মহাকাশে একটা দেশলাই কাঠি জ্বাললে কী হয়? অনেকের মনেই হয়তো এই নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়। অনেকে হয়তো উত্তরটাও জানেন। এ বার চিনের দুই মহাকাশচারী হাতেকলমে দেখালেন, কী হয়। আর তাতেই স্পষ্ট হয়ে গেল পদার্থবিদ্যার বিভিন্ন সূত্র, যা ছোটবেলায় পাঠ্যবইয়ে কমবেশি অনেকেই পড়েছেন।
মহাকাশে চিনের তিয়ানগং স্টেশনে এই পরীক্ষা করেন মহাকাশচারী গুই হাইচাও এবং ঝু ইয়াংঝু। দেশলাই দিয়ে একটি মোমবাতি জ্বালান দুই মহাকাশচারী। দেখা যায়, মোমবাতির শিখা তিরতির করে কেঁপে ওঠার বদলে অনেকটাই স্থির। তার আকারও অশ্রুবিন্দুর মতো নয়। বরং মহাকাশে মোমবাতির শিখা গোলাকার। এর চেয়ে একটা বিষয় স্পষ্ট, তাপ এবং বায়ুর উপরে মাধ্যকর্ষণের প্রভাব ঠিক কতটা। চিনের মহাকাশকেন্দ্রে দুই মহাকাশচারীর এই গবেষণার ভিডিয়ো সে দেশের সব স্কুলের উঁচু ক্লাসে দেখানো হয়েছে। পড়ুয়াদের বোঝানো হয়েছে পদার্থবিদ্যার বিভিন্ন সূত্র।
কেন শিখার আকৃতি ভিন্ন?
পৃথিবীতে মোমবাতি জ্বাললে তার শিখা দীর্ঘ হয়। তিরতির করে কাঁপে, যা আপাত ভাবে দেখে অনেক বেশি প্রাণবন্ত মনে হয়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, পৃথিবীতে যখন মোমবাতি জ্বালানো হয়, তখন তার শিখা নীচ থেকে তুলনামূলক ঠান্ডা অক্সিজেন টেনে নিয়েই ঊর্ধ্বমুখী হয়। সে কারণে এর আকৃতি হয় অশ্রুবিন্দুর মতো। শিখার মধ্যভাগের রং থাকে নীলচে। তার চারপাশে উজ্জ্বল হলুদ রঙের বহিঃস্তর থাকে।
চিনা মহাকাশচারীর হাতে জ্বলন্ত দেশলাই কাঠি এমনই দেখতে ছিল। ছবি: ভিডিয়ো থেকে নেওয়া।
মহাকাশে মোমবাতির শিখার আকার-প্রকার হয় ভিন্ন। স্থির হয়ে থাকে সেই শিখা। তার আকৃতি গোল। রঙের কোনও স্তরও থাকে না। সেই শিখা এতটাই স্থির, যে দেখে মনে হয় প্রাণহীন। এই পার্থক্য গড়ে দিয়েছে অক্সিজেন। পৃথিবীতে অক্সিজেন থাকার কারণেই মোমবাতির শিখা দীর্ঘ হয়। এবং তা নড়েচড়ে।
মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রে এই মোমবাতি জ্বালানোর ভিডিয়ো ইতিমধ্যে সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এই গবেষণার বৈজ্ঞানিক গুরুত্বও যথেষ্ট। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, মাধ্যাকর্ষণ না থাকলে আলোর শিখা কী রকম আচরণ করে, তার একটা স্পষ্ট ধারণা মিলেছে। তা কী ভাবে নিবে যায়, তা নিয়েও একটা ধারণা তৈরি হয়েছে বিজ্ঞানীদের। তাঁরা দেখেছেন, তাপ, আগুন, ধোঁয়া— সবই মহাকাশে ভিন্ন আচরণ করে।
বিজ্ঞানীরা আরও জানিয়েছেন, বস্তুকণার সঞ্চরণের ফলে যে তাপ তৈরি হয় (পরিচলন), মহাকাশে তার অনুপস্থিতির কারণে দাহ্য বস্তু সহজে ছড়িয়ে পড়ে না, নিবেও যায় না। এর ফলে আলোকশিখার তাপ এবং রাসায়নিক গঠনও প্রভাবিত হয়। বিজ্ঞানীরা এই গবেষণাকে কাজে লাগিয়ে আরও উন্নত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা তৈরির চেষ্টা করছেন।
তবে আগুন নিয়ে এই পরীক্ষা একমাত্র চিনের মহাকাশ গবেষণাকেন্দ্র তিয়ানগঙেই করা সম্ভব। কারণ, আইএসএস (আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র)-এ আগুন জ্বালানো নিষিদ্ধ। ১৯৯৭ সালে রাশিয়ার এমআইআর কেন্দ্রে আগুন লেগেছিল। তার পরেই আইএসএস-এও আগুন জ্বালানো নিষিদ্ধ হয়ে যায়। সেখানে আগুন নিয়ে কোনও গবেষণা করতে হলে তা বদ্ধ, ঘেরা জায়গায় জ্বালানো হয়। তার পরে বিধি মেনে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা প্রয়োগ করা হয়।