Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

দেশের জার্সি উপভোগই করে লিয়ো, জিতে ঘোষণা সাম্পাওলির

অনিশ্চয়তা, নাটক আর উদ্বেগের মধ্যেই দেখা গেল সাইডলাইনের ধারে চলে এসেছেন মেসি। এবং তাঁর সঙ্গে কথা বলছেন কোচ সাম্পাওলি।

নজরে: এই সেই মুহূর্ত। মেসির সবুজ সংকেত সাম্পাওলিকে। ছবি: টুইটার

নজরে: এই সেই মুহূর্ত। মেসির সবুজ সংকেত সাম্পাওলিকে। ছবি: টুইটার

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০১৮ ০৫:২১
Share: Save:

আর্জেন্টিনার আসল ‘বস’ কে? হর্হে সাম্পাওলি নাকি লিয়োনেল মেসি?

এই প্রশ্নের উত্তর কী হতে পারে তার খানিকটা আন্দাজ পাওয়া গেল মঙ্গলবার আর্জেন্টিনা-নাইজিরিয়া ম্যাচে। শেষ বাঁশি বাজতে ১২ মিনিট বাকি। ফল তখনও ১-১। প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে যেতে হলে জিততেই হবে আর্জেন্টিনাকে। আর ম্যাচ ড্র রাখতে পারলে ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে গ্রুপে দু’নম্বর দল হিসেবে শেষ ষোলোর টিকিট পেয়ে যাবে আফ্রিকার দেশটি।

অনিশ্চয়তা, নাটক আর উদ্বেগের মধ্যেই দেখা গেল সাইডলাইনের ধারে চলে এসেছেন মেসি। এবং তাঁর সঙ্গে কথা বলছেন কোচ সাম্পাওলি। বিভিন্ন দেশের সংবাদমাধ্যম উত্তাল কোচ ও অধিনায়কের সম্ভাব্য কথোপকথনের বিষয় নিয়ে। কয়েকটি জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে ভিডিয়োটাও। তা থেকে অনুমান করা হচ্ছে, মেসির পরামর্শ নিয়েই সাম্পাওলি পরিবর্ত হিসেবে মাঠে নামিয়েছিলেম সের্খিয়ো আগুয়েরোকে। ভিডিয়ো ক্লিপিংসে শোনা গিয়েছে সাম্পাওলি মেসিকে বলছেন ‘‘কুন, কুন?’’

‘কুন’ মানে ম্যাঞ্চেস্টার সিটির স্ট্রাইকার এবং দিয়েগো আর্মান্দো মারাদোনার প্রাক্তন জামাই আগুয়েরো। কোচের প্রশ্ন শুনে মেসি হাত দিয়ে ইশারা করতেই মাঠে নেমে পড়েন আগুয়েরো। যাঁর সঙ্গে সাম্পাওলির সম্পর্কের অবনতি নিয়ে জোর জল্পনা চলছিল এই ম্যাচের আগে। ক্রোয়েশিয়ার কাছে ০-৩ পরাজয়ের ম্যাচে আগুয়েরোকে বসিয়ে দেন সাম্পাওলি। তার পরের দিন আগুয়েরোকে সংবাদমাধ্যম জিজ্ঞেস করে, কোচ বলেছেন মেসির সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না অন্যরা। আপনি কী বলবেন? আগুয়েরো জবাব দেন, ‘‘ওর যা ইচ্ছে, বলে যাক।’’

আরও পড়ুন: রুশ দেশে কোরিয়ান বিপ্লব, বিধ্বস্ত জার্মানি

মনে করা হচ্ছিল, কোচকে নিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রদর্শনের জন্যই নাইজিরিয়ার বিরুদ্ধে শুরু থেকে নামানো হয়নি আগুয়েরোকে। কিন্তু যখন দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছিল আর্জেন্টিনার, হাতে অল্প সময় ছিল, মেসিকে দেখা যায় সাইডলাইনের ধারে চলে এসেছেন। তখনই সাম্পাওলি তাঁর পরামর্শ নিয়ে বদলটা করেন। শুধু তা-ই নয়, সাম্পাওলি ম্যাচের পরে কয়েক জন সাংবাদিকের কাছে স্বীকার করেন, তিনি সব চেয়ে খুশি খেলার পরে মেসি এসে তাঁকে আলিঙ্গন করায়।

‘‘ম্যাচ জেতার পরে লিয়ো এসে আমাকে জড়িয়ে ধরায় দারুণ গর্ব হচ্ছিল। ও জানে আমি এই দলটাকে কতটা ভালবাসি। আমিও জানি, ও কতটা মনেপ্রাণে জিততে চায়।’’ যোগ করেন, ‘‘বিশ্বকাপের জন্য আমি ওর সঙ্গে ঘোরার সুযোগ পেয়েছি। আর বিশ্বকাপের আগে থেকেই ওর সঙ্গে আমাদের লক্ষ্যে নিয়ে আলোচনা চলছে। লিয়ো আমাকে ভাল চেনে, জানে। এটাও জানে যে, আমরা একই স্বপ্ন নিয়ে বিশ্বকাপে এসেছি।’’

লিয়োনেল মেসিকে নিয়ে নিজের পর্যবেক্ষণও গোপন করেননি সাম্পাওলি। বলেছেন, ‘‘লিয়োকে কোচিং করাচ্ছে এমন যে কেউ জানে, ওর সতীর্থদের অনেক দায়িত্ব। সব চেয়ে বড় দায়িত্ব, ওকে ঠিক মতো পাস দিতে হবে। পাস দিতে পারলে ও ঠিকই গোলের সুযোগ তৈরি করে দেবে। আর সেটা না ঘটলেই ভুগতে হবে। বিশ্বের সেরা ফুটবলার আমাদের দলে। সেটার জন্যই বাকিরা ওর কাছ থেকে উপকৃত হবে। সে জন্যই বলেছিলাম, ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে ম্যাচে সমস্যাটা আমাদের ছিল, মেসির নয়।’’

মানবিক মেসিরও উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন তিনি। ‘‘ওর মানবিক দিকটা মনে গেঁথে থাকার মতো। আর পাঁচটা মানুষের মতো লিয়োরও অনুভূতি আছে, আর্জেন্টিনা জিতলে খুশি হয়, হারলে কাঁদে। লোকে বলে ও আর্জেন্টিনার হয়ে খেলাটা উপভোগ করে না। আমি তা বিশ্বাস করি না। আর পাঁচ জন মানুষের মতোই ও দেশের হয়ে হয়ে খেলে আনন্দ আর কষ্ট পায়,’’ বলেছেন সাম্পাওলি।

আর্জেন্টিনার রুদ্ধশ্বাস জয়ের পরের দিন সব কিছুকে ছাপিয়ে উঠে এসেছে সাম্পাওলি-মেসির সম্পর্কের কাহিনি। এবং, শিরোনামে রয়েছে মেসির পরামর্শে আগুয়েরোকে পরিবর্ত হিসেবে নামানো। অতিরিক্ত স্ট্রাইকার হিসেবে আগুয়েরো নামার পরে আর্জেন্টিনার আক্রমণের ঝাঁঝও অনেক বেড়ে যায়। তার পর শেষ মুহূর্তের অবিশ্বাস্য গোলে নতুন নায়ক হিসেবে উদয় ঘটল মার্কোস রোহোর। ৮৬ মিনিটে চলন্ত বলে সাইড ভলিতে গোল করে আর্জেন্টিনাকে শেষ ষোলোতে পৌঁছে দিলেন রোহো। আর সেটা সম্ভব হল কারণ অন্য ম্যাচে ক্রোয়েশিয়াও হারিয়ে দেয় মেসিদের সঙ্গে ড্র করা আইসল্যান্ডকে।

মঙ্গলবার ম্যাচের পরে সাম্পাওলি সাংবাদিক সম্মেলনে আসেননি। পরে এক দোভাষীকে নিয়ে তিনি কয়েক জন সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলার সময় দাবি করেন, তাঁর পরিকল্পনা অবশেষে কাজে দিয়েছে। সঙ্গে ফুটবলারদেরও প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন। তাঁর মন্তব্য, ‘‘একটা সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে আমরা নেমেছিলাম। প্রথমার্ধে সেটা দারুণ কাজ দেয়। আর সব অর্থেই আমরা নাইজিরিয়ার চেয়ে ভাল খেলেছি। বলের নিয়ন্ত্রণ আমাদেরই বেশি ছিল। তা ছাড়া মাঝমাঠ থেকে দারুণ পাসের ছোঁয়ায় আমার ফুটবলাররা আক্রমণে উঠেছে।’’ তবে মেসিদের কোচ স্বীকার করেছেন, পেনাল্টির পরে তাঁর ফুটবলাররা স্নায়ুর চাপে ভুগতে শুরু করে। ‘‘এমন একটা অবস্থায় গোল পাচ্ছিলাম না বলে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি। সেটাই তো স্বাভাবিক, তাই না? অবশেষে ভাল ভাবে সব মিটল,’’ বলেছেন সাম্পাওলি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE