Advertisement
E-Paper

মেয়ে জন্মাবে? না ছেলে? ৫০-৫০ সম্ভাবনার তত্ত্ব খারিজ করল সমীক্ষাভিত্তিক নতুন গবেষণা

কিছু ব্যক্তির কেবলমাত্র একই লিঙ্গের সন্তান জন্ম দেওয়ার প্রবণতা রয়েছে। এঁরা যত বারই সন্তানধারণ করুন না কেন, দেখা যাবে প্রতি বার একই লিঙ্গের সন্তানের জন্ম দিয়েছেন তাঁরা। গত ১৮ জুলাই ‘সায়েন্স অ্যাডভান্সেস’ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে এমনটাই দাবি করা হয়েছে।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০২৫ ০৯:১২

— প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।

সন্তান মেয়ে হবে? না ছেলে? অঙ্কের নিয়মে সে সম্ভাবনা ৫০-৫০ শতাংশ হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু এ বার সেই তত্ত্ব উড়িয়ে দিল সমীক্ষাভিত্তিক নতুন গবেষণা। জানা গেল, কিছু কিছু দম্পতির নাকি কেবলমাত্র একটি লিঙ্গের সন্তানধারণেরই প্রবণতা থাকে! বয়সের সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে সেই প্রবণতাও।

কিছু ব্যক্তির ক্ষেত্রে বার বার একই লিঙ্গের সন্তান জন্ম দেওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। এঁরা যত বারই সন্তানধারণ করুন না কেন, দেখা যাবে প্রতি বার একই লিঙ্গের সন্তানের জন্ম দিয়েছেন তাঁরা। গত ১৮ জুলাই ‘সায়েন্স অ্যাডভান্সেস’ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে এমনটাই দাবি করা হয়েছে। সমীক্ষাভিত্তিক ওই গবেষণায় আরও দেখা গিয়েছে, যে সব দম্পতির ক্ষেত্রে বার বার একই লিঙ্গের সন্তান জন্ম দেওয়ার প্রবণতা দেখা যায়, তাঁরা সকলেই তুলনামূলক ভাবে বেশি বয়সে প্রথম সন্তান নিয়েছেন। ফলে বেশি বয়সে সন্তানধারণের সিদ্ধান্ত নিলেও বার বার একই লিঙ্গের সন্তান জন্মানোর সম্ভাবনা বাড়তে পারে বলে জানাচ্ছে নতুন গবেষণা।

সাধারণ হিসাব অনুযায়ী, সন্তান ছেলে বা মেয়ে হওয়ার সম্ভাবনা ৫০-৫০ হওয়ার কথা। কারণ, প্রাথমিক ভাবে, সমান সংখ্যক শুক্রাণু কোষ এক্স এবং ওয়াই যৌন ক্রোমোজোম বহন করে। আর এই এক্স বা ওয়াই ক্রোমোজোমই নির্ধারণ করে, সন্তানের লিঙ্গ কী হবে। কিন্তু তা হলে যে সব দম্পতির বার বার পুত্র কিংবা কন্যা জন্মায়, তাঁদের ক্ষেত্রে সম্ভাবনা তত্ত্বের এই সাধারণ নিয়ম খাটে না কেন? এই প্রশ্নই ভাবিয়ে তুলেছিল বস্টনে হার্ভার্ড টিএইচ চ্যান স্কুল অফ পাবলিক হেল্‌থের প্রজনন বিশেষজ্ঞ জর্জ চাভারোকে। সেই থেকে একই লিঙ্গের একাধিক সন্তান জন্মানোর পৃথক পৃথক উদাহরণ নিয়ে মাথা ঘামাতে শুরু করেন চাভারো ও তাঁর সহকর্মীরা।

গবেষণার প্রথম ধাপ হিসাবে প্রথমে শুরু হয় সমীক্ষা। ১৯৫৬ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ৫৮,০০০ জনেরও বেশি মানুষের গর্ভধারণ এবং সন্তানের লিঙ্গ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করা হয়। দেখা যায়, এদের মধ্যে প্রায় এক তৃতীয়াংশ পরিবারের ক্ষেত্রে সন্তানেরা একই লিঙ্গের! এর মধ্যে কোনও কোনও পরিবারে আবার তিন, চার এমনকি পাঁচটি সন্তানও রয়েছে, যাদের সকলের লিঙ্গ একই। এই দম্পতিরা সকলেই একের পর এক সন্তানধারণ করে গিয়েছেন, সম্ভাবনা তত্ত্বের নিয়মে অন্তত একটি অপত্যের লিঙ্গ ভিন্ন হবে, এই আশায়! কিন্তু সে গুড়ে বালি। বরং প্রতি বারই দেখা গিয়েছে, জন্ম নিয়েছে একই লিঙ্গের সন্তান।

চাভারোর কথায়, ‘‘সন্তানের লিঙ্গ কী হবে, সেই সম্ভাবনা প্রতিটি দম্পতির ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা হতে পারে। প্রত্যেক দম্পতির কোনও একটি নির্দিষ্ট লিঙ্গের সন্তান ধারণের ‘বিশেষ সম্ভাবনা’ থাকে। তবে পরিবারভেদে এই সম্ভাবনাও ভিন্ন হয়। সে কারণেই, সমগ্র জনসংখ্যার নিরিখে দেখলে ছেলে বা মেয়ে জন্মানোর সম্ভাবনা আপাত দৃষ্টিতে ৫০-৫০ শতাংশ বলে মনে হয়।’’ চাভারো জানাচ্ছেন, যে পরিবারগুলিতে একই লিঙ্গের সন্তান জন্ম দেওয়ার প্রবণতা রয়েছে, তাঁরা কেউ কেউ তত ক্ষণ পর্যন্ত সন্তানধারণের চেষ্টা করে যান যত ক্ষণ না অন্য লিঙ্গের সন্তান জন্মাচ্ছে। আবার যে সব পরিবারে প্রথম দুই সন্তানের মধ্যে একজন পুত্র এবং একজন কন্যা হয়, তাঁরা অনেক ক্ষেত্রেই তৃতীয় সন্তান নেওয়ার কথা ভাবেন না। সমীক্ষায় এ ধরণের উদাহরণগুলিও খতিয়ে দেখা হয়েছে। চাভারো বলছেন, ‘‘তাতেও দেখা গিয়েছে, বিভিন্ন পরিবারে বেশি সংখ্যায় একই লিঙ্গের সন্তান জন্মানোর প্রবণতা দেখা গিয়েছে। বিশেষত সেই সব দম্পতির ক্ষেত্রে এটা দেখা গিয়েছে যাঁরা বেশি বয়সে প্রথম সন্তানের জন্ম দিয়েছেন।’’

নতুন গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, মায়ের বয়স বেশি হলে একই লিঙ্গের সন্তান জন্মানোর সম্ভাবনাও বেড়ে যেতে পারে। কেন? তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন চাভারো। তিনি বলছেন, প্রজননক্ষম বছরগুলিতে বয়সের সঙ্গে সঙ্গে স্ত্রীযৌনাঙ্গের পিএইচের পরিবর্তন হয়। যৌনাঙ্গের অভ্যন্তরের পরিবেশ বেশি অ্যাসিডিক হয়ে ওঠে, যা এক্স ক্রোমোজোম বহনকারী শুক্রাণুর পক্ষে অনুকূল। কারণ, এক্স ক্রোমোজোম বহনকারী শুক্রাণু ওয়াই ক্রোমোজোম বহনকারী শুক্রাণুর চেয়ে আকারে কিছুটা বড়। এতে অ্যাসিডিক পরিবেশে টিকে থাকার জন্য ‘বাফার জাতীয়’ রাসায়নিকও থাকে। সে কারণে সেই ধরনের শুক্রাণুর সঙ্গেই ডিম্বাণুর মিলন হবে। ফলে সে ক্ষেত্রে বেশির ভাগ সন্তানই হবে কন্যা। আবার, ঋতুচক্রের যে পর্যায়ে ডিম্বাশয় থেকে একটি ডিম্বাণু নিঃসৃত হয়, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই পর্যায়ের দৈঘ্য ক্রমশ ছোট হতে থাকে। ফলে সার্ভিকাল মিউকাস, ওভিডাক্ট তরল সব মিলিয়ে এমন পরিবেশ তৈরি হতে পারে যা ওয়াই ক্রোমোজোম বহনকারী শুক্রাণুর বেঁচে থাকার পক্ষে অনুকূল। সে ক্ষেত্রে বেশির ভাগ অপত্য হবে পুত্র।

অর্থাৎ, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কোন জৈবিক কারণগুলি সেই ব্যক্তির উপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলবে, তার উপর নির্ভর করে সন্তানের লিঙ্গ কী হবে। আবার, যে সব দম্পতির বার বার একই লিঙ্গের সন্তান জন্মেছে, তাঁদের জিনগত তথ্য বিশ্লেষণ করে দু’টি বিশেষ জিন খুঁজে পেয়েছেন চাভারো ও তাঁর সহকর্মীরা। যদিও সন্তানের লিঙ্গনির্ধারণে ওই জিনগুলির ভূমিকা কী তা এখনও স্পষ্ট নয়। এ বিষয়ে আরও গবেষণা চলছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।

তবে নতুন এই গবেষণা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে বিজ্ঞানীমহলে। ইতালির বোলোগনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক নিকোলা বারবানের কথায়, ‘‘চাভারোর আবিষ্কার ভবিষ্যতে এই সংক্রান্ত গবেষণাকে গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করবে। তবে এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত গবেষণার প্রয়োজন।’’ আবার, এই ফলাফলে সন্তুষ্ট নন অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিসিস্ট ব্রেন্ডন জিট্শ। তিনি বলছেন, ‘‘১৯৩১ সালের পরে জন্মানো গোটা সুইডিশ জনসংখ্যার উপর ভিত্তি করে একটি বৃহত্তর সমীক্ষায় আমরা আগেই দেখিয়েছি যে, শুধু ছেলে বা মেয়ে জন্মানোর ঘটনা কোনও বিশেষ নিয়ম মেনে হয় না।’’ জিট্শ আরও জানিয়েছেন, অপত্যের লিঙ্গ কী হবে, তার সঙ্গে এত সহজে জিনগত যোগসূত্রের সম্বন্ধ টানা সম্ভব নয়। এ জন্য পৃথক এক নমুনার উপর গবেষণা করে দেখতে হবে। চাভারোর সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীরা বেশির ভাগই ছিলেন মার্কিন এবং শ্বেতাঙ্গ। ফলে অন্য জনসংখ্যার উপর সমীক্ষা না করে এ বিষয়ে এত দ্রুত সিদ্ধান্তে পৌঁছোনো যাবে না। তা ছাড়া, সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পিতার বয়স ছিল মায়ের বয়সের কাছাকাছি। ফলে অপত্যের লিঙ্গ কী হবে তা পিতার বয়সের উপর কতটা নির্ভর করে, তা-ও দেখার।

sex child chromosome
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy