়েছি। সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।” বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে জানা গিয়েছে, আগামী সপ্তাহে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেখানেই এ বিষয়ে আলোচনা হবে।