তৃপ্ত: দিনের শেষে ড্রেসিংরুমে ফেরার পথে ভারতীয় বোলাররা। এপি
শুক্রবার সকালে টিভির সামনে বসে ভাবছিলাম এ কোন অচেনা অস্ট্রেলিয়াকে দেখছি? এক সময় যে অস্ট্রেলিয়ার মার্ক টেলর, স্টিভ ওয়, রিকি পন্টিংদের দীর্ঘ ইনিংস গড়তে দেখেছি, যে দলকে টেস্টের এক দিনে তিনশো বা তার বেশি রান তুলে দর্শকদের আনন্দ দিতে দেখেছি, সেই অস্ট্রেলিয়া কী না দিনের শেষে ১৯১-৭! তাও ঘরের মাঠে ট্রাভিস হেড ৬১ রানটা না করলে এই স্কোরেও ওরা পৌঁছতে পারত কি না, সন্দেহ আছে। এই দলের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্ট জেতা উচিত ভারতের।
অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং দেখে হতাশ হলেও এটা বলতেই হবে যে আর অশ্বিনের বোলিং অসাধারণ লেগেছে। এর আগে অস্ট্রেলিয়ায় অশ্বিন কখনও তেমন সফল হননি। তাই এ বার তিনি কেমন করবেন, সেই চিন্তা ছিলই। কিন্তু ইনিংসের ১২তম ওভারে ওঁর হাতে বল তুলে দেওয়া ও চায়ের বিরতির আগে ও পরে টানা ২২ ওভার ওঁকে দিয়ে বল করানো দেখে এটাই বোঝা গেল যে, বিরাট কোহালি কতটা ভরসা করছেন তাঁর ওপর।
সেই ভরসার দামও অবশ্য দিচ্ছেন অশ্বিন। পরপর মার্কাস হ্যারিস, শন মার্শ ও উসমান খোয়াজাকে আউট করে। ৪২ রানের মধ্যে এই তিন তিন উইকেট পড়ে যাওয়ায় অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিংয়ের মেরুদণ্ডটাই প্রায় ভেঙে যায়। যে অবস্থা থেকে ওরা আর সোজা হয়ে দাঁড়াতেই পারেনি। বাকি কাজটুকু করে দেন ভারতীয় পেসাররা। যাঁদের মধ্যে সেরা যশপ্রীত বুমরা। তার পরেই ইশান্ত। কিন্তু চিন্তায় রাখলেন শামি। আগের দিন ব্যাট করার সময় ডান কাঁধে যে চোটটা লেগেছিল ওর, সেটাই হয়তো এ দিন কিছুটা ভোগাল ওঁকে। তাই হয়তো নিজেকে পুরোপুরি উজাড় করে দিয়ে বোলিং করতে পারেননি।
আরও পড়ুন: কোহালিদের অর্ধেকও নয় অস্ট্রেলিয়ার এই ব্যাটিং
অশ্বিন আগে অস্ট্রেলিয়ায় এসে নানা ধরনের বল করার চেষ্টা করত। এ বার সেটা করছে না। বাইরে থেকে বল ভিতরে আনার দিকেই বেশি মন দিয়েছে। আর তাতেই সফল হয়েছে ও। এ ছাড়াও ওঁর সাফল্যের আর একটা কারণও আছে বলে মনে হয়। বাঁ হাতি ব্যাটসম্যানদের বিরুদ্ধে বরাবরই সফল অশ্বিন। আর এই অস্ট্রেলিয়া দলে হ্যারিস, খোয়াজা, হেড, শন মার্শরা সবাই বাঁ হাতি। তাই অশ্বিনের বিরুদ্ধে অস্ট্রেলীয় ব্যাটিং বেশ চাপে রয়েছে। ৩৩ ওভার বল করে ওঁর ইকনমি রেট (১.৫১) দেখলেই বোঝা যায় সেটা। যে তিনটি উইকেট পেয়েছেন অশ্বিন, তার মধ্যে খোয়াজার কট বিহাইন্ডটাই সেরা। বলটা ডিপ করে একটু বাউন্স করে ছোট্ট টার্ন নেওয়ায় ব্যাটসম্যান বোকা বনে যান। রিভিউ নিয়ে একেবারেই ভুল করেননি বিরাট।
আরও পড়ুন: অনেক বদলে গিয়েছি এখন, বলছেন বিরাট
ইনিংসের ১২তম ওভারে যেমন বল করতে আসেন অশ্বিন, তেমন দ্বিতীয় নতুন বল নেওয়ার পরে ওঁকে দিয়েই বোলিং শুরু করান বিরাট। মনে হচ্ছে, অধিনায়ক বুঝে গিয়েছেন, অশ্বিনই ম্যাচটা জেতাতে পারেন তাঁদের। তবে ইশান্তের তৈরি করা ফুটমার্ক তিনি সে ভাবে কাজে লাগাতে পারেননি, কারণ, সেটা ডান হাতি ব্যাটসম্যানদের জব্দ করার জন্য ভাল ছিল। ওটা কাজে লাগাতে পারলে বোধহয় অশ্বিনের আরও বড় ধ্বংসলীলা দেখত অস্ট্রেলিয়া।
পেসারদের মধ্যে সেরা বোলিং করেন বুমরা। এত নিখুঁত লাইন বজায় রেখে বল করে গিয়েছেন যে, ইনিংসের শুরুতে হ্যারিস স্লিপ ও গালির মধ্যে দিয়ে একটা বাউন্ডারির মারার পরে বুমরাকে কোনও বড় শটই মারতে পারেননি অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যানরা। তাই ওঁর ইকনমি রেট ১.৭০।
দ্বিতীয় দিন সব ঠিক থাকলেও ইংল্যান্ডে টেল এন্ডাররা যেমন ভারতীয় বোলারদের ভুগিয়েছিলেন, চিন্তা হচ্ছে, এখানেও তেমনই না হয়। মনে রাখবেন হেডের সঙ্গে যে যে মিচেল স্টার্ক ক্রিজে অপরাজিত রয়েছেন, সেই টেল এন্ডারের ন’টা টেস্ট হাফ সেঞ্চুরি রয়েছে। ভারতের বিরুদ্ধে তাঁর একটা ৯৯ রানের ইনিংসও আছে। তাও সেটা মোহালিতে। আবার এটাও ঠিক যে, চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করতে হবে অস্ট্রেলিয়াকে। লড়াইটা যেন ক্রমশ নেথান লায়ন বনাম আর অশ্বিন হয়ে উঠতে চলেছে।
স্কোরকার্ড
ভারত ২৫০
অস্ট্রেলিয়া ১৯১-৭
ভারত (আগের দিন ২৫০-৯ এর পরে)
মহম্মদ শামি ক পেন বো হেজলউড ৬
বুমরা ন.আ ০
অতিরিক্ত ১
মোট ২৫০
পতন: ১০-২৫০ (শামি, ৮৭.৬)।
বোলিং: মিচেল স্টার্ক ১৯-৪-৬৩-২, জশ হেজলউড ২০-৩-৫২-৩, প্যাট কামিন্স ১৯-৩-৪৯-২, নেথান লায়ন ২৮-২-৮৩-২, ট্রাভিস হেড ২-১-২-০।
অস্ট্রেলিয়া (প্রথম ইনিংস)
অ্যারন ফিঞ্চ বো ইশান্ত ০
হ্যারিস ক বিজয় বো অশ্বিন ২৬
খোয়াজা ক পন্থ বো অশ্বিন ২৮
মার্শ বো অশ্বিন ২
হ্যান্ডসকম্ব ক পন্থ বো বুমরা ৩৪
হেড ন.আ ৬১
পেন ক পন্থ বো ইশান্ত ৫
কামিন্স এলবিডব্লিউ বুমরা ১০
স্টার্ক ন.আ ৮
অতিরিক্ত ১৭
মোট ১৯১-৭
পতন: ১-০ (ফিঞ্চ, ০.৩), ২-৪৫ (হ্যারিস, ২১.১), ৩-৫৯ (মার্শ, ২৭.৬), ৪-৮৭ (খোয়াজা, ৩৯.৩), ৫-১২০ (হ্যান্ডসকম্ব, ৫৭.৩০) ৬-১২৭ (পেন, ৬২.৬), ৭-১৭৭ (কামিন্স, ৮০.৩)।
বোলিং: ইশান্ত শর্মা ১৫-৬-৩১-২, যশপ্রীত বুমরা ২০-৯-৩৪-২, মহম্মদ শামি ১৬-৬-৫১-০, অশ্বিন ৩৩-৯-৫০-৩, বিজয় ৪-১-১০-০।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy