Advertisement
E-Paper

দেওয়াল লিখন স্পষ্ট, পড়তে হবে ধোনিকে

আগে থেকেই ঠিক হয়ে ছিল, ধোনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে যাবেন না। আনন্দবাজার প্রথম সেই ইঙ্গিত প্রকাশও করে। ভারতীয় সেনার প্যারাশুট রেজিমেন্টের সঙ্গে এখন দু’মাস ট্রেনিং করবেন ধোনি।

সুমিত ঘোষ 

শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৯ ০৪:০৭
পালাবদল: ধোনির জন্য  উৎসাহব্যঞ্জক বার্তা িমলল না সভায়।—ছবি পিটিআই।

পালাবদল: ধোনির জন্য উৎসাহব্যঞ্জক বার্তা িমলল না সভায়।—ছবি পিটিআই।

মহেন্দ্র সিংহ ধোনির ভবিষ্যৎ নিয়ে খুব একটা উজ্জ্বল কোনও ইঙ্গিত দিতে পারল না রবিবাসরীয় ওয়াংখেড়ে। সেই ওয়াংখেড়ে, যেখানে আট বছর আগে ছক্কা মেরে বিশ্বকাপ জিতিয়েছিলেন এমএসডি। তফাত হচ্ছে, সে দিন তিনি ছিলেন মাঠে ভারতের নীল জার্সিতে ক্যাপ্টেন কুল। আর এ দিন দল নির্বাচনী সভার কেন্দ্রীয় চরিত্র।

আগে থেকেই ঠিক হয়ে ছিল, ধোনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে যাবেন না। আনন্দবাজার প্রথম সেই ইঙ্গিত প্রকাশও করে। ভারতীয় সেনার প্যারাশুট রেজিমেন্টের সঙ্গে এখন দু’মাস ট্রেনিং করবেন ধোনি। টেরিটোরিয়াল আর্মির সাম্মানিক লেফ্টেন্যান্ট কর্নেল তিনি। কিন্তু এখন থেকেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করে দিয়েছে, দু’মাস পরে সেনা ছাউনি থেকে ফিরলে কী হবে তাঁর? ফের কি দেশের নীল জার্সিতে দেখা যাবে তাঁকে? রবিবার দল নির্বাচনী সভার পরে যা পরিস্থিতি, তাতে ধোনির জন্য খুব উৎসাহব্যঞ্জক বার্তা কিন্তু নেই।

বরং উল্টোটাই রয়েছে। দেওয়াল লিখন স্পষ্ট, এ বার তাঁকে সেটা পড়ে নিয়ে নিজের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এ দিন সভার পরে নির্বাচক কমিটির প্রধান এম এস কে প্রসাদকে সব চেয়ে বেশি প্রশ্নের সামনে পড়তে হয় ধোনিকে নিয়ে। প্রত্যাশা মতোই বেশির ভাগ প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন তিনি। কিন্তু তার মধ্যেও যে ভাবে ঋষভ পন্থকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন, তা থেকে পরিষ্কার, নির্বাচক কমিটি সামনের দিকে তাকাতে চাইছে। প্রসাদ এ দিন বলেছেন, ‘‘বিশ্বকাপ পর্যন্ত আমাদের এক রকমের পরিকল্পনা ছিল। এখন বিশ্বকাপের পরে আরও কিছু চিন্তাভাবনা এসে পড়েছে। আমরা ঋষভ পন্থকে তৈরি করার চেষ্টা করছি। ধোনির সঙ্গেও এ নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি।’’ নির্বাচক প্রধানের এই বক্তব্য যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। না বলেও তিনি পরিষ্কার বুঝিয়ে দিয়েছেন, পন্থকেই উত্তরসূরি বেছে নিয়ে তাঁরা ধোনি-পরবর্তী যুগের সূচনা করার কথা ভাবছেন। আর তাতেই দেওয়াল লিখন স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার কথা ধোনির সামনে।

আরও শোনা গেল, টিম ম্যানেজমেন্টেও আর আটত্রিশ বছরের ধোনির জন্য বিলাপ করার লোক খুব বেশি নেই। অধিনায়ক বিরাট কোহালি বরাবর ধোনির এক নম্বর ভক্ত ছিলেন। অধিনায়ক এবং তাঁর উত্তরসূরির মধ্যে এমন সুসম্পর্ক ভারতীয় ক্রিকেটে বিরল। ধোনি এবং কোহালির মধ্যে যা রয়েছে। এখনও ধোনিকে ‘আমার ক্যাপ্টেন’ সম্বোধন করেন কোহালি। এবং বলেন, সারা জীবনই এটা থেকে যাবে। এমনকী, বিশ্বকাপ পর্যন্তও নানা ঝড়-ঝাপ্টার মধ্যে ধোনির পাশে দাঁড়িয়েছেন কোহালি। কিন্তু বিশ্বকাপ-উত্তর নকশায় পরিবর্তন ঘটলে অবাক হওয়ার থাকবে না। ভারতের সামনে এখন দু’টো বিশ্বকাপের দল সাজানোর পরীক্ষা রয়েছে। দু’টোই টি-টোয়েন্টি। একটি সামনের বছর অস্ট্রেলিয়ায়, দ্বিতীয়টা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির জায়গায় ভারতে হবে ২০২০ সালের শেষের দিকে। এই দু’টি বিশ্বকাপে ধোনি নীল জার্সি পরে নামছেন, কেউ দেখতে পাচ্ছেন না। তাই নতুন প্রজন্মের ক্রিকেটারদের সুযোগ দিয়ে তৈরি করার নীতিই নিতে চলেছেন জাতীয় নির্বাচকেরা। সেই কারণেই ওয়েস্ট ইন্ডিজগামী কুড়ি ওভারের দলে এক ঝাঁক তরুণ এবং নতুন মুখ নেওয়া হয়েছে।

ওয়াশিংটন সুন্দর, দুই চাহার, ক্রুণাল পাণ্ড্য, খলিল আহমেদ, নবদীপ সাইনি, শ্রেয়স আইয়ার, মণীশ পাণ্ডে। সব মিলিয়ে প্রায় নতুন টিম। সিনিয়র বলতে আছেন বিরাট কোহালি (অধিনায়ক), রোহিত শর্মা (সহ-অধিনায়ক), কে এল রাহুল, শিখর ধওয়ন, রবীন্দ্র জাডেজা, ভুবনেশ্বর কুমার। যদিও এঁরা কেউ নন, ধোনির জন্য সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, ঋষভ পন্থের উজ্জ্বল উপস্থিতি। যে ভাবে তিনটি ফর্ম্যাটেই তাঁকে প্রধান উইকেটকিপার হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে, তাতেই পরিষ্কার, তিনিই এখন দস্তানা হাতে কোহালিদের দলের ভবিষ্যৎ। প্রভাবশালী মহলের এক জন এ দিন বলছিলেন, ‘‘ঋষভ পন্থ দুর্ধর্ষ এক প্রতিভা। ইতিমধ্যেই ইংল্যান্ড আর অস্ট্রেলিয়ায় দু’টো টেস্ট সেঞ্চুরি রয়েছে। আগামী দিনের কথা ভেবে ওকে গড়ে তুলতেই হবে। ধোনি কিংবদন্তি কিন্তু সকলকেই এক দিন যেতে হয়।’’

নির্বাচক প্রধান এ দিন বারবার বলতে থাকেন, ‘‘ধোনি নিয়ে আমাদের এক্ষুনি বিশেষ কিছু আলোচনা করার নেই। কারণ এই সিরিজে তো ও নিজে থেকেই সরে দাঁড়িয়েছে।’’ কিন্তু এর সঙ্গে বারবারই জুড়ে দিতে থাকেন, ‘‘আর আমরা তো তরুণদের তৈরি করার কাজও শুরু করে দিয়েছি।’’ ধোনির নিজেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর থেকে সরিয়ে নেওয়া নিয়েও দু’রকম তত্ত্ব শোনা যাচ্ছে। তিনি নিজেই নিজেকে সরিয়ে নিলেন না কি কোনও কঠোর বার্তা পৌঁছেছিল যে, সামনের দিকে তাকিয়ে দল গড়ার কথা ভাবা হচ্ছে। তাই হয় নিজে কিছু জানাও নয়তো বাদ যাওয়ার অপমান সহ্য করার জন্য তৈরি থাকো। ভারতীয় ক্রিকেটে এমন ঘটনা কিন্তু বিরল নয়। অতীতে অনেক নামী ক্রিকেটারের জন্য এই ফর্মুলায় সম্মানজনক বিদায়ের পথ তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সেই সব ক্রিকেটারদের অধিনায়কের নাম ছিল মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। ভাগ্যের এমনই পরিহাস যে, আজ তিনি মুদ্রার উল্টো দিকে।

যদি ধোনি নিজে থেকে অবসর না নেন? প্রশ্ন শুনে প্রভাবশালী মহলের এক জনের জবাব, ‘‘তা হলে বল নির্বাচকমণ্ডলীর কোর্টে। তাঁদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং ওঁরা কঠোর সিদ্ধান্ত নিলে অবাক হব না।’’ দ্রুত তিনি যোগ করছেন, ‘‘তবে মনে হয় না মাহি সেটা করবে। হয়তো ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের মাঝপথেই ও চরম সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করে দেবে।’’

অতীতে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো মহাতারকা এবং প্রাক্তন অধিনায়ক দল থেকে বাদ পড়ে ফের নিজেকে ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রমাণ করে ফিরে এসেছেন। জন কোলাহল থেকে দূরে নিজেকে ক্রিকেট সাধনায় ডুবিয়ে দিয়েছিলেন সৌরভ। আটত্রিশের ধোনি সেনা ছাউনিতে গিয়ে প্যারাশুট ট্রেনিং করতে পারেন কিন্তু বাদ পড়লে ঘরোয়া ক্রিকেটে নিজেকে ফের প্রমাণ করার ঝক্কি নেবেন কি? পারবেন কি সৌরভের মতো বিজনেস ক্লাসের আরাম ছেড়ে লো কস্ট এয়ারলাইন্স ধরতে? গ্যালারির বন্দনা পেতে পেতে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়া এক মহাতারকা পারবেন কি সৌরভের মতো ফাঁকা মাঠে খেলে সেঞ্চুরি করে ফিরে আসতে? ফিরে আসার রাস্তা ধরতে চাইলে এ সব দিকই ভেবে দেখতে হবে ধোনিকে।

কী করবেন তিনি?

লাইন অফ কন্ট্রোলের কাছে কোথাও প্যারাশুট নিয়ে লাফিয়ে পড়তে পড়তেই হয়তো সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলবেন লেফ্টেন্যান্ট কর্নেল!

Cricket West Indies India BCCI Mahendra Singh Dhoni
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy