ম্যাচটা চেন্নাই বনাম দিল্লি ডেয়ারডেভিলস দেখে হয়তো নিজেকে বলবেন, এই খেলায় আর মাঠে গিয়ে বা টেলিভিশনের সামনে বসে করবটা কী! কী হবে সে তো জানাই কথা। বরং ম্যাচের পিছনে সময় খরচ না করে সন্ধ্যায় কোথাও বেড়িয়ে আসি। কাল সকালে খবরের কাগজে বাকিটা পড়ে নেব!
গড়পড়তা আইপিএল ফ্যান খানিকটা এই ধরনেরই অটো-পাইলট মানসিকতায় চলেন। এরই মধ্যে যাঁরা যুবরাজ সিংহের খেলা দেখতে উৎসুক হয়ে আছেন, তাঁরা হয়তো স্রেফ ওকেই এক ঝলক দেখার জন্য টিভিতে খানিকক্ষণ চোখ রাখবেন। আবার ক্রিকেটের সূক্ষ্ম দিকগুলো নিয়ে যাঁদের বেশি আগ্রহ তাঁরা হয়তো অপেক্ষায় আছেন মহম্মদ শামি আর ইমরান তাহির বিশ্বকাপের তুলনায় নিজেদের বোলিং ট্যাকটিক্সে কোনও পরিবর্তন ঘটায় কিনা দেখতে। এঁরা জানতে চান, ভারতের কম বাউন্সের উইকেটেও কি শামি কয়েকটা ডেলিভারি ঠুকে তোলার চেষ্টা করবে? ঘূর্ণি পিচে তাহির কি আরও বেশি লুপ দেবে?
তবে ক্রিকেটকে যাঁরা থিয়েটার হিসাবে দেখেন, খেলাটা যাঁদের কাছে একটা সমৃদ্ধ শিল্প, তাঁদের জন্য আইপিএলের নতুন মরসুম মানে একেবারে টাটকা চিত্রনাট্য। কিছু নতুন মুখ, নতুন প্রতিভা আর চিন্তাভাবনার নতুনত্ব। স্টেজে বছর তিরিশ চলা ‘দ্য ফ্যানটম অব দ্য অপেরা’র মতো কোনও হিট নাটকের আর একটা শো নয়। একেবারে নতুন নাটক। যেখানে আইপিএলের মঞ্চে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে ছটফট করছে এক ঝাঁক নতুন মুখ।
ট্র্যাভিস হেড যেমন। ২০১২-য় প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক। আর তার মাত্র দু’বছরের মাথায় একুশ বছর বয়সেই দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার ক্যাপ্টেন! হেড-এর ব্র্যান্ড এনডোর্সমেন্টের লম্বা তালিকায় রয়েছে একটা আস্ত গল্ফ ক্লাব পর্যন্ত! অথচ এখনও পর্যন্ত প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট বা টি-টোয়েন্টিতে ছেলেটার কোনও সেঞ্চুরি নেই। ব্যাটিং গড়ও আহামরি কিছু নয়। তবু এই বাঁ-হাতিকেই ভবিষ্যতের তারকা বলে চিহ্নিত করে ফেলেছে অস্ট্রেলিয়া। আসলে স্টিভ স্মিথের উদাহরণ সামনে থাকায় অস্ট্রেলিয়ায় তরুণ প্রতিভারা খুব তাড়াতাড়ি নিজেদের প্রমাণ করার মঞ্চ পেয়ে যাচ্ছে।
আইপিএলের আর এক বিদেশি, কুইন্টন ডে ককের মতোই ট্র্যাভিস হেডও বাঁ-হাতি ওপেনার। আমার ধারণা এরা দু’জনে মিলে মজবুত ভিতটা গড়ে দিলে যুবরাজ, ম্যাথুজ আর জে পি দুমিনির বিস্ফোরক মিডল অর্ডার বড় রান তুলবেই। দিল্লি যদি শুরুটা ধারাবাহিক ভাবে ভাল করতে পারে, তা হলে ওদের অধের্ক কাজ ওখানেই হয়ে যাবে।
চেন্নাই টিমটাকে দেখে আবার মনে হতে পারে প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের বিশেষ কোনও এক্সক্লুসিভ ক্লাব, যার গেটে বিশাল করে ‘প্রবেশ নিষেধ’ টাঙানো। কিন্তু এই মনে হওয়াটা পুরোপুরি ঠিক নয়। কারণ চেন্নাই সুপার কিংসে কয়েকটা মরসুম খেলেই একদা অনামী মোহিত শর্মা আজ বিশ্বকাপের তারকা। চেন্নাই থেকে উঠে আসা আর এক নতুন প্রতিভা বলতে মনপ্রীত গোনির নামটাও মনে আসে। রবিচন্দ্রন অশ্বিন তো আছেই! নতুন মরসুমে এ বার রণিত মোরে, প্রত্যুষ সিংহ, পবন নেগিদের সামনে বড় ব্রেক। আশা করি এই নতুনরা সুযোগটা এমন ভাবে কাজে লাগাবে যে, এই কলামে ওদের নিয়ে বারবার লিখতে বাধ্য হই!
প্রত্যেকটা ছেলেই সবে কুড়ির কোঠায় পা রেখেছে। এবং ওদের প্রতিভায় ফ্র্যাঞ্চাইজিদের এতটাই আস্থা যে, বিশাল অঙ্কের টাকা দিয়ে নিয়েছে। মাত্র দু’মাসের পরিশ্রমের জন্য এমন দাম, যে টাকা ওদের বাবা-মা সম্ভবত সারা জীবনেও উপার্জন করতে পারেননি। পাশাপাশি আইপিএল খেলার অভিজ্ঞতাটাও হচ্ছে। এ বার সেটা কাজে লাগিয়ে ওরা ক্রিকেট বিশ্বকে চমকে দিতে পারে কি না, সেটাই দেখার। যদি পারে, তা হলে বুঝতে হবে ক্রিকেট বিশ্বে আইপিএলের ভূমিকাটা স্বীকৃতি পেল। তখন হয়তো আইপিএলের কট্টর সমালোচকদের কেউ কেউ-ও মত বদলাবেন!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy