Advertisement
E-Paper

টিম হোটেলে অভব্যতার জেরে শাস্তি পেতে চলেছেন অবিনাশ

দেশের অন্যতম প্রতিশ্রুতিমান ফুটবলার বলা হচ্ছে তাঁকে। আই এস এলের তিনটি ম্যাচে সেরা এমার্জিং ফুটবলারের পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি। উইনিং পাস বাড়ানোর জন্য হাবাসের পুণে টিমের বিরুদ্ধেও পেয়েছিলেন পুরস্কারমূ্ল্য।

রতন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:১৭

দেশের অন্যতম প্রতিশ্রুতিমান ফুটবলার বলা হচ্ছে তাঁকে।

আই এস এলের তিনটি ম্যাচে সেরা এমার্জিং ফুটবলারের পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি। উইনিং পাস বাড়ানোর জন্য হাবাসের পুণে টিমের বিরুদ্ধেও পেয়েছিলেন পুরস্কারমূ্ল্য।

তাঁর খেলা দেখে মুগ্ধ আটলেটিকো কোচ জোসে মলিনা তো বেশ কয়েকটি ম্যাচে সমীঘ দ্যুতির মতো উইঙ্গারকে বসিয়ে তাঁকে খেলিয়েছিলেন।

মোহনবাগান ছেড়ে ইস্টবেঙ্গলে আসার পর গত তিন বছরে লাল-হলুদ জার্সিতে কলকাতা লিগে বেশ কিছু গোল তো করেছেনই, আই লিগেও অনূর্ধ্ব ২২ ফুটবলার হিসাবে ইস্টবেঙ্গলের অন্যতম ভরসা বজবজ চড়িয়াল বাজারের ছেলেটি।

এ বার আমরা আই লিগ জেতার জন্য টিম করেছি।
টিমে কোনও শৃঙ্খলাভঙ্গের ঘটনা ঘটলে তা বরদাস্ত করা হবে না।

দেবব্রত সরকার

সেই অবিনাশ রুইদাসই গোয়ায় চার্চিলের বিরুদ্ধে ম্যাচ খেলতে গিয়ে টিম হোটেলের শৃঙ্খলাভঙ্গ করে বিতর্কে জড়ালেন। জুনিয়র এই ফুটবলারের আচরণে ট্রেভর জেমস মর্গ্যান এতটাই খেপে গিয়েছিলেন যে তাঁকে কলকাতায় ফেরত পাঠাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ফুটবলার তালিকায় আঠারো জনের তালিকায় অনূর্ধ্ব ২২ ফুটবলারের নাম থাকা বাধ্যতামূলক বলেই তাঁকে ফেরত পাঠাতে বারণ করেন কর্তারা। সাময়িক পরিস্থিতি সামাল দিলেও লাল-হলুদ কর্তারা পুরো ঘটনায় এতটাই ক্ষুব্ধ যে অবিনাশকে শাস্তি দিতে বদ্ধপরিকর তাঁরা। ফুটবল সচিব সন্তোষ ভট্টাচার্য বলে দিলেন, ‘‘কিছু একটা হয়েছে শুনেছি। ম্যানেজার এবং কোচের কাছ থেকে রিপোর্ট পাওয়ার পরই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব। কেউ দোষী হলে সে শাস্তি পাবেই।’’ আর ইস্টবেঙ্গলের শীর্ষকর্তা দেবব্রত সরকারের কঠোর মন্তব্য, ‘‘এ বার আমরা আই লিগ জেতার জন্য টিম করেছি। টিমে কোনও শৃঙ্খলা ভঙ্গের ঘটনা ঘটলে তা বরদাস্ত করা হবে না।’’

আই লিগ চ্যাম্পিয়নের লড়াইতে থাকা টিমের ক্ষতি হতে পারে ভেবে কর্তারা অবিনাশের নাম করে সরাসরি কিছু বলেননি। আসলে লিগ প্রস্তুতির মাঝেই দলের ফিজিও সাইমন মল্টবি দেশে চলে যাওয়ায় এমনিতেই অস্বস্তিতে লাল-হলুদ কর্তারা। তিনি ফিরে আসতে চাইলেও তাঁকে আর ফেরাতে চাইছেন না তাঁরা। অবিনাশ-বিতর্ক তাঁদের আরও সমস্যায় ফেলেছে। শোনা যাচ্ছে, বড় রকমের জরিমানা হতে চলেছে লাল-হলুদ উইঙ্গারের। ট্রেভর মর্গ্যান তাঁকে সাসপেন্ড করার কথা বললেও কর্তারা সেই পথে হাঁটতে নারাজ। ক্লাবের এক কর্তা বললেন, ‘‘ও যে কাজটা করেছে সেটা খুবই অন্যায়। টিমের শৃঙ্খলার পক্ষে ক্ষতিকর। সাসপেন্ড করলে তো বসে বসে মাইনে পাবে। তার চেয়ে জরিমানা করলে শাস্তিটা বেশি হবে। ওকে ডেকে আমরা ধমক তো দেবই, বোঝাবও। জুনিয়র ছেলে। চাই না ওর ভবিষ্যৎ নষ্ট হোক।’’ জোড়া অ্যাওয়ে ম্যাচ থেকে ছ’ পয়েন্ট নিয়ে এ দিনই শহরে ফিরেছেন ডিকা-হাওকিপরা। তার পরেও এই অশান্তি।

গোয়ায় চার্চিল ম্যাচের আগে ঠিক কী করেছিলেন বজবজের চড়িয়াল বাজার হাতি পাড়ার ছেলে? জানা গিয়েছে, ইস্টবেঙ্গলে খেলে যাওয়া গোয়ার দুই বন্ধু ফুটবলারের সঙ্গে সোমবার রাতে বেনোলিমে টিম হোটেলের পিছনের দরজা দিয়ে লুকিয়ে কোলভা সমুদ্র সৈকতে চলে যান অবিনাশ। বেশি রাতে ফেরেন মদ্যপ অবস্থায়। এসে বমি করেন বেশ কয়েক বার। ফলে ম্যাচের আগের দিন অর্থাৎ মঙ্গলবার অসুস্থতার জন্য অনুশীলনেই নামতে পারেননি অবিনাশ। তাঁকে দেখতে না পেয়ে ব্রিটিশ কোচ অবিনাশ কেন নেই তা জানতে চান তাঁর হোটেলের রুম পার্টনার নারায়ণ দাসের কাছে। নারায়ণের কাছে পুরো ঘটনা শোনার পর প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হন লাল-হলুদ কোচ। তিনি ফোন করেন ফুটবল সচিবকে। সঙ্গে থাকা টিম ম্যানেজারকে বলেন তাঁকে কলকাতায় ফেরত পাঠাতে।

রোগাসোগা চেহারার অবিনাশ সম্প্রতি চাকরি পেয়েছেন সিইএসসি-তে। তাঁর বাবা এখনও ফুটপাতে চর্মকারের কাজ করেন। বজবজে যে অ্যাকাডেমি থেকে অবিনাশ উঠে এসেছেন সেখানে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, এটিকের জার্সিতে আড়ম্বরের হোটেল-জীবন কাটিয়ে আসার পর এবং হাতে প্রচুর টাকা আসায় ইদানীং জীবনযাপনই বদলে ফেলেছেন দরিদ্র পরিবারের ছেলেটি। ইস্টবেঙ্গল হোটেলে অভব্যতা সেই জীবনেরই প্রতিফলন।

আট বছর আগে কলকাতা লিগের ডার্বিতে জোড়া গোল করে চমকে দিয়েছিলেন লালম পুইয়া। সেই সময়ের ‘নতুন ভাইচুং’ হারিয়ে গিয়েছিলেন দু’বছরের মধ্যেই। মদ তাঁকে শেষ করে দিয়েছিল। বাগান কর্তারা তাঁকে মদ ছাড়ানোর জন্য রিহ্যাবেও পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু কাজ হয়নি। অবিনাশ যাতে সে রকম হারিয়ে না যান সেই চেষ্টাই করছেন তাঁর সতীর্থরা। ক্লাব কর্তারাও। দেখার, গোয়ায় গিয়ে যে ভুল করেছেন অবিনাশ, সেটাই শেষ ‘ভুল’ হয় কি না!

Abhinas Ruidas Punishment
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy