Advertisement
E-Paper

নারী দিবসে কিডনি ভাল রাখার শপথ নিন মেয়েরা

পা টিপে টিপে আসে, তাই চট করে টের পাওয়া যায় না। এই নিঃশব্দ শত্রুর নাম ক্রনিক কিডনি ডিজিজ। সাধারণ মানুষকে কিডনির অসুখ নিয়ে সচেতন করতে ৮ মার্চ পৃথিবী জুড়ে পালন করা হচ্ছে ওয়ার্ল্ড কিডনি ডে। ওই একই দিনে আবার আন্তর্জাতিক নারী দিবস। তাই এ বারের কিডনি দিবসের স্লোগান ওমেন অ্যান্ড ক্রনিক কিডনি ডিজিজ। কিডনিকে সুরক্ষিত রাখার পরামর্শ দিলেন নেফ্রোলজিস্ট ডা জয়ন্ত দত্ত।  আজকের নারী এই ব্যাপারে পুরুষদের থেকে বেশ কয়েক কদম এগিয়ে। তবে বিষয়টা খুব সুখকর নয়। প্রত্যেক বছর ক্রনিক কিডনির অসুখে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বের প্রায় ৬ লক্ষ মহিলার মৃত্যু হয়।

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৮ ১০:৪২
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

আজকের নারী এই ব্যাপারে পুরুষদের থেকে বেশ কয়েক কদম এগিয়ে। তবে বিষয়টা খুব সুখকর নয়। প্রত্যেক বছর ক্রনিক কিডনির অসুখে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বের প্রায় ৬ লক্ষ মহিলার মৃত্যু হয়। ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর নেফ্রোলজি এবং ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব কিডনি ফাউন্ডেশনের বিশেষজ্ঞরা এই তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই এ বারের কিডনি ডে-র থিম নির্বাচন করেছেন। ১৪% মহিলা ও ১২% পুরুষ ক্রনিক কিডনির অসুখে ভুগছেন। রোগের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। কম বেশি প্রায় সব দেশের মহিলারা নিজেদের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে যথেষ্ট উদাসীন। তার ওপর আবার ক্রনিক কিডনি ডিজিজের নির্দিষ্ট কোনও উপসর্গ থাকে না বলে সমস্যাটা চট করে ধরা মুশকিল। তবে একটু সতর্ক থাকলেই ক্রনিক কিডনির অসুখ প্রতিরোধ করা যায়।

কিডনি কী ও কেন

আকারে শিমের দানার মতো আর ওজন ১৫০ থেকে ১৭০ গ্রাম। কোমরের ঠিক পিছনে দুদিকে দুটি কিডনি থাকে। এটি আসলে আমাদের শরীরের ছাঁকনি। বিপাকীয় ক্রিয়ায় তৈরি নানান টক্সিক ও অপ্রয়োজনীয় পদার্থ তৈরি হয়, যা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। কিডনি রক্ত থেকে এই সব দূষিত পদার্থ রক্ত থেকে ছেঁকে প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে বার করে দেয়। রক্ত পরিশোধন করার পাশাপাশি শরীরের পিএইচ ব্যালেন্স ও জলের ভারসাম্য রক্ষা করা কিডনির অন্যতম কাজ। তাই কোনওভাবে কিডনির কাজ ব্যহত হলে শরীরে টক্সিন জমে অসুস্থতা বাড়ে। সঠিক চিকিৎসা না হলে কিডনি একেবারে বিকল হয়ে যায়।

আরও পড়ুন: লজ্জা নয়, সচেতনতা জরুরি

মেয়েদের কেন বেশি

শারীরিক সমস্যার পাশাপাশি আর্থ সামাজিক কারণে মেয়েরা ক্রনিক কিডনি ডিজিজে বেশি আক্রান্ত হন। ক্রনিক কিডনি ডিজিজের অন্যতম কারণ অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ আর ডায়বিটিস। আমাদের দেশে এই দুটি রোগের প্রকোপই খুব বেশি। অনেক সময় প্রেশার ও সুগার থাকা সত্ত্বেও রোগী নিজেই জানেন না যে তার অসুখ আছে। যখন ধরা পড়ে তখন কিডনি সহ অন্যান্য অঙ্গ বিকল হতে শুরু করেছে। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত পরিবারে মহিলারা অত্যন্ত অসুস্থ না হলে চিকিৎসকের কাছে যেতে চান না। আর এই কারণেই ক্রনিক কিডনি ডিজিজের প্রকোপ বাড়ছে। লুপাস নেফ্রাইটিস নামে এক ধরনের অটোইমিউন ডিজিজ এবং ইউরিনারি ইনফেকশন মেয়েদের বেশি হয়। আর এর থেকেই ক্রনিক কিডনি ডিজিজের ঝুঁকি বাড়ে। আবার গর্ভাবস্থায় আচমকা হাই ব্লাড প্রেশার ও ইউরিন ইনফেকশনের ঝুঁকি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রনিক কিডনি ডিজিজের প্রবণতাও বাড়ে।

আরও পড়ুন: ‘মি টু’ এবং তারও অনেক আগে

অ্যাকিউট ও ক্রনিক কিডনির অসুখ

কিডনির অসুখ দু ধরনের হয়। অ্যাকিউট ও ক্রনিক। ধীরে ধীরে কোনও উল্লেকযোগ্য উপসর্গ ছাড়াই কিডনির কাজ কমে যাওয়াকে বলে সিকেডি বা ক্রনিক কিডনি ডিজিজ। আর ডায়রিয়া থেকে মারাত্মক ডিহাইড্রেশন হলে, দুর্ঘটনায় বা অন্যান্য কারণে অতিরিক্ত রক্তপাত হলে, সংক্রমণ বেড়ে গিয়ে সেপ্টিসিমিয়া হলে অথবা বিষাক্ত সাপে কামড়ালে সাময়িক ভাবে কিডনি বিকল হয়ে যেতে পারে। এরই নাম অ্যাকিউট কিডনি ডিজিজ। অনিয়ন্ত্রিত ব্লাড প্রেশার ও ডায়বিটিস ছাড়াও বারবার কিডনির সংক্রমণ হলে (ডাক্তারি পরিভাষায় বলে পায়লোনেফ্রাইটিস) অথবা ব্যথা কমাতে বারে বারে পেন কিলার খেলে কিডনির ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। সিকেডি হলে কিডনির গ্লোমেরুলাস ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একবার খারাপ হয়ে গেলে আর কিছুতেই আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যায় না।

কী করবেন কী করবেন না

অবশ্যই চিকিৎসকের নির্দেশ মেনে ওষুধ খেতে হবে। তবে শুধু ওষুধ খেলেই হবে না, জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনতে হবে। জল, নুন, প্রোটিন সবই খেতে হবে মেপেজুখে। ক্রনিক কিডনির অসুখে ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ নিয়ে নির্দিষ্ট সময় অন্তর খাবার খেতে হবে। বেশি নুন বা জলীয় খাবার খেলেও কিডনির ধকল বাড়ে। পা ও মুখে জল জমে ফুলে যায়। তাই কম নুন দিয়ে রান্না করা বাড়ির খাবার খাওয়াই শ্রেয়। চানাচুর, চিপস, আচার ইত্যাদিতে প্রচুর নুন থাকে। এ ছাড়া প্রাণীজ প্রোটিন দুর্বল কিডনির ওপর বাড়তি চাপ ফেলে। তাই মাছ, ডিম, চিকেন খেতে হবে নির্দিষ্ট পরিমাণে। কোনও সমস্যা হলে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে জানাতে ভুলবেন না।

ডায়বিটিস ও হাই প্রেশার থাকলে নিয়মিত কিডনি পরীক্ষা জরুরি

আমাদের দেশে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ক্রনিক কিডনির অসুখের কারণ উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়বিটিস। ওষুধের সাহায্যে প্রেশার ও সুগার নিয়ন্ত্রণ না করলে কিডনির কর্মক্ষমতা কমতে শুরু করে। তাই যাদের এই দুটি সমস্যা আছে তাঁদের কোনও উপসর্গ হোক বা না হোক বছরে একবার রুটিন ইউরিন টেস্ট, ইউরিয়া ক্রিয়েটিনিন ও অ্যালবুমিন পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া উচিত। কিডনি একবার খারাপ হয়ে গেলে তা আর ভাল করা যায় না। তবে আরও খারাপ হওয়া আটকে দেওয়া যায়। আসুন সবাই নিজেদের কিডনি ভাল রাখার শপথ নিই।

World Kidney Day Healthy Living Women's Day Special
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy