Advertisement
E-Paper

অখিলেশের মতোই হাওয়ার অনুকূলে সৌরভ

গোপাল সুব্রহ্মণ্যম জানিয়ে দিলেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার পক্ষে সৌরভ টেকনিক্যালি সম্পূর্ণ যোগ্য। তিনি ছাব্বিশ মাস কাটিয়ে ফেলেছেন প্রশাসনে। নতুন আইন অনুযায়ী তাঁর বোর্ড নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে কোনও বাধা নেই।অখিলেশ যাদব আর সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের মধ্যে কী কী মিল? এক, দু’জনেই নিজেদের আবিষ্কার করছেন ক্ষমতার সিন্দুকের কাছাকাছি থাকা ঘূর্ণাবর্তের মধ্যে। দুই, ঠিক এই মুহূর্তের পালের হাওয়া তাঁদের দু’জনের দিকে।

গৌতম ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:৪৪
নতুন সৌরভের অপেক্ষা। বুধবার।— শঙ্কর নাগ দাস

নতুন সৌরভের অপেক্ষা। বুধবার।— শঙ্কর নাগ দাস

অখিলেশ যাদব আর সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের মধ্যে কী কী মিল?

এক, দু’জনেই নিজেদের আবিষ্কার করছেন ক্ষমতার সিন্দুকের কাছাকাছি থাকা ঘূর্ণাবর্তের মধ্যে। দুই, ঠিক এই মুহূর্তের পালের হাওয়া তাঁদের দু’জনের দিকে।

সপ্তাহের প্রথম দিন নয়াদিল্লিতে সর্বোচ্চ আদালতের রায় সৌরভকে একলাফে বোর্ড প্রশাসনের শীর্ষপদের সামনে দাঁড় করিয়েছিল। সপ্তাহের দ্বিতীয় দিন সেই সুপ্রিম কোর্টের সংশোধনী রায় তাঁর অবস্থা আরও মজবুত করল।

নিজের খেলা ৩১১ ওয়ান ডে-তে ২২ সেঞ্চুরি রয়েছে সৌরভের। এর মধ্যে চার বার পাওয়ার প্লে থেকে হাঁকাতে শুরু করা তাঁর সেঞ্চুরির পরেও দল হেরেছে। তেমন কিছু অপ্রত্যাশিত হওয়ার সুযোগ এখানেও রয়েছে। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের তাজ বলে কথা। উত্তরপ্রদেশের রাজনীতির মতোই অনিশ্চিত মুলায়ম হাওয়ায় ভরা। কোথা থেকে কী ঘটে যাবে কেউ জানে না।

কিন্তু তাৎক্ষণিক যুক্তি এবং বুদ্ধি সৌরভকেই আপাতত ফেভারিট করে রেখেছে। ভারতীয় ক্রিকেটে যাঁর বিভূতির এখনও যথেষ্ট কদর রয়েছে সেই সুনীল বাবা গাওস্কর তাঁকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে চেয়েছেন বলে নয়।

আসলে সুপ্রিম কোর্টের সংশোধিত রায়ে চব্বিশ ঘণ্টা আগে ছিটকে গিয়েছেন সৌরভের এক প্রতিদ্বন্দ্বী। আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছিল আসন্ন বোর্ড নির্বাচন হতে যাচ্ছে তিন ঘোড়ার দৌড়।

সৌরভ। অমিত শাহ পুত্র জয় শাহ। ব্রিজেশ পটেল।

ব্রিজেশ সম্পর্কে বোর্ডে কেউ কেউ বলছিলেন কী করে প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হবে? ওর তো স্বার্থের সংঘাত রয়েছে। ওর কোম্পানি ইডেন সহ দেশের বিভিন্ন মাঠে ইলেকট্রনিক্স স্কোরবোর্ড সরবরাহ করার বরাত পায়। ব্যবসা এবং বোর্ড প্রশাসন কী করে একসঙ্গে হতে পারে?

এ দিন অবশ্য আর আলোচনার কোনও সুযোগ নেই। সুপ্রিম কোর্ট নবতম নির্দেশে জানিয়ে দিয়েছে রাজ্য সংস্থায় যাঁদের মেয়াদ ন’বছর হয়ে গিয়েছে তাঁরা আর বোর্ডে আসতে পারবেন না। কর্নাটক ক্রিকেট সংস্থায় ন’বছর কাটিয়ে ফেলা ব্রিজেশ তাই দৌড় থেকে শুধু ছিটকেই গেলেন না। ক্রিকেট প্রশাসকের জীবনও শেষ হয়ে গেল তাঁর। কেএসসিএ-র মুখপাত্র বিনয় মৃত্যুঞ্জয় এ দিন সংবাদসংস্থাকে বলেছেন, ‘‘ব্রিজেশ এখনও দাঁড়াতে পারবে। ও তো শুধু স্থানীয় সংস্থায় ন’বছর কাটিয়েছে। বোর্ডটা তো বাকি।’’ দৃশ্যতই তিনি আদালতের সর্বশেষ সংশোধনের খবর পাননি।

এই নির্দেশ একান্তই সুপ্রিম কোর্টের। লোঢা কমিটির রিপোর্টে কিন্তু এত কড়া সুপারিশ ছিল না। এ দিন নয়াদিল্লি থেকে ফোনে আনন্দবাজারকে আইনজীবী ও আদালত-বান্ধব গোপাল সুব্রহ্মণ্যম জানালেন, ক্রিকেট প্রশাসকদের সর্বোচ্চ মেয়াদ আদালত বেঁধে দিয়েছে ন’বছর।

জগমোহন ডালমিয়ার কাছে ওপরে খবর যাওয়ার উপায় থাকলে তিনি শিউরে উঠতেন যে মোট ন’বছরের বেশি কোনও প্রশাসক তাঁদের ক্রিকেটজীবন আর টানতে পারবেন না। শোনা যাচ্ছে, বোর্ড কর্তারা যে ভাবে গদি না ছাড়ার মনোভাব দেখিয়েছেন তাতে উত্তেজিত হয়েই আদালতের এমন সংশোধিত সিদ্ধান্ত।

লোঢার সুপারিশ ছিল প্রশাসকেরা যেন রাজ্য অ্যাসোসিয়েশন পর্যায়ে পান ন’বছর। বোর্ডে পান ন’বছর। মোট আঠারো বছর কাটাতে পারেন প্রশাসনে। ডালমিয়া-বিন্দ্রা-রুংতারা মিলিত ভাবে ১২০ বছরেরও বেশি ক্রিকেট প্রশাসনে কাটিয়েছেন। গড় মেয়াদ ছিল ৪০ বছর। সেটা কমিয়ে ১৮-তে নামিয়ে আনাতেই অনেকের আপত্তি ছিল।

সুপ্রিম কোর্ট এক ঝটকায় তাকে ন’বছরে নামিয়ে দিল। অর্থাৎ সিএবির প্রতিনিধি যদি সাত বছর সিএবিতে কাটান, বোর্ডে বাকি দু’বছরের বেশি পাবেন না।

গোপাল সুব্রহ্মণ্যম জানিয়ে দিলেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার পক্ষে সৌরভ টেকনিক্যালি সম্পূর্ণ যোগ্য। তিনি ছাব্বিশ মাস কাটিয়ে ফেলেছেন প্রশাসনে। নতুন আইন অনুযায়ী তাঁর বোর্ড নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে কোনও বাধা নেই। কারণ তাঁর হাতে তিন বছরের মেয়াদ ফুরনোর আরও দশ মাস থেকে গেল। এই দশ মাসের মধ্যে বোর্ড নির্বাচন হলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জিততে পারলে গোটা তিন বছরের মেয়াদ পেয়ে যাবেন। সে ক্ষেত্রেও তাঁর হাতে থাকবে বাকি মাত্র সাড়ে তিন বছর।

মোদ্দা কথা, মোট ন’বছর কাটিয়েছ কী শেষ। সে যে পর্যায়েরই ক্রিকেট কর্তা হও না কেন। সে যত বড় ক্রিকেটারই হও না কেন।

দেশের ক্রিকেট কর্তাদের প্রশাসনিক জীবনে মোটামুটি এখন মড়ক লেগেছে। প্রায় সবাই দেখা যাচ্ছে, হয় বাতিল হয়ে যাচ্ছেন বা ডেঞ্জার জোনে। প্রেসিডেন্ট/সচিব পদে দাঁড়াতে হলে দু’টো বার্ষিক সাধারণ সভাতেও যোগ দেওয়া প্রয়োজন। এই শর্ত আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে সৌরভ আর জয় শাহ ছাড়া কারও নেই। প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে তাই এই দু’জনেই থেকে যাচ্ছেন।

প্রশ্ন হল, আদালত নিযুক্ত পর্যবেক্ষকেরা কি এই শর্ত সামান্য শিথিল করবেন? সংবিধানে বদল আনবেন? যেহেতু প্রার্থীসংখ্যা কমে এখন দুইয়ে দাঁড়াচ্ছে?

প্রকৃতিগত ভাবে মুলায়মের দৌড়ে ফেরার সুযোগ, বোর্ডে আচমকা একাধিক প্রার্থী হাজির হয়ে যাওয়ার চেয়ে অনেক বেশি। তবু যদি কেউ আদালতের সমর্থনে আবির্ভূতও হন তাঁকে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নতুন ভোটারদের সমর্থন কাড়তে হবে। এত দিন বোর্ডের ভোট সংখ্যা ছিল ৩০। কাটাকুটির পর এখনও তিরিশেই দাঁড়িয়ে। তার মধ্যে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে পাঁচ নতুন ভোটার। মেঘালয়, মিজোরাম, মণিপুর, অরুণাচল প্রদেশ ও নাগাল্যান্ড। অনেকের ধারণা, প্রয়োজন পড়লে সৌরভ এই এলাকারও সমর্থন পাবেন।

সুপ্রিম কোর্টের কড়া নির্দেশের পর সমর্থনের আদৌ প্রয়োজন পড়বে কি না সেটাও দেখার। বলা হয়নি সৌরভের ২২ সেঞ্চুরির মধ্যে ১৮টায় ভারত জিতেছে।

Sourav Ganguly BCCI CAB
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy