Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Arun Lal

‘৫৯ বছরে ফিট আর ৬০ পেরোলেই আনফিট!’ বোর্ডের নয়া নির্দেশে প্রশ্ন অরুণ লালের

ক্রিকেটে বলা হয়, বয়স নয়, আসল হল পারফরম্যান্স। এ ক্ষেত্রে সেটাই হয়ে দাঁড়াচ্ছে ফিটনেস। কিন্তু কোভিড সংক্রমণের কারণে গুরুত্ব পাচ্ছে বয়স। তা নিয়েই উঠছে প্রশ্ন।

বাংলার কোচের পদে অরুণ লালকে দেখা যাবে তো? —ফাইল চিত্র।

বাংলার কোচের পদে অরুণ লালকে দেখা যাবে তো? —ফাইল চিত্র।

সৌরাংশু দেবনাথ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০২০ ১৩:৩১
Share: Save:

বালাই ষাট! অরুণ লালদের নিয়ে ওঠা প্রশ্ন এখন এ ভাবেই দেখছে বঙ্গক্রিকেট।

কোভিড সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচার জন্য ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড জারি করেছে নির্দেশিকা। যাতে বলা হয়েছে যে ৬০ বছরের বেশি বয়সি, যাঁরা ডায়াবিটিস, ফুসফুসের সমস্যা ও দুর্বল প্রতিরোধ ক্ষমতার সঙ্গে লড়াই করছেন, তাঁরা কোনও শিবিরে যুক্ত থাকতে পারবেন না। কারণ, তাঁদের শরীরে সংক্রমণ সহজেই ছড়াতে পারে। এই নির্দেশিকা বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো আঘাত করেছে বাংলা ক্রিকেটকে। গত বার বাংলার রঞ্জি ফাইনালে ওঠার নেপথ্য কারিগর, ‘গুরু’ অরুণই যে এর ফলে অনিশ্চয়তার সরণিতে চলে গেলেন। ক্যানসারজয়ী তাঁকে বাদ দিয়ে অভিমন্যু ঈশ্বরণের দলকে যে কল্পনাই করা যাচ্ছে না!

অধিনায়ক অভিমন্যু জানতেনই না এই নির্দেশিকার ব্যাপারে। আনন্দবাজার ডিজিটালের থেকে এই খবর পেয়ে তিনি অবাক। প্রকাশ্যে যদিও মুখ খুলতে চাইলেন না। বললেন, “দেখি, সিএবি এটা নিয়ে কী করে। তবে কোচ হিসেবে অরুণ লালের অবদান খুব গুরুত্বপূর্ণ।” বোঝা গেল, কোচের উপস্থিতি অধিনায়কের কাছে কতটা জরুরি।

আরও পড়ুন: ‘আর কত পরীক্ষা দিতে হবে? সেরা হয়েও কেন বার বার দলের বাইরে থাকবে ঋদ্ধি?’

গত মরসুমে বাংলার সাফল্যে বড় অবদান রাখা অনুষ্টুপ মজুমদারও জোর দিলেন কোচের অবদানে। বললেন, “গত বার আমাদের টিমটা গড়ে তুলেছেন অরুণ লালই। প্রত্যেকের মধ্যে লড়াইয়ের শক্তি আমদানি করেছেন। শক্তি জুগিয়েছেন, একটা দল গড়ে তুলেছেন। মানসিক কাঠিন্য আনা, একজোট করে তোলা, পুরোটাই কোচের জন্য। তিনি যদি না থাকেন, তবে বিশাল বড় ক্ষতি। আমি তো ভাবতেই পারছি না।”

গত মরসুমে প্রতিটি অ্যাওয়ে ম্যাচেই দলের সঙ্গে গিয়েছিলেন বাংলার নির্বাচক শুভময় দাস। ফলে, একটা দল হয়ে ওঠার সাক্ষী থেকেছেন তিনি। তাঁর মতে, “বাংলা দলে অরুণ লালের ভূমিকা নিছক কোচে সীমাবদ্ধ থাকছে না। তাঁর জায়গাটা একটা মেন্টরের, একটা মোটিভেটরের, এক জন ফাইটারের। ওঁর অভিজ্ঞতা বিশাল। ক্রিকেটার জীবনে বাংলাকে কত ম্যাচে জিতিয়েছেন। তার পরও যুক্ত থেকেছেন ক্রিকেটের সঙ্গে। উনি দলের মধ্যে লড়াইয়ের যে আবহ তৈরি করেছেন, জুনিয়রদের যে ভাবে গুরুত্ব দিয়েছেন, তা অনস্বীকার্য। এই দলটা অরুণ লাল ছাড়া কেমন করবে, ভাবতেই পারছি না। উনি নিজেও ভালবাসেন দলটাকে। উনি নিশ্চিত ভাবে চাইবেন দলের সঙ্গে থাকতে। বাংলা দলে এখন অনেক তরুণ ক্রিকেটার উঠে আসছে। এই সময় তাঁকে প্রয়োজন।”

বাংলার গত মরসুমে রঞ্জি ফাইনালে ওঠার নেপথ্যে বড় অবদান রয়েছে কোচ অরুণ লালের। —ফাইল চিত্র।

স্বয়ং তিনি, অরুণ লাল কী ভাবছেন? আনন্দবাজার ডিজিটালকে তিনি সাফ বললেন, “আমি খুব হতাশ। আমার ফিটনেস নিয়ে তো কোনও সমস্যা নেই। এই নির্দেশিকার কথা জেনে আমি রীতিমতো অবাক। যাঁর বয়স ৫৯, সে কোচিং করাতে পারে, তাঁর করোনা হতে পারে না? আমার বয়স ষাটের বেশি বলে ফিট থাকলেও থাকতে পারব না?” সিএবির সঙ্গে প্রয়োজনে এই ব্যাপারে কথা বলবেন বলেও জানালেন তিনি। তবে বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগের কোনও ইচ্ছা নেই। ইচ্ছা একটাই, বাংলার কোচ হিসেবে কাজ চালিয়ে যাওয়া।

ক্রিকেটে একটা কথা চালু রয়েছে। বয়স নয়, আসল হল পারফরম্যান্স। এ ক্ষেত্রে সেটাই হয়ে দাঁড়াচ্ছে ফিটনেস। বাংলার রঞ্জিজয়ী অধিনায়ক সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সওয়াল, “যে সার্কুলার পাঠানো হয়েছে, তাতে প্রচুর যদি-কিন্তু রয়েছে। ১০০ পাতার নির্দেশিকা, যার সব মেনে চলা কঠিন। এমনকি কতটা মানা সম্ভব, তা নিয়েই আমার সন্দেহ আছে। আর বয়স নয়, কে কতটা সুস্থ, সেটা দেখা দরকার। ৪০ বছরের কেউ তো অসুস্থ থাকতে পারেন। আবার ষাটের বেশি বয়সিরাও ফিট থাকতে পারেন। তাই সুস্থতা দেখতে হবে, কর্মক্ষমতা দেখতে হবে। তা সে কোচ, অফিসিয়াল বা সাপোর্ট স্টাফ, যেই হোন না কেন। আমি যেমন নিজের কথা বলতে পারি। জিম করছি নিয়মিত, ফিটও রয়েছি। বয়স ষাটের বেশি, শুধু এটাই কেন দেখা হবে?” অর্থাৎ, বাংলার রঞ্জি ট্রফি জয়ের অন্যতম প্রধান কারিগর, একদা সহযোদ্ধা অরুণ লালের পাশেই দাঁড়াচ্ছেন তাঁর প্রাক্তন ক্যাপ্টেন।

আরও পড়ুন: বোর্ডের ‘এসওপি’ অনিশ্চিত গুরু অরুণ

শুভময়ও একই সুরে বললেন, “আমার মনে হয় না বয়সটা কোনও ফ্যাক্টর। আসল হল ফিটনেস। অরুণ লাল যথেষ্ট ফিট আছেন। মাঠে ক্রিকেটারদের সঙ্গেই তিনি নেমে পড়েন। হেঁটে যান, ট্রেনিং করেন। মাঝে একটা ঘটনা ঘটেছিল। কিন্তু তা কাটিয়ে উঠেছেন। আর সবচেয়ে জরুরি, উনি শারীরিক ভাবে যতটা, মানসিক ভাবে তার দ্বিগুণ ফিট।”

বোর্ডের নির্দেশিকায় সমস্যায় ইডেনের পিচ প্রস্তুতকারক সুজন মুখোপাধ্যায়ও। গত বছর হৃদরোগের সমস্যায় ভুগেছিলেন। বয়সও ষাটের বেশি। তিনি বললেন, “এই নির্দেশিকা কতটা আমাদের জন্য, সংশয় রয়েছে। কারণ, ঘরোয়া ক্রিকেট কবে চালু হবে, কেউ বলতে পারছে না। এই বছরই ইডেনে খেলা হবে কি না, আমার জানা নেই। আমাকে তো সপ্তাহে দুই-তিন দিন ইডেনে বা সল্টলেকের মাঠে যেতে হচ্ছে। না দেখলে মাঠ তো জঙ্গলে পরিণত হবে। ইডেন, সল্টলেকের মাঠ আর কল্যাণীতে ছয় জন করে মালি রয়েছে। গত ২৫ জুলাই বাকি ৮০ শতাংশ মাঠকর্মীকে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই কয়েক জন শুধু রয়েছে। ওদের কাজ করানোর জন্যই আমাকে যেতে হচ্ছে।”

অরুণ লাল, সুজন মুখোপাধ্যায়। আপাতত বঙ্গ ক্রিকেটে দু’জনকে নিয়েই থাকছে ধোঁয়াশা। রয়েছে পাল্টা প্রশ্নও। ক্রিকেটের ঐতিহ্য ভাঙচুর করে এই প্রথম কি পারফরম্যান্স বা ফিটনেসের চেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে বয়স? যা নিছকই একটা সংখ্যা। আর সেটাই কি না হয়ে উঠছে চূড়ান্ত মাপকাঠি!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE