Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Badminton

বিদ্যুত্স্পৃষ্ট হয়ে মর্মান্তিক মৃত্যু ব্যাডমিন্টনে রাজ্যের সেরা তৃণাঙ্কুরের

তৃণাঙ্কুর অজস্রবার আবেদন করেছিলেন অন্য দপ্তরে বদলির জন্য। জানিয়েছিলেন, তাঁর পক্ষে এত ঝুঁকির কাজ করা মুশকিল হয়ে উঠছে। কিন্তু, কেউ কান দেয়নি।

বিদ্যুত্স্পৃষ্ট হয়ে প্রাণ হারালেন ২৫ বছর বয়সী তৃণাঙ্কুর।

বিদ্যুত্স্পৃষ্ট হয়ে প্রাণ হারালেন ২৫ বছর বয়সী তৃণাঙ্কুর।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৮ ১৭:২৬
Share: Save:

ডাবলসে ছিলেন রাজ্যের সেরা। জাতীয় পর্যায়ে ছিলেন সেরা তিনের মধ্যে। ব্যাডমিন্টনই ছিল তাঁর ধ্যানজ্ঞান। চেয়েছিলেন ব্যাডমিন্টন কোর্টে উজাড় করে দিতে। কিন্তু, ২৫ বছর বয়সেই অকালে প্রাণ হারালেন প্রতিভাবান তৃণাঙ্কুর নাগ। তাঁর মৃত্যুতে গাফিলতির অভিযোগ উঠল অফিস, ইস্টার্ন রেলের শিয়ালদহ শাখার বিরুদ্ধে।

নারকেলডাঙ্গা কারশেডে শনিবার ইলেকট্রিকের কাজ করতে গিয়ে বিদ্যুত্স্পৃষ্ট হয়েছিলেন তৃণাঙ্কুর। সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতে বিআর সিংহ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল। সোমবার সকাল ৯টা ৩২ মিনিটে মৃত্যু হয় তাঁর। নাগ পরিবারের একমাত্র সন্তানের করুণ মৃত্যুর পরিপ্রেক্ষিতেই উঠে আসছে মারাত্মক অভিযোগ।

স্পোর্টস কোটায় বছর পাঁচেক আগে ইস্টার্ন রেলে কাজ পেয়েছিলেন তৃণাঙ্কুর। যেহেতু দশম শ্রেণির পর শিক্ষাগত যোগ্যতা ছিল না, তাই ইলেকট্রিক্যাল বিভাগে তাঁকে রাখা হয়েছিল। বছর তিনেকের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থাও ছিল। কিন্তু, খেলার কারণে তৃণাঙ্কুর বেশির ভাগ সময়েই ট্রেনিংয়ে থাকতেন অনুপস্থিত। অথচ, ট্রেনিং শেষে সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। যথাযথ ট্রেনিং না নিয়েও ওই কাজ করার উপযুক্ত বলে জানানো হয়েছিল। ফলে, ট্রেনের ছাদে দাঁড়িয়ে ২৪০০০ ভোল্টের বিদ্যুতে কাজ করতে হত দিনের পর দিন। আর সেই কাজ করতে করতেই বিদ্যুত্স্পৃষ্ট হলেন তিনি।

আরও পড়ুন: এখনও গ্যালারিতে বল ফেলতে পারে, ‘চ্যাম্পিয়ন’ ধোনির প্রশংসায় সৌরভ​

আরও পড়ুন: অ্যাডিলেডে প্রথম টেস্টে রোহিত না হনুমা? সুনীল গাওস্কর বললেন...​

ঘনিষ্ঠদের দাবি, এই কাজের জন্য ইঞ্জিনিয়ারের যোগ্যতা প্রয়োজন। প্রয়োজন বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনারও। দরকার ছিল যথাযথ ট্রেনিংয়েরও। এর কোনও যোগ্যতাই ছিল না তৃণাঙ্কুরের। ফলে, বিপদের আশঙ্কা থেকে গিয়েছিল। তৃণাঙ্কুর সে জন্যই অজস্র বার অন্য দফতরে বদলির আবেদন করেছিলেন। জানিয়েছিলেন, তাঁর পক্ষে এত ঝুঁকির কাজ করা মুশকিল হয়ে উঠছে। কারণ, এই কাজ করার প্রশিক্ষণ তাঁর নেই। নিজের দফতরে থেকে শুরু করে ইস্টার্ন রেলের খেলাধূলার দায়িত্বে থাকা দফতর, সবাইকেই বার বার অনুরোধ করেছিলেন। বলেছিলেন, অন্য কোনও কাজ দিতে। কিন্তু, লাভ হয়নি কোনও। বরং, ‘দেখছি, দেখব’ বলে শুধু বিলম্ব করা হয়েছে। পরিণতি, অকালে ঝরে গেল তরতাজা একটা প্রাণ।

তৃণাঙ্কুরের কোচ সৌমেন ভট্টাচার্য আনন্দবাজার ডিজিটালকে বললেন, “ওর কাজের জায়গায় বড্ড চাপ পড়ে যাচ্ছিল। খুব হতাশ ছিল। এত পরিশ্রম করানো হত, এত বাজে ব্যবহার করা হত ওর সঙ্গে, মুষড়ে থাকত। ওর যে বস বা উপরের অফিসার ছিল, তাদের ব্যাপারে বলত। খুব কষ্ট পেত তাদের আচরণে। আট-ন’বার আবেদন করেছিল অন্য কোথাও সরিয়ে দেওয়ার জন্য। যেখানে এমন জীবনের ঝুঁকি নেই, এমন কোথাও কাজ করতে চেয়েছিল। কিন্তু, তা রাখা হয়নি। ও খেলতে চাইত। তার জন্য সামান্য সুবিধা চেয়েছিল। আর খেলে যাচ্ছিলও। ডাবলসে চ্যাম্পিয়ন ছিল। একটা সম্ভাবনার অপমৃত্যু তো বটেই। আর আমি যদি ধরেই নিই যে, ব্যাডমিন্টন খেলে আর কিছু হত না, তা হলেও তো একটা ২৫ বছরের ছেলে এ ভাবে চলে গেল! মানুষটাই তো পৃথিবীতে আর নেই।” আক্ষেপ থাকছেই।

ঘনিষ্ঠদের থেকে শোনা গেল, মানসিক যন্ত্রণায় একবার মাস দেড়েক অফিসে আসাই বন্ধ করে দিয়েছিলেন তৃণাঙ্কুর। ভাল লাগত না অফিসের পরিবেশ, অফিসারদের অবহেলা। ক্রীড়াবিদ হিসেবে আত্মসম্মানও বজায় থাকত না অফিসে। যা মানতে পারতেন না কিছুতেই। সকালে ব্যাডমিন্টন কোর্টে ঘাম ঝরিয়ে আসার পর ঢুকে পড়তেন কারশেডে। প্রচণ্ড গরমে মারাত্মক বিদ্যুতে কাজ করতে হত ঝুঁকি নিয়ে। স্বাভাবিক ভাবেই ইস্টার্ন রেলে স্পোর্টসের দায়িত্বে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের দিকে উঠছে অভিযোগের আঙুল।

(ক্রিকেটারদের ইন্টারভিউ, ফুটবলারদের ইন্টারভিউ, অ্যাথলিটদের লড়াইয়ের গল্প - ক্রীড়াজগতের সব খবর আমাদের খেলা বিভাগে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Badminton Trinankur Nag Eastrern Rail
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE