Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
International Women's Day

নারী দিবস ঘিরে বিতর্ক, দুই শিবিরে ভাগ সোশ্যাল মিডিয়া

নারী দিবস পালনের আর কোনও যথার্থ কারণ নেই। তাই #UncelebrateWomensDay স্লোগানে ভরে যাক সোশ্যাল মিডিয়া।

— প্রতীকী চিত্র।

— প্রতীকী চিত্র।

স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৮ ১৮:৫৮
Share: Save:

নারী দিবস ঘিরে বিতর্কে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড়। দুই শিবিরে ভাগ হয়ে গেল নারী।

এই বিভাজনের সূত্রপাত এক বিপণী সংস্থার ভিডিও। যেখানে শহুরে মেয়েদের সংলাপে কিছু প্রশ্ন রাখা হয়েছে। তাঁরাই জানিয়ে দিচ্ছেন, নারী দিবস পালনের আর কোনও যথার্থ কারণ নেই। তাই এ বার #UncelebrateWomensDay এই স্লোগানে ভরে যাক সোশ্যাল মিডিয়া।

ব্যস! এখানেই লেগেছে বিবাদ।

ফ্যাশন ডিজাইনার শুচিস্মিতা দাশগুপ্ত বললেন, ‘‘চমৎকার হয়েছে ভিডিওটা। কেনই বা আলাদা করে নারী দিবস পালন করতে হবে? মেয়েদের শ্রমের লড়াইয়ের ইতিহাস আছে। কিন্তু তা হলে তো সব লড়াইকেই এক একটা দিবস হিসেবে পালন করতে হয়। সতীদাহ প্রথা বন্ধের দিবস। বিধবাবিবাহ বন্ধের দিবস। হয় না তো! বরং এই ভিডিওতে খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন সহজ করে বলা হয়েছে। এই প্রশ্নগুলো ওঠা দরকার ছিল। পালন যদি করতেই হয় নারী-পুরুষ সমান অধিকার পালনের দিবস করা হোক।”

প্রতি বছর এই সময়ে নারী সংক্রান্ত শিক্ষা পাওয়া যায়। উঠে আসে নানা অভিমত। শুচিস্মিতার উল্টো পথে হাঁটলেন সেন্ট জেভিয়ার্সের অ্যাসিসট্যান্ট প্রফেসর সেঁজুতি দত্ত সোচ্চার হলেন ফেসবুকে। তাঁর মতে, ‘‘কাজের অধিকার, সমান মাইনের অধিকার এ সব ভুলে গিয়ে এই দিনটি গয়না কেনা, রেস্তোরাঁতে খাবার খাওয়া— এই সবে পরিণত হয়েছে। এ বার বলছেন সেটাও ভুলে যাও! ভুলব না। ভুলব না আমাদের ভোটের অধিকার ছিল না। ভুলব না আমাদের শিক্ষার অধিকার ছিল না। ভুলব না যে আমাদের সম্পত্তির অধিকার ছিল না। ভুলব না যে একই খাটুনি খেটে আমাদের সমান মাইনে পাওয়ার অধিকারটুকুও ছিল না। আর এও ভুলব না যে, আজ ২০১৮তে দাঁড়িয়ে এই সমস্ত কিছু এখনও প্রাসঙ্গিক এবং বাস্তব।…’’

কথায় কথা বাড়ে। এই ভিডিওতে বাড়ছে ‘ভিউ’, পরে কি হবে জানি না। এখনও পর্যন্ত দিন তিনেকে সাড়ে চার লাখের উপর পেজ ভিউ!

কলকাতার প্রথম মহিলা উব্‌র চালক সুচেতা সিংহ যেমন বললেন, “খুব পছন্দ হয়েছে আমার ভিডিওটা। সত্যি তো আমরা শুধু একটা দিন নারী দিবস পালন করে কি করব? এগুলো বাজারি দ্রব্য বিক্রি করার দিনের মতো হয়ে যাচ্ছে। আলাদা দিন মেয়েদের দরকার নেই।”

বেজায় চটেছেন ‘অঞ্জলি’-র প্রতিষ্ঠাতা রত্নাবলী রায়, “ভিডিও দেখে মনে হল, বহু বছরের মেয়েদের লড়াইয়ের ইতিহাসকে কেউ ধুয়ে মুছে সাফ করে মেয়েদের কেবল গয়না পরিয়ে রাখতে চাইছে। কী ভয়ংকর!” সাফ জবাব তাঁর।

একটু যদি পেছনে তাকাই দেখব, ১৮৫৭ সালের এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের একটি সেলাই কারখানায় নারী শ্রমিকরা ভোটাধিকার-সহ তাঁদের মর্যাদার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট দাবিতে আন্দোলন করে পুলিশি নির্যাতনের শিকার হন। ১৯১০ সালে এ দিনটিকে নারী দিবস হিসেবে পালনের প্রস্তাব করেছিলেন জার্মান নারী নেত্রী ক্লারা জেটকিন। ১৯১১ সালে প্রথম বেসরকারি ভাবে বিভিন্ন দেশে দিনটিকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করা হয়। এর দীর্ঘ ৭৩ বছর পর ১৯৮৪ সালে জাতিসংঘ ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে ঘোষণা করার পর থেকে দিনটিকে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলো সরকারি ভাবে নারী দিবস হিসেবে পালন করে আসছে।

আসলে ৮ মার্চ, এক লড়াইয়ের মনে রাখার দিন। আর অন্য লড়াই মনে রাখা হল না বলে এটাও হবে না, এ রকম ঝগড়ায় না গিয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শমিতা সেনের কথা বুঝে নিলে বিষয়টা আরও পরিষ্কার হবে। শমিতা সেন জানালেন, “শব্দ নির্বাচনে আমরা ভুল করছি, তাই বোধ হয় এত বিবাদ। আসলে বিষয়টা সেলিব্রেট করা বা না করার মধ্যে নেই। শ্রমের ইতিহাসকে আমাদের স্মরণ করা উচিত। উদযাপন করা উচিত। এই দিন কে আমরা ‘কোমেমরেট’ করতে পারি, ‘সেলিব্রেট’ নয়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE