এমআরএনএ টিকায় সারানো যাবে ত্বকের ক্যানসারও? -ফাইল ছবি।
সেই দিন হয়তো আর খুব দূরে নয় যখন ফাইজার, মডার্নার কোভিড টিকার মতোই এমআরএনএ টিকা দেওয়া হবে ত্বকের ক্যানসারের চিকিৎসাতেও।
সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় সেই ইঙ্গিতই মিলল।
গবেষণাটি দেখাল, এমআরএনএ টিকা দিয়ে শরীরকে শেখানো যায় কী ভাবে আরও বেশি পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট প্রোটিন তৈরি করতে হবে। যাতে সেই প্রোটিন সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে মানবত্বককে বাঁচাতে আরও শক্তিশালী ভূমিকা নিতে পারে।
আমেরিকা ও জাপানের গবেষকদের গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘জার্নাল অব ইনভেস্টিগেটিভ ডার্মাটোলজি’-তে।
সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি মানবত্বকের পক্ষে খুব ক্ষতিকারক। এই রশ্মি মানবদেহের ডিএনএ-গুলির ক্ষতি করে। তার জেরেই হয় ত্বকের ক্যানসার। যার হাত থেকে বাঁচাতে মানবদেহের ডিএনএ-গুলিকে একটি বর্মে মুড়ে রাখার প্রয়োজন। সেই বর্ম তৈরি করে দিতে পারে মানবশরীরে থাকা বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট প্রোটিন।
কোভিড টিকা দিয়ে দেহের স্বাভাবিক প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে চেনানো হয় শত্রু করোনাভাইরাসকে। তার বিরুদ্ধে শরীরের স্বাভাবিক প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলা হয়।
গবেষকরা জানিয়েছেন, ত্বকের ক্যানসার রুখতে এমআরএনএ টিকা দেহের স্বাভাবিক প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শেখাবে কী ভাবে দেহের বিভিন্ন অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট প্রোটিন আরও বেশি পরিমাণে তৈরি করা যায়। যাতে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির হানাদারি থেকে বাঁচাতে ডিএনএ-র বর্ম গড়ে তোলার কাজে সেই প্রোটিন আরও বেশি শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি ত্বকের নীচে এক ধরনের রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটায়। যার নাম— জারণ প্রক্রিয়া বা ‘অক্সিডেশন’। এই প্রক্রিয়ায় ত্বকের নীচে থাকা বিভিন্ন যৌগ ও মৌলের অণু, পরমাণু থেকে ইলেকট্রন বেরিয়ে আসে। এতে মানবদেহের ডিএনএ-র খুব ক্ষতি হয়। ক্যানসারে সহায়ক মিউটেশন শুরু হয় বিভিন্ন কোষ ও কলার। তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটে ত্বকের ক্যানসার রূপে। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট প্রোটিন বা উৎসেচকগুলি এই জারণ প্রক্রিয়া বন্ধ করে বা তার গতি কমিয়ে দেয়। তাতেই ত্বকের ক্যানসারের আশঙ্কা কমে।
গবেষকরা কোনও ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালাননি। পরীক্ষা চালিয়েছেন ইঁদুরের উপর। তাঁরা ইঁদুরের শরীরে যে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট উৎসেচকটির হদিশ পেয়েছেন তার নাম— ‘থায়োরেডক্সিন রিডাক্টেজ-১’। এই উৎসেচকটি ইঁদুরের দেহে এক ধরনের অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট প্রোটিনকে সক্রিয় করে তোলে, যার নাম— ‘থায়োরেডক্সিন’। এই প্রোটিনই আদত কাজটি করে। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি এসে পড়ার পর জারণ ক্রিয়ায় ত্বকের নীচের যৌগ বা মৌলগুলির অনু, পরমাণু থেকে ছিটকে বেরিয়ে পড়া ইলেকট্রনগুলিকে বেঁধে ফেলে। যাতে তা ডিএনএ-র ক্ষতি না করতে পারে।
গবেষকদের বানানো এমআরএনএ টিকা ইঁদুরের শরীরে এই প্রোটিনকে আরও বেশি পরিমাণে বাড়াতে পেরেছে। ফলে, ত্বকের ক্যানসারের হাত থেকে বাঁচানো সম্ভব হয়েছে ইঁদুরগুলিকে।
বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানিয়েছেন, এই গবেষণাটি যথেষ্টই উল্লেখযোগ্য। কারণ, গত চার দশক ধরেই এই চেষ্টা চলছে। তবে পরীক্ষায় এর আগে তা সফল হয়নি। যদিও এই উৎসেচকটিকে কোনও কোনও ক্ষেত্রে বিশেষ কয়েকটি ক্যানসার কোষের ছড়িয়ে পড়ার ক্ষেত্রেও সহায়কের ভূমিকা নিতে দেখা গিয়েছে এর আগে। তবে সেই ভূমিকা কোনও ভাবে যদি নিয়ন্ত্রণ করা যায় তা হলে মানুষের ত্বকের ক্যানসার সারাতেও কাজে লাগতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy