Advertisement
E-Paper

সরকারি প্রচার সত্ত্বেও সীসাহীন রং ব্রাত্যই

ছবিটা পাল্টানো গেল না এ বছরেও। প্রতি বারের মতো এ বারও দূষণমুক্ত সিসাহীন রং ব্যবহার করার বিষয়ে শিল্পীদের সচেতন করেছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু কুমোরটুলির অধিকাংশ শিল্পীই জানাচ্ছেন, এ বারও তাঁরা অন্যান্য বছরের মতো সাধারণ রংই ব্যবহার করছেন। ফলে দূষণমুক্ত রং ব্যবহারের সচেতনতায় সরকারের এই শিবির কতটা কার্যকর হচ্ছে, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েই।

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:১৮

ছবিটা পাল্টানো গেল না এ বছরেও। প্রতি বারের মতো এ বারও দূষণমুক্ত সিসাহীন রং ব্যবহার করার বিষয়ে শিল্পীদের সচেতন করেছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু কুমোরটুলির অধিকাংশ শিল্পীই জানাচ্ছেন, এ বারও তাঁরা অন্যান্য বছরের মতো সাধারণ রংই ব্যবহার করছেন। ফলে দূষণমুক্ত রং ব্যবহারের সচেতনতায় সরকারের এই শিবির কতটা কার্যকর হচ্ছে, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েই।

আর দিন কয়েক বাদেই পুজো। ব্যস্ত কুমোরটুলিতে রঙের কাজ শেষ করার তাড়া। সেই ব্যস্ততার ফাঁকে শিল্পীদের বেশির ভাগই জানিয়ে দিলেন, সিসাহীন রং নয়, এ বারও কাজ চলছে সাধারণ রঙেই। সরকারের দেওয়া সিসাহীন রঙের নমুনা ব্যবহার করেছিলেন কোনও কোনও শিল্পী। তা ফুরোতেই ফের ফিরে গিয়েছেন সাধারণ রঙের ব্যবহারে।

সম্প্রতি সল্টলেকের পরিবেশ ভবনে প্রতিমাশিল্পীদের নিয়ে একটি সচেতনতা-শিবিরের আয়োজন করেছিল রাজ্য সরকার। কুমোরটুলির শিল্পী অপূর্ব পাল জানান, সেই শিবিরে যোগ দেন জনা পনেরো শিল্পী। তাঁদের প্রত্যেককে দেড় লিটারের দুই কৌটো সিসাহীন রং দেওয়া হয়। সেই রং কী ভাবে ব্যবহার করতে হবে, তা নিয়েও আলোচনা করা হয় শিবিরে।

অপূর্ববাবু বলেন, “প্রতি বছরই পুজোর কিছু দিন আগে সিসাহীন রং ব্যবহার নিয়ে এমন শিবির হয়। কিন্তু শেষ মুহূর্তে আর কতটা সচেতন হতে পারবেন শিল্পীরা? পুজোর অন্তত ছ’মাস আগে থেকে সিসাহীন রঙের প্রচার শুরু হলে ভাল হয়। তা হলে বেশি সংখ্যক শিল্পী ওই রঙের ব্যবহারে প্রস্তুতি নিতে পারবেন।” তিনি জানান, এ বারের শিবিরে কুমোরটুলির ৪৫ জনের মতো শিল্পী আমন্ত্রিত ছিলেন। কিন্তু কাজের চাপে ১৫ জনের বেশি সেখানে উপস্থিত হতে পারেননি।

কুমোরটুলির আর এক শিল্পী বাবু পাল এ বার ৪০টির মতো প্রতিমা গড়ছেন। সব ক’টিতেই সাধারণ রং। বাবু পাল বলেন, “সিসাহীন রং করতে হলে প্রতিমার দাম কমপক্ষে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা বেশি হয়ে যায়। অনেক ক্রেতাই তাতে রাজি হন না। এমনিতেই এখন প্রতিমার দাম বেড়ে গিয়েছে।” তাঁর মতে, সিসাহীন রঙের ব্যবহার বাড়াতে হলে বাজারে সাধারণ রং বিক্রি বন্ধ করে দিতে হবে। তা হলেই প্রতিমায় সিসাহীন রং ব্যবহার করতে বাধ্য হবেন শিল্পীরা।

অতিরিক্ত দামের কারণেই যে সিসাহীন রঙের ব্যবহার কম হচ্ছে, তা মানছেন অন্য শিল্পীরাও। শিল্পী মন্টু পাল বলেন, “সরকার যে দামের কথা বলেছিল, তার থেকে অনেক বেশি দাম এই রঙের। রঙের কোম্পানিগুলো দাম কমায়নি। তবু কয়েকটা প্রতিমায় সিসাহীন রং করেছি। ক্রেতাকে আগেই বলে নিয়েছি, এর ফলে প্রতিমার দাম বেশি হবে। ক্রেতা রাজি হওয়ার পরেই ওই রং ব্যবহার করেছি।” মন্টুবাবু জানান, কাজের চাপে সচেতনতা শিবিরে যেতে পারেননি তিনি। তাঁরও মতে, কোনও রকমে পুজোর কয়েকটা দিন আগে এই শিবির না করে অন্তত চার মাস আগে করা উচিত। তা হলে শিল্পীরা আগে থেকে পরিকল্পনা করে কাজ এগোতে পারবেন।

যদিও শিল্পীদের একাংশের মতে, সিসাহীন রঙে ঝঞ্ঝাট অনেক কম। তাঁরা জানাচ্ছেন, সাধারণ রঙের ক্ষেত্রে প্রতিমায় খড়িমাটি লাগানোর পরে যখন রং করা হয়, তখন রঙে অ্যারারুট মেশাতে হয়। তা না হলে প্রতিমার রং কালো হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এর পরে বার্নিশ করা হয়। সিসাহীন রঙে অ্যারারুট মেশানোর ঝামেলা থাকে না। ফলে সময়ও কিছুটা কম লাগে। তবে দাম বেশি ও যথাযথ সচেতনতার অভাবেই এই রং ঠিক মতো ব্যবহার করা যাচ্ছে না বলে জানালেন শিল্পীরা।

যদিও দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান বিনয়কান্তি দত্তের দাবি, “সিসাহীন রঙের দাম একটু বেশি হলেও পরিমাণে কম ব্যবহার করেই প্রতিমার অনেকটা অংশ রং হয়ে যায়। ফলে আখেরে শিল্পীদেরই লাভ হয়। এটা আমরা সচেতনতার শিবিরে আসা শিল্পীদের বুঝিয়েছি।”

বিনয়বাবুর দাবি, এ বার শুধু কলকাতায় নয়, রাজ্যের মোট পাঁচ জায়গায় সিসাহীন রং নিয়ে এমন শিবির করা হয়েছে। শিল্পীদের কাছ থেকে ভালই সাড়া মিলেছে। সারা রাজ্যে শিল্পীদের মধ্যে সিসাহীন রং ব্যবহারের প্রবণতা অনেকটাই বেড়েছে বলেও দাবি করেছেন তিনি।

pujo aryabhtta khan kumartuli color
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy