Advertisement
E-Paper

চিতাবাঘ ধরতে গিয়ে হার মানল হাতিরাও

‘ডায়না’ ও ‘আম্রপালি’র দিনভর পরিশ্রমেও কালজানি গ্রামের লোকালয়ে ঢুকে তাণ্ডব চালানো চিতাবাঘটিকে বাগে আনতে পারেনি বন দফতর। শনিবার কোচবিহারের কালজানি গ্রাম ও লাগোয়া এলাকা জুড়ে চিরুনি তল্লাশি চালায় জলদাপাড়া থেকে নিয়ে আসা বন দফতরের ওই দু’টি কুনকি হাতি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০১:৪৭
কুনকি হাতি চলেছে চিতাবাঘের খোঁজে। —নিজস্ব চিত্র।

কুনকি হাতি চলেছে চিতাবাঘের খোঁজে। —নিজস্ব চিত্র।

‘ডায়না’ ও ‘আম্রপালি’র দিনভর পরিশ্রমেও কালজানি গ্রামের লোকালয়ে ঢুকে তাণ্ডব চালানো চিতাবাঘটিকে বাগে আনতে পারেনি বন দফতর।

শনিবার কোচবিহারের কালজানি গ্রাম ও লাগোয়া এলাকা জুড়ে চিরুনি তল্লাশি চালায় জলদাপাড়া থেকে নিয়ে আসা বন দফতরের ওই দু’টি কুনকি হাতি। দু’টি হাতির পিঠে সওয়ার ছিলেন তিন জন করে মোট ছ’জন বনকর্মী। ঘুমপাড়ানি গুলি থেকে বন্দুক—প্রস্তুতি নিয়েই হাতি দু’টির পিঠে সওয়ার হয়ে চিতাবাঘের খোঁজে নামেন তাঁরা। সকাল থেকে এলাকার ধান খেত, বাঁশঝাড়, ঘরঘরিয়া নদীর পাড় থেকে গাছগাছালির জঙ্গল ঘেরা পরিবেশ চষে বেড়ান বনকর্মীরা। বিকেল নাগাদ দু’বার দরগা পাড়ার খেলার মাঠ লাগোয়া জঙ্গলে এক ঝলক দেখা গেলেও মুহূর্তের মধ্যে সেটি ফের গাছের আড়ালে মিলিয়ে যায়। সব মিলিয়ে তিন দিন বাদেও চিতাবাঘের আতঙ্ক গাঢ়ই রয়েছে।

রাজ্যের বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন বলেন, “চিতাবাঘটিকে লোকালয় থেকে জঙ্গলে ফেরানোর ব্যাপারে দফতরের কর্মীরা সব রকম চেষ্টা করছেন।” সেই সঙ্গে তাঁর সংযোজন, “চিতাবাঘটি দেখা গেলে কেউ সেটিকে অযথা বিরক্ত করবেন না। গ্রামবাসীরা বনকর্মীদেরও সাহায্য করুন।” কোচবিহারের ডিএফও ভাস্কর জেভি এ দিন সকালে বলেন, “আমরা সাধ্য মতো চেষ্টা চালাচ্ছি। জলদাপাড়া থেকে কুনকি হাতি ডায়না ও আম্রপালিকেও এলাকায় পাঠানো হয়েছে।”

বন দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার কালজানি গ্রামের দরগা পাড়া এলাকায় ঘরঘরিয়া নদীর জল দেখতে গিয়ে গ্রামের দুই বাসিন্দা ঝোঁপের আড়ালে লুকিয়ে থাকা চিতাবাঘটিকে প্রথম দেখতে পান। ঘটনা চাউর হতেই এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ওই দিনই চিতাবাঘটির হামলায় অন্তত ৬ জন জখম হন। তাঁদের মধ্যে ৪ জনকে কোচবিহার জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ওই দিন দিনভর চিতাবাঘটিকে কখনও এলাকার বাঁশঝাড়ে, কখনও গাছের মগডালে দেখা যায়। চিতাবাঘটিকে কাবু করতে বনকর্মীরা নাকানিচোবানি খান। শুক্রবারেও তিন গ্রামবাসী, দু’জন বনকর্মী-সহ ৫ জন জখম হন। ঘুমপাড়ানি গুলি ছুঁড়ে কাবু করার চেষ্টা হলেও তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। খাঁচা বসিয়েও লাভ হয়নি।

আতঙ্ক কাটাতে শনিবার কুনকি হাতির সাহায্য নিয়ে চিতাবাঘ ধরতে কোমর বেঁধে নামেন বনকর্মীরা। দিনের শেষে অবশ্য খালি হাতেই ফিরতে হয়েছে তাঁদের। এক বনকর্মীর কথায়, “আমাদের পরিশ্রম ছেড়ে দিন, বেচারা কুনকি দু’টি কম খাটল!”

বাসিন্দারা জানান, চিতাবাঘটি বহাল তবিয়তেই এলাকা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। শুক্রবার রাতে দরগা পাড়া এলাকায় লোকালয়ে সেটির পায়ের ছাপ দেখেছেন অনেকে। শনিবার দরগা পাড়ার খেলার মাঠ লাগোয়া এলাকাতেও ফের সেটিকে দেখা গিয়েছে। কিন্তু টানা তিন দিন চেষ্টা করেও বন দফতর সেটিকে খাঁচা বন্দি, ঘুম পাড়ানি গুলিতে কাবু কিংবা জাল বন্দি করে ধরার কোনও চেষ্টাতেই সফল হয়নি। এ নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে বাসিন্দাদের। তাঁদের কয়েক জন বলেন, ‘‘খোদ বনমন্ত্রীর জেলায় লোকালয়ে ঢুকে পড়া একটি চিতাবাঘকে বাগে আনতে এমন হালেই স্পষ্ট পরিকাঠামো ও প্রশিক্ষণের কি করুণ অবস্থা। এ নিয়ে ভাবনা চিন্তা শুরু করা দরকার।’’ স্থানীয় বাসিন্দা দীপক দাস বলেন, “চিতাবাঘটি ধরা না হলে আতঙ্ক কাটবে না।”

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy