তাপ আর তাপমাত্রার ফারাক কোথায়?
কোনও কণা বা কণিকা কত জোরে (গতিবেগ) ছুটছে, তার ওপর নির্ভর করে তার তাপমাত্রার বাড়া, কমা। তাপমাত্রা আসলে ওই গতিশীল কণা বা কণিকাদের গতিবেগের পরিমাপক। আর তার ফলে মোট যে পরিমাণ শক্তির আদানপ্রদান ঘটে এক জায়গা থেকে অন্যত্র, তার মান ধরা পড়ে তাপে।
আরও পড়ুন- এ বার সূর্যকেও ছুঁতে যাচ্ছি আমরা, নাসার অভিযান পিছল রবিবার পর্যন্ত
আরও পড়ুন- আজকের সূর্য অভিযান ঋণী হয়ে থাকবে ভারতীয় বিজ্ঞানীর জেদের কাছে
কণা বা কণিকারা খুব জোরে ছুটলে তাপমাত্রা বেশি হবে। কিন্তু সেই কণিকারা যদি সংখ্যায় অল্প হয়, তা হলে তাদের ছোটাছুটির ফলে মোট শক্তির পরিমাণও কমে যাবে। ফলে, তাপ কম হবে সে ক্ষেত্রে। মহাকাশে কণা বা কণিকার সংখ্যা যেহেতু অল্পই, তাই তারা এসে ধাক্কা মারলে মহাকাশযানের গায়ের তাপ খুব বেশি বাড়িয়ে দিতে পারে না।
মোহনপুরের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (আইসার-কলকাতা)-এর অধ্যাপক দেশের বিশিষ্ট সৌরপদার্থবিজ্ঞানী দিব্যেন্দু নন্দী বলছেন, পার্কার সোলার প্রোব সূর্যের বায়ুমণ্ডলের যে স্তরে ঢুকবে, তার তাপমাত্রা ১০ লক্ষ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তারও বেশি। তবে করোনার সব জায়গার তাপমাত্রা একই রকমের নয়। তা কোথাও কম, কোথাও বেশি। একটা গরম আভেন আর ফুটন্ত জলের মধ্যে হাত ডোবালে আমাদের কী অনুভূতি হয়? আভেনের অনেক বেশি তাপমাত্রাতেও অনেক বেশি সময় ধরে হাত রেখে দিতে আমাদের ততটা অসুবিধা হয় না। কিন্তু তুলনায় কম তাপমাত্রার ফুটন্ত জলে বেশি সময় আমরা হাত ডুবিয়ে রাখতে পারি না। কারণ, জলে কণার সংখ্যা বেশি। তাদের ছোটাছুটির ফলে বেশি পরিমাণে শক্তি এক জায়গা থেকে অন্যত্র যাচ্ছে। একই ভাবে সূর্যের পিঠের চেয়ে করোনায় কণার সংখ্যা কম। ফলে, করোনায় ঢোকা পার্কার মহাকাশযানকে গরম কণাদের ঝাপটা তুলনায় কম সইতে হবে। নাসা জানাচ্ছে, ওই মহাকাশযানে যে ‘হিট শিল্ড’ রয়েছে, আর তার যে দিকটা সূর্যের দিকে আছে, তাকে খুব বেশি হলে ১ হাজার ৪০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা আড়াই হাজার ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রার ধকল সইতে হবে।
পৃথিবীতে অগ্ন্যুৎপাতে মোটামুটি ৭০০ থেকে ১ হাজার ২০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ১ হাজার ৩০০ ডিগ্রি থেকে ২ হাজার ২০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রার সৃষ্টি হয়।
‘হিট শিল্ড’টা কেমন পার্কার সোলার প্রোবের?
নাসা জানাচ্ছে, ওই হিট শিল্ড বা ‘থার্মাল প্রোটেকশন সিস্টেম’ (টিপিএস)-এর ব্যাস ৮ ফুট বা প্রায় আড়াই মিটার। আর তা সাড়ে ৪ ইঞ্চি পুরু। তার ফলে, ওই হিট শিল্ডের যে দিকটি রয়েছে পার্কার মহাকাশানের দিকে, সেখানে তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ৮৫ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি পৌঁছতে পারবে না। পার্কার মহাকাশযানের যে দিকটি থাকবে সূর্যমুখী হয়ে, হিট শিল্ড থাকবে ঠিক তার সামনে।
পার্কার সোলার প্রোবের ‘হিট শিল্ড’ কী জিনিস? ভিডিয়োয় দেখুন কী বলছে নাসা...