Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

মুখে নিয়েও ট্যাবলেট ফেলে দিচ্ছে মেয়েরা!

দফতর জানাচ্ছে, জোগান অঢেল। সকলকেই দেওয়া হচ্ছে আয়রন ট্যাবলেট। কিন্তু অনেকের যে তা খেতে অনীহা, সেই প্রবণতা এখনও পুরোপুরি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হচ্ছে না।

সচেতনতা: বাড়ি-বাড়ি গিয়ে আয়রন ট্যাবলেট নিয়ে প্রচার। নিজস্ব চিত্র

সচেতনতা: বাড়ি-বাড়ি গিয়ে আয়রন ট্যাবলেট নিয়ে প্রচার। নিজস্ব চিত্র

নির্মল বসু
বসিরহাট শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:৪২
Share: Save:

দফতর জানাচ্ছে, জোগান অঢেল। সকলকেই দেওয়া হচ্ছে আয়রন ট্যাবলেট। কিন্তু অনেকের যে তা খেতে অনীহা, সেই প্রবণতা এখনও পুরোপুরি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হচ্ছে না।

স্কুলের ছাত্রী, প্রসূতি এবং সদ্য মা হয়েছেন যাঁরা, তাঁদের দেওয়া হয় আয়রন ট্যাবলেট। কিন্তু বহু ছাত্রীই তা হাতে করে নিলেও খায় না বলে অভিযোগ। শহরের দিককার মহিলাদের মধ্যেও আয়রন চ্যাবলেট খাওয়ার প্রবণতা গ্রামের মহিলাদের তুলনায় কম বলে জানা গেল।

স্বাস্থ্য কর্তাদের দাবি, বসিরহাট স্বাস্থ্য জেলায় প্রায় ৪৫ হাজার প্রসূতি মহিলা এবং প্রায় সাড়ে ৫ লক্ষ স্কুল ছাত্রীকে আয়রন ট্যাবলেট এবং সিরাপ খাওয়ানোর ব্যবস্থা আছে। এ জন্য প্রায় সাড়ে ৫ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী কাজ করছেন। বসিরহাট জেলা স্বাস্থ্য দফতরের ডেপুটি-৩ পান্না বিশ্বাস বলেন, ‘‘আমাদের কাছে আয়রন ট্যাবলেট এবং সিরাপের কোনও ঘাটতি নেই।’ কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি অন্য কথাই বলছে। হিঙ্গলগঞ্জের একটি স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী নিরুপমা ঘোষ বলে, ‘‘সপ্তম শ্রেণিতে উঠার পরে এখনও আমাদের আয়রন ট্যাবলেট দেওয়া হয়নি। তবে আগের ক্লাসে চার-পাঁচবার খেয়েছি।’’ স্কুলে যা ট্যাবলেট দেওয়া হয়, তাতে কটূ গন্ধ থাকে। খেলে বমি বমি পায় বলে জানিয়েছে অনেক ছাত্রী। সে জন্য বাজার থেকেও অন্য স্বাদের আয়রন ট্যাবলেট কিনে খায় অনেকে।

আর্থিক অবস্থাপন্ন অনেক পরিবারই মেয়েকে সরকারি ট্যাবলেটের বদলে দোকান থেকে কিনে খাওয়ান অভিভাবকেরা— এমনটাই জানালেন বাদুড়িয়ার একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা। বসিরহাটের পূর্ণচন্দ্র মজুমদার গার্লস হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা ছন্দা হালদার বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলের তেরোশো ছাত্রীকে নিয়ম করে আয়রন ট্যাবলেট দেওয়া হয়। তবে কেউ কেউ স্বাদ-গন্ধের জন্য বাইরে থেকে ট্যাবলেট কিনে খায়।’’ এক শিক্ষক সন্দীপ পাখিরা জানালেন, নিয়ম করে প্রতি ক্লাসে আয়রন ট্যাবলেট দেওয়া হলেও অনেকে খেতে চায় না। সন্দেশখালির একটি স্কুলের নবম শ্রেণির পড়ুয়া ঈশানি ঘোষ বলে, ‘‘প্রত্যেক সপ্তাহে শিক্ষকেরা ট্যবলেট ক্লাসে নিয়ে আসেন। তবে অনেকেই তা মুখে নিয়ে ফেলে দেয়।’’ স্বরূপনগরের নির্মাণ আদর্শ বিদ্যাপীঠের সহকারী প্রধান শিক্ষক দীপঙ্কর রায়ের অভিজ্ঞতা, প্রথম দিকে গন্ধের কারণে পড়ুয়ারা অনেকে খেতে চাইত না। অভিভাবকদের শিবির করে বোঝানো হয়। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক অভিজিৎ সরকার বলেন, ‘‘আমাদের এখানে প্রতিমাসে চিকিৎসকের উপস্থিতিতে কর্মশালার আয়োজন হয়।’’ জেলা স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যানে, আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার ক্ষেত্রে তাঁদের স্কুল প্রথম স্থানে আছে বলে তাঁর দাবি। যোগেশগঞ্জর অন্তঃসত্ত্বা সুতপা দাস বলেন, ‘‘এই অবস্থায় কষ্ট করে সেন্টারে যেতে পারি না। ট্যাবলেট আনা হয় না। অনেক সময়ে সেন্টারে গেলেও ট্যাবলেট থাকে না। বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়ার কথা বলা হলেও কেউ বাড়িতে পৌঁছে দেয় না। তাই খাওয়াও হয় না।’’ স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ পীযুষ মণ্ডল জানান, ‘‘স্কুলজীবন থেকেই মেয়েদের আয়রন ট্যাবলেট সঠিক পরিমাণে খাওয়া উচিত। স্কুলে সঠিক ভাবে তা খাওয়ানো হয় কিনা দেখতে হবে। আয়রনের অভাবে অনেক গর্ভবতী মহিলা রক্তাল্পতায় ভোগেন. মা ও শিশুর অপুষ্টিতে ভোগা আশঙ্কাও বেড়ে যায়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Women Gender Civic Issue Health
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE