Advertisement
E-Paper

মেয়েরা মাঠে এলেও দর্শক-স্বাচ্ছন্দ্য কোথায়

পর্যাপ্ত জল, পরিচ্ছন্ন বাথরুম, পরিষ্কার গ্যালারি এবং খাবারের দোকান। এটিকে বা অন্য কোনও ফ্র্যাঞ্চাইজির মাঠে গেলে দেখা যায় এগুলোর ব্যবস্থা দুর্দান্ত। সে জন্যই ক্লাবের আবেগ না থাকলেও পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে উৎসবের মেজাজে মাঠে আসেন দর্শক।

রতন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:৫১
দূরবস্থা: মোহনবাগান মাঠে গ্যালারির নীচে এ রকমই জঞ্জাল। —নিজস্ব চিত্র।

দূরবস্থা: মোহনবাগান মাঠে গ্যালারির নীচে এ রকমই জঞ্জাল। —নিজস্ব চিত্র।

ইন্ডিয়ান সুপার লিগ শুরুর সময় নীতা অম্বানী সব চেয়ে বেশি জোর দিয়েছিলেন দর্শক-স্বাচ্ছন্দ্যের উপর।

পর্যাপ্ত জল, পরিচ্ছন্ন বাথরুম, পরিষ্কার গ্যালারি এবং খাবারের দোকান। এটিকে বা অন্য কোনও ফ্র্যাঞ্চাইজির মাঠে গেলে দেখা যায় এগুলোর ব্যবস্থা দুর্দান্ত। সে জন্যই ক্লাবের আবেগ না থাকলেও পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে উৎসবের মেজাজে মাঠে আসেন দর্শক।

আইএসএল বনাম আই লিগ যুদ্ধের আবহে হঠাৎ-ই ক্লাবের আবেগে ভেসে ময়দানে মানুষের ঢল। সত্তর-আশি-নব্বই দশকের স্মৃতি ফেরাচ্ছে। গড়ে প্রতি ম্যাচে কুড়ি হাজার দর্শক আসছেন মাঠে। টিকিট না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন অনেকেই। লিগের ১২৮ বছরের ইতিহাসে সম্ভবত প্রথমবার দেখা যাচ্ছে মুখে রং মেখে, ক্লাবের জার্সি, হেয়ার ব্যান্ড, রিস্ট ব্যান্ড পরে আসছেন বহু মহিলা দর্শক।

কিন্তু মাঠে যাঁরা আসছেন তাদের জন্য ন্যূনতম স্বাচ্ছন্দ্যের ব্যবস্থাই তো নেই ময়দানে। বলা যায়, ‘নেই রাজ্যের বাসিন্দা’ হয়ে মাঠে খেলা দেখতে আসেন দর্শকরা। ইস্টবেঙ্গল সদস্যদের জন্য তবুও কিছু করেছে, মোহনবাগান কিছুই করেনি। ঘেরা মাঠের একটা অংশের দায়িত্ব রাজ্য সরকারের। তারাও উদাসীন ক্লাব কর্তাদের মতোই।

খাতায়-কলমে মোহনবাগানের কার্ডধারীর সংখ্যা সাড়ে সাত হাজারের মতো। মহিলা সদস্যা প্রায় তিনশো। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, সেখানে পুরুষদের জন্য পনেরো খোপের একটা মাত্র খোলা বাথরুম। ম্যাচের সময় প্রতি খোপে লম্বা লাইন পড়ে। মেয়েদের জন্য সেটুকুও নেই। জলের কল একটা। সদস্য গ্যালারিতে ঢোকার অনেক রাস্তায় ঝোপ। মাঠে ফ্লাডলাইট জ্বললেও গ্যালারির নীচে অন্ধকার, ভাঙাচোরা। অপরিষ্কারও। ফলে রাতে খেলা চলার সময় গড়ে অন্তত কুড়ি জন দর্শক ইটে ঠোক্কর খাচ্ছেন বা খোলা ড্রেনে পড়ে গিয়ে আহত হন রোজ। টিন-পিচ চটে ছাওয়া ক্যান্টিন চলে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে।

আরও পড়ুন

ইডেনে বাংলার হোম ম্যাচ নিয়ে সংশয়

ইস্টবেঙ্গলের সদস্য সংখ্যা সাড়ে নয় হাজার। যার মধ্যে মহিলা সদস্যা সাড়ে আটশোর মতো। ইস্টবেঙ্গলে ফ্লাড লাইট হয়নি এখনও। মাঠও সবুজ মখমলের মতো নয়।। ইস্টবেঙ্গল এ ব্যাপারে পিছিয়ে মোহনবাগানের থেকে। কিন্তু বয়স্কদের গ্যালারিতে ওঠার জন্য কর্তারা লিফট বসিয়েছেন। দারুণ ঝকঝকে কাফেটেরিয়া করেছেন। তবে সেখানেও আট খোপের ছেলেদের মাত্র একটা খোলা বাথরুম। লাইনও পড়ে বড়। ব্যতিক্রমও আছে। মেয়েদের সমস্যার কথা ভেবে আলাদা দু’টো বাথরুম করে দিয়েছেন কর্তারা। মেয়েদের ব্যবহারের জন্য একটি বিশেষ ঘরও আছে গ্যালারির নীচে। তবে প্রয়োজনের তুলনায় তা যে অপ্রতুল মানছেন কর্তারাও। জায়গার অভাবেই সমস্যা।

এ তো গেল ক্লাবের ভোটে অংশ নেওয়া কার্ডধারী সদস্য গ্যালারির কথা। কিন্তু দুই প্রধানের ঘেরে মাঠের যে অংশে টিকিট কেটে ঢোকেন বারো থেকে পনেরো হাজার দর্শক, তাঁদের অবস্থা ভয়াবহ। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি কোনও বাথরুম-ই নেই ওই অংশে। খেলার পর গ্যালারির নীচটা তাই দুর্গন্ধযুক্ত নর্দমা হয়ে যায়। কল আছে, সেখান দিয়ে নোংরা জল পড়ে। মাঠে ঢোকার রাস্তা ঝোপ, জমা জল আর সাপে ভর্তি। এই অংশটা দেখার কথা ময়দানের দায়িত্বে থাকা রাজ্য সরকারের পি ডব্লিউ ডি দফতরের।

সদস্য গ্যালারি বাদে যে বিশাল সমর্থককুল দীর্ঘক্ষণ লাইন দিয়ে খেলা দেখতে আসেন মাঠে, তাঁদের কথা ভাবেনই না ক্লাব কর্তারা। রাজ্য সরকারের মুখাপেক্ষী হয়েই তাঁরা বসে থেকেছেন বছরের পর বছর। রাজ্য সরকারের দেওয়া কোটি কোটি টাকায় গ্যালারি, ফ্লাডলাইট হয়েছে। কিন্তু টিকিট কেটে মাঠে ঢোকা বিশাল সমর্থকদের জন্য অস্থায়ী বাথরুম বা জলের ব্যবস্থা করার কথা ভাবা হয়নি। যে দর্শকরা টিমের জন্য গান করেন, আবির ওড়ান, জায়ান্ট স্ক্রিন লাগান, তাঁরা বরাবর ব্রাত্য থেকে গিয়েছেন ক্লাবের কাছে।

সবথেকে খারাপ অবস্থা মাঠে আসা মহিলা এবং বয়স্কদের। ১৯৬৯ সাল থেকে মোহনবাগান মাঠে আসছেন মঞ্জু ঘোষ। স্বামীর সঙ্গে প্রতিদিন তাঁকে বিকেলে দেখা যায় ক্লাবের লনে। এমনই প্যাশন। প্রাক্তন অঙ্কের শিক্ষিকা সত্তর ছোঁয়া মঞ্জুদেবী বলছিলেন, ‘‘আমি তো আগে একা আসতাম। এখন প্রচুর মেয়ে মাঠে আসছে। বাথরুম না থাকায় ছোট ছোট মেয়েদের যা সমস্যা হয় কী বলব। বাথরুম, জল না হলে মেয়েরা আসবে কেন?’’ মঞ্জুদেবীর চেয়ে বয়সে ছোট মলি গঙ্গোপাধ্যায়। ইস্টবেঙ্গলের খেলা দেখতে আসছেন প্রায় পনেরো বছর। মঞ্জু দেবির মতো তাঁর মুখে অবশ্য কোনও অভিমান নেই। বলছিলেন, ‘‘আমাদের মাঠে মহিলা সদস্যরা খেলা দেখতে এলে কোনও সমস্যায় পড়েন না। সব ব্যবস্থা আছে। কিন্তু দশ-পনেরো টাকার গ্যালারিতে টিকিট কেটে খেলা দেখতে আসা মেয়েদের খুব সমস্যা। ওখানে তো বাথরুমই নেই।’’

রঙিন গ্যালারি, দর্শকের ভিড়, জায়ান্ট স্ক্রিন। হইচই। সব হচ্ছে। কিন্তু দর্শক-স্বাচ্ছন্দ্যই যদি না থাকে, এই আলো কত দিন?

Football Mohun Bagan মোহনবাগান
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy