Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
plastics

Micro Plastics in Human Blood: এভারেস্টের চূড়া, মারিয়ানা ট্রেঞ্চের পর এ বার মাইক্রোপ্লাস্টিকের হদিশ মিলল মানবরক্তেও!

যা বাতাসে ভাসমান ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র দূষণ কণার চেয়েও বেশি বিপজ্জনক। তা শরীরে কোনও ভাবেই দ্রবীভূত হয়ে অন্য পদার্থে পরিণত হয় না বলে।

মানবরক্তেও ঢুকে পড়েছে বিপজ্জনক মাইক্রোপ্লাস্টিক! -ফাইল ছবি।

মানবরক্তেও ঢুকে পড়েছে বিপজ্জনক মাইক্রোপ্লাস্টিক! -ফাইল ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০২২ ১২:৪৭
Share: Save:

এদের দেখা মিলেছে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় নয় হাজার মিটার উপরে পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টে। এদের হদিশ মিলেছে পৃথিবীর গভীরতম প্রশান্ত মহাসাগরের সাত মাইল অতলে, মারিয়ানা ট্রেঞ্চেও।

এ বার এদের হদিশ মিলল মানবরক্তেও। এই প্রথম।

আকাশ থেকে পাতাল, এমনকি মানবরক্তেও যার হাজিরা মিলল সে আর কেউ নয়। মাইক্রোপ্লাস্টিক। শরীরের পক্ষে অত্যন্ত বিষাক্ত প্লাস্টিকের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণা। যা বাতাসে ভাসমান ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র দূষণ কণা (‘পার্টিকুলেট ম্যাটার’ অথবা ‘পিএম’)-র চেয়েও বেশি বিপজ্জনক। তা শরীরে কোনও ভাবেই দ্রবীভূত হয়ে বা ভেঙে গিয়ে অন্য পদার্থে পরিণত হয় না বলে (‘নন-ডিগ্রেডেব্‌ল’)। প্লাস্টিকের সেই সব ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণায় এমন বহু রাসায়নিক পদার্থ থাকে, যা একবার ঢুকলে মানবশরীরে থেকে যায় আমৃত্যু বা বেশ কয়েক দশক। পৌঁছয় বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে। সেই অঙ্গগুলির স্বাভাবিক বিপাকক্রিয়া ও কাজকর্মগুলিতে ব্যাঘাত ঘটায়। অঙ্গগুলিকে ধীরে ধীরে অচল করে দেয়। এমন মাইক্রোপ্লাস্টিককে বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয়— ‘পার অ্যান্ড পলিইথিলিন টেরেফথ্যালেট’ (পিইটি অথবা ‘পেট’)।

২০২১ সাল পর্যন্ত বিশ্বে ফি বছরে গড়ে ৩৮ কোটি টন প্লাস্টিক উৎপাদন হয়েছে। আর ২০ বছরের মধ্যে প্লাস্টিকের উৎপাদন দ্বিগুণ হতে চলেছে।

নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামে ভ্রিজে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা যাঁদের রক্তপরীক্ষা করেছেন, তাঁদের ৮০ শতাংশের রক্তেই পেয়েছেন অত্যন্ত বিপজ্জনক মাইক্রোপ্লাস্টিক। আর তাঁদের অর্ধেকের রক্তেই পাওয়া গিয়েছে আরও বিপজ্জনক মাইক্রোপ্লাস্টিক— ‘পেট’। আশঙ্কাজনক পরিমাণে। এমন মাইক্রোপ্লাস্টিকেরও হদিশ মিলেছে মানবরক্তে, যাদের ব্যাস ০.০০০৭ মিলিমিটার (এক মিলিমিটারের এক হাজার ভাগের সাত ভাগ মাত্র)।

গবেষণাগারে পরীক্ষা চালিয়ে দেখা গিয়েছে, মাইক্রোপ্লাস্টিকের কণাগুলি খুবই ক্ষতি করে মানব দেহকোষের।

গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক পরিবেশবিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘জার্নাল এনভায়রনমেন্ট ইন্টারন্যাশনাল’-এ। বৃহস্পতিবার।

এর আগের বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছিল, খাদ্য, জল বা প্রশ্বাসের সঙ্গে মাইক্রোপ্লাস্টিক মানবশরীরে ঢোকে। এমনকি তা শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের মলেও পাওয়া গিয়েছিল।

কিন্তু মাইক্রোপ্লাস্টিক যে মানবরক্তেও মিশে গিয়েছে আর সেই রক্তপ্রবাহের সঙ্গে তা শরীরের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ছে, বাসা বাঁধছে নানা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে তা এই প্রথম রক্তপরীক্ষায় প্রমাণিত হল।

গবেষণাপত্রটি জানিয়েছে, যাঁদের রক্তে মাইক্রোপ্লাস্টিকের হদিশ মিলেছে আশঙ্কাজনক পরিমাণে, তাঁদের অর্ধেকেরই রক্তে মিলেছে সবচেয়ে বিপজ্জনক মাইক্রোপ্লাস্টিক। পেট। যা পানীয়ের বোতল থেকে ঢোকে শরীরে। এক-তৃতীয়াংশের রক্তে মিলেছে ‘পলিস্টাইরিন’ জাতীয় মাইক্রোপ্লাস্টিক। যা খাদ্য ও নানা ধরনের পণ্যকে প্যাকেটজাত করতে ব্যবহৃত হয়। আর এক-চতুর্থাংশের রক্তে মিলেছে আর এক ধরনের বিষাক্ত মাইক্রোপ্লাস্টিক। যার নাম— ‘পলিইথিলিন’ বা ‘পলিথিন’। যা দিয়ে প্লাস্টিকের প্যাকেট বা ব্যাগ তৈরি করা হয়।

আমস্টারডামের ভ্রিজে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকো-টক্সিকোলজিস্ট অধ্যাপক ডিক ভেটহাক বলেছেন, ‘‘আমাদের গবেষণাই প্রথম দেখাল মানবরক্তেও বাসা বেঁধেছে মাইক্রোপ্লাস্টিক। এটি সত্যি সত্যিই নজরকাড়া ফলাফল। তবে কত রকমের পলিমার যৌগ মানবরক্তে মেশে প্রতি মুহূর্তে, তা জানতে আরও বড় আকারে গবেষণা চালানোর প্রয়োজন আরও অনেক বেশি সংখ্যক মানুযের রক্তপরীক্ষা করে। যা দেশে দেশে ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে।’’

এর আগের গবেষণা দেখিয়েছে, প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়ে ১০ গুণ বেশি মাইক্রোপ্লাস্টিক থাকে শিশুদের মলে। যে হেতু প্লাস্টিকের বোতলে দুধ খাওয়ার সময় শিশুরা প্লাস্টিক চিবিয়ে খেয়ে ফেলে। দিনে কয়েক কোটি প্লাস্টিকের কণা এই ভাবে শিশুদের পেটে চলে যায়।

গবেষকরা দেখেছেন, এই মাইক্রোপ্লাস্টিক মানবরক্তের লোহিত কণার বাইরের স্তরে নোঙর ফেলে। তাতে কোষগুলিতে অক্সিজেন সংবহনে ব্যাঘাত ঘটে। অন্তঃসত্ত্বাদের গর্ভে ভ্রূণকে ঘিরে থাকে যে প্লাসেন্টা, তার উপরেও নোঙর ফেলে মাইক্রোপ্লাস্টিক। পৌঁছয় ফুসফুসে। হৃদপিণ্ড, মস্তিষ্কে। জরায়ুতেও। এর থেকে নানা ধরনের ক্যানসার হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন গবেষকরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

plastics
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE