Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Breast Cancer

স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি কোন বয়সে সবচেয়ে বেশি? জেনে নিন

পশ্চিমী দুনিয়ার সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে এ দেশের শহুরে মেয়েদের মধ্যে ব্রেস্ট ক্যানসারের প্রবণতা বাড়ছে হুহু করে। কিন্তু এখনও এ ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতনতা তৈরি হয়নি। লজ্জা ও কুন্ঠায় অসুখ লুকিয়ে রাখলে আখেরে ক্ষতি কিন্তু রোগীরই। ব্রেস্ট ক্যানসার সচেতনতা মাস শেষ হবে ৩১ অক্টোবর। এই রোগটি সম্পর্কে সচেতন হওয়ার ডাক দিলেন সরোজ গুপ্ত ক্যানসার সেন্টার অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অধিকর্তা ক্যানসার সার্জেন অর্ণব গুপ্ত।আচ্ছা আমি সেই ষোলো জন মহিলার একজন নই তো! মাঝে মাঝেই আশঙ্কা হয়। পরিসংখ্যান বলছে আমাদের দেশের প্রতি ১৬ জন মহিলার ১ জন স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত। আমেরিকায় এই হার অনেকটাই বেশি।

আচ্ছা আমি সেই ষোলো জন মহিলার একজন নই তো!

আচ্ছা আমি সেই ষোলো জন মহিলার একজন নই তো!

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০১৭ ১২:৩২
Share: Save:

আচ্ছা আমি সেই ষোলো জন মহিলার একজন নই তো! মাঝে মাঝেই আশঙ্কা হয়। পরিসংখ্যান বলছে আমাদের দেশের প্রতি ১৬ জন মহিলার ১ জন স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত। আমেরিকায় এই হার অনেকটাই বেশি। প্রতি ৯ জন মহিলার ১ জন স্তনের কর্কট রোগে আক্রান্ত, আর ব্রিটেনে ১০ জনের ১ জন। আরও নিখুঁত হিসেব দিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের হিসেবে প্রতি বছর প্রায় ১৪ লক্ষ (১.৩৮ মিলিয়ন) মহিলা নতুন করে ব্রেস্ট ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন এবং ৪,৫৮,০০০ জন মারা যাচ্ছেন। তাও মেয়েদের মধ্যে যথেষ্ট সচেতনতা তৈরি হয়নি। আর ঠিক এই কারণেই গত কয়েক বছর ধরে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই অক্টোবর মাস জুড়ে পালন করা হচ্ছে ব্রেস্ট ক্যানসার অ্যাওয়ারনেস মান্থ। তবে শুধু অক্টোবর মাসেই নয়, সচেতন থাকতে হবে বছরভর।

সভ্যতার শুরু থেকেই সঙ্গী

স্তন ক্যানসারের বাড়বাড়ন্তের জন্যে চিকিৎসকরা লাইফস্টাইলকে দোষারোপ করেন। ইদানীং বিভিন্ন অসুখের জন্য বদলে যাওয়া জীবনযাত্রা অনেকাংশে দায়ী। তবে স্তন ক্যানসার মানুষের সঙ্গ নিয়েছে সভ্যতার শুরু অথবা তারও আগে থেকে। প্রাচীন মিশরের ইতিহাসেও এই রোগের উল্লেখ পাওয়া গিয়েছে। এডুইন স্মিথের মালিকানায় থাকা প্যাপিরাসে সর্বমোট আট জন মহিলার স্তনে বিশেষ ধরনের অর্বুদের উল্লেখ পাওয়া গিয়েছে, যা অল্প বয়সী মেয়েদের মৃত্যুর কারণ। আসলে সেই অর্বুদই ছিল মারণ ক্যানসার। সেকালে রোগ নির্ণয় আর চিকিৎসা ব্যবস্থার অপ্রতুলতা সত্ত্বেও বিশেষজ্ঞরা অনুমান করেছিলেন যে স্তনের আঘাত আর সন্তানকে স্তন্যপান না করানো স্তনের অর্বুদের মূল কারণ। তবে অসুখ যে আগের তুলনায় বহু গুণ বেড়েছে এবং বাড়ছে সে কথা ভয়ানক সত্যি।

সচেতনতা বাড়াতেই হবে

একটা সময় ছিল যখন ব্রেস্ট ক্যানসার উন্নত দেশের মহিলাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু তৃতীয় বিশ্বের শহরের মানুষ যখন ইওরোপ আমেরিকার জীবনযাত্রাকে আপন করে নিল, তখন থেকেই এদেশের মেয়েদের মধ্যে স্তন ক্যানসারের প্রবণতা বাড়তে শুরু করল। কিন্তু সচেতনতা পাল্লা দিতে পারেনি ক্যানসারের সঙ্গে। আর এই কারণেই মল্লিকা সেনগুপ্তর মতো মানুষদেরও অকালে চলে যেতে হল। আসলে ব্রেস্ট ক্যানসার এমনই এক অসুখ যা ফার্স্ট স্টেজে ধরা পড়লে প্রায় ৯৯ শতাংশ ক্ষেত্রেই সম্পূর্ণ সারিয়ে তোলা যায়। স্টেজ -২ তে ধরা পড়লে ৬০% ও স্টেজ -৩ তে ৩০% রোগীকে সারিয়ে তোলা যায়। তাই শুরুতেই সতর্ক হতে হবে সবাইকে। ৪০ থেকে ৬০ বছর বয়সী মহিলাদের মধ্যে ব্রেস্ট ক্যানসারের ঝুঁকি বেশি। কোনও রকম সন্দেহ হলেই বিশেষজ্ঞ চিকিতসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার। ২০১৭-র ক্যানসার অ্যাওয়ারনেস মাসের শপথ, ২০৫০ সালে একজনও ব্রেস্ট ক্যানসার রোগীকে মরতে দেওয়া চলবে না। আর এই শপথ রক্ষায় সবচেয়ে আগে প্রয়োজন সচেতনতা। রোগের শুরুতেই সঠিক চিকিৎসার সাহায্য নিলে ক্যানসারকে জয় করা কঠিন নয়। তবে হ্যাঁ, যে সব কারণ ব্রেস্ট ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায় সেই কারণগুলিকে যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে।

সন্তানকে স্তন্যপান করালে ঝুঁকি কমে

ব্রেস্ট ক্যানসারের সুনির্দিষ্ট কারণ সম্পর্কে এখনও চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বিশ বাঁও জলে। বিএআরসি-১ ও বিএআরসি -২ এই দুটি জিন স্তন ও ডিম্বাশয় ক্যানসারের জন্যে দায়ী। বংশে থাকলে প্রায় ৫% ক্ষেত্রে এই রোগের সম্ভাবনা থাকে। এ ছাড়া বাড়তি ওজন, সেডেন্টারি লাইফ-স্টাইল, ধূমপান, মদ্যপান, অতিরিক্ত ভাজাভুজি ও ফাস্ট ফুড খাওয়া, বেশি বয়সে বিয়ে বা সন্তান না হওয়া, সন্তানকে বুকের দুধ না খাওয়ানো, রোজকার ডায়েটে প্রয়োজনীয় আয়োডিনের অভাব, আর্লি মেনার্কি ও লেট মেনোপজ এবং মেনোপজের পর হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি, ইত্যাদি কারণ ব্রেস্ট ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। নিয়মিত এক্সারসাইজ ও সঠিক ডায়েট এই রোগ প্রতিরোধে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয়।

ব্রেস্টে লাম্প মানেই ক্যানসার নয়

ব্রেস্টে লাম্প হলেই ভয় পাবেন না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এগুলি বিনাইন। কিন্তু রোগ নির্ণয়ের জন্যে অবশ্যই ডাক্তার দেখানো দরকার। শুরুতে এই অসুখকে নির্মূল করার একমাত্র উপায় সার্জারি করা। অপারেশনের কথা শুনে পিছিয়ে গেলে রোগ ছড়িয়ে পড়ে। এই ক্যানসার হল এলএলবিবি অর্থাৎ ফুসফুস, যকৃত, মস্তিষ্ক ও হাড় এই সব অংশে ছড়িয়ে পড়ে। সুতরাং, রোগ গোপন করলে বা সঠিক চিকিৎসা না করালে বিপদ যে অবশ্যম্ভাবী সে কথা বলাই বাহুল্য।

টার্গেটেড থেরাপি করে সুস্থ থাকুন

ব্রেস্ট ক্যানসারের চিকিৎসায় টার্গেটেড থেরাপির সাহায্য নিয়ে সহজেই অসুখটাকে জব্দ করা যায়। কার কী ধরনের চিকিৎসা প্রয়োজন তা রোগীকে খুঁটিয়ে দেখে ঠিক করা হয়। ক্যানসার আক্রান্ত টিউমার বেড়ে গেলে কেমোথেরাপির সাহায্যে টিউমার ছোট করে নিয়ে সার্জারি করা হয়। টার্গেটেড থেরাপির সাহায্যে অসুখটাকে অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে। আগামী দিনে জিন থেরাপির সাহায্যে ব্রেস্ট ক্যানসারকে জব্দ করা যাবে বলে আশা করা যায়।

ভাল, থাকুন, ক্যানসারের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করুন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Health Tips Cancer Breast Cancer Healthy Living
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE