Advertisement
E-Paper

আইজলের দ্বাদশ ব্যক্তি নেমে পড়ল

আই লিগে মোহনবাগান বনাম আইজল এফসি ম্যাচে বল গড়ানোর আটচল্লিশ ঘণ্টা আগেই যেন শুরু হয়ে গেল ‘ম্যাচ’!

শুভজিৎ মজুমদার

শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৭ ০৩:৩৬
সমর্থন: প্র্যাকটিসে হাজির আইজল সমর্থকরা। —নিজস্ব চিত্র।

সমর্থন: প্র্যাকটিসে হাজির আইজল সমর্থকরা। —নিজস্ব চিত্র।

আই লিগে মোহনবাগান বনাম আইজল এফসি ম্যাচে বল গড়ানোর আটচল্লিশ ঘণ্টা আগেই যেন শুরু হয়ে গেল ‘ম্যাচ’!

বৃহস্পতিবার বিকেল চারটেয় মুয়ালপুইয়ে রাজীব গাঁধী স্টেডিয়ামে অনুশীলন করার কথা ছিল সনি নর্দে, কাতসুমি ইউসা-দের। কিন্তু আইজলের টিমবাসে করে তাঁরা স্টেডিয়াম পৌঁছলেন প্রায় এক ঘণ্টা দশ মিনিট পরে। সবুজ-মেরুন শিবিরের অভিযোগের তির আইজলের দিকেই। এক শীর্ষ কর্তা বললেন, ‘‘আমরা যাতে অনুশীলন করতে না পারি তার জন্যই বাসচালক ঘুরপথে স্টেডিয়ামে নিয়ে এসেছেন।’’ আইজল কর্তাদের যুক্তি, ‘‘ওদের টিম হোটেল থেকে যে রাস্তাটা সরাসরি স্টেডিয়ামে পৌঁছয়, সেটা দিয়ে বাস যাতায়াত করতে পারে না। এই কারণেই অন্য রাস্তা দিয়ে ওদের নিয়ে আসা হয়েছিল।’’ অথচ অনুশীলন শেষ করে মিনিট কুড়ির মধ্যেই টিম হোটেলে ফেরেন সনি-রা!

একে তো বাস-বিভ্রাটে ঘণ্টাখানেক সময় নষ্ট হয়েছে। তার উপর মোহনবাগানের ফুটবলাররা স্টেডিয়ামে পৌঁছনোর সঙ্গে সঙ্গেই আইজল সমর্থকরা যে ভাবে ড্রাম বাজিয়ে, পতাকা উড়িয়ে উল্লাস করতে শুরু করলেন, তাতে মনে হবে যেন এ দিনই আই লিগে চ্যাম্পিয়ন হয়ে গিয়েছে তাঁদের দল। এখানেই শেষ নয়। মোহনবাগান কোচ সঞ্জয় সেন অনুশীলন করার পরে নিঃশব্দে কয়েকজন আইজল সমর্থক গিয়ে স্কোরবোর্ডটা বদলে দিয়ে এলেন।

তাতে লেখা থাকল, আইজল এফসি-৩ মোহনবাগান-০! ম্যাচের দু’দিন আগেই যেন বার্তা দিয়ে রাখলেন, তোমরা যত অনুশীলনই করো না কেন আইজল জিতবে ৩-০ গোলে! অনুশীলন করতে করতে যা দেখে আরও তেতে গেলেন সনি-রা। ওয়ার্ম-আপের পর মিনিট পনেরো ম্যাচ প্র্যাক্টিস করতে না করতেই সন্ধে নেমে এল। এদুয়ার্দো পাহিরা, প্রীতম কোটাল-রা ‘কুল ডাউন’ করতে শুরু করে দিয়েছিলেন। কিন্তু সনি অন্ধকারের মধ্যেই ড্যারেল ডাফি ও কাতসুমি ইউসা-কে নিয়ে ফ্রি-কিক প্র্যাক্টিস করে গেলেন। হাইতি তারকার অভিব্যক্তিই যেন বদলে গিয়েছে। ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে ডার্বির আগে থেকেই তেতে ছিলেন। এ দিন আইজল সমর্থকদের উল্লাস দেখে ভিতরে ভিতরে যেন ফুটতে শুরু করে দিয়েছেন। অপেক্ষা শুধু বিস্ফোরণের!

মোহনবাগান কোচ অবশ্য আশ্চর্যরকম ভাবে নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করছিলেন। বাস-বিভ্রাটে অনুশীলনের পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়া নিয়ে সঞ্জয় সেন বললেন, ‘‘এরকম তো হতেই পারে। অভিযোগ করতে চাই না। তা ছাড়া ফুটবলাররাও ক্লান্ত ছিল। ওদের হাল্কা প্র্যাক্টিস করানোর পরিকল্পনাই করেছিলাম।’’

কিন্তু মোহনবাগান ফুটবলারদের ওপর চাপ বাড়াতে আইজল সমর্থকদের উল্লাস? সঞ্জয় বললেন, ‘‘আইজলের সমর্থকরা তো এরকম করবেই। আমার ভালই লাগছিল ড্রামের বাজনা শুনে। আর আমাদের সমর্থকরা কী করে সে তো সকলেই জানে!’’ সঙ্গে যোগ করলেন, ‘‘মাঠের বাইরে কী হচ্ছে তা নিয়ে ভাবার প্রয়োজন নেই।’’ সবুজ-মেরুন কোচের ধৈর্যের বাঁধ অবশ্য ভেঙে গেল ম্যাচের ফল নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণীতে। টিম বাসে প্রাক্তন অধিনায়ক ও ফুটবল সচিব সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের পাশে বসে সঞ্জয়ের হুঙ্কার, ‘‘কোনও কিছুই আমার চোখ এড়িয়ে যায়নি। কিন্তু এ ভাবে আমাদের দমিয়ে রাখা যাবে না। এ বছর আশা করছি কেউ আটকাতে পারবে না। চ্যাম্পিয়ন হওয়া ছাড়া অন্য কোনও কিছু নিয়ে ভাবছি না।’’

গত বছর আইজলের কাছে হেরেই আই লিগে খেতাবের দৌড় থেকে ছিটকে গিয়েছিল মোহনবাগান। এই মরসুমে ঘরের মাঠে এখনও পর্যন্ত অপরাজিত খালিদ জামিলের দল। মোহনবাগান কোচ জানিয়ে দিলেন, অতীত নিয়ে একেবারেই ভাবতে চান না। সঞ্জয় বললেন, ‘‘এএফসি কাপের ম্যাচ বাদ দিলে আমরাও কিন্তু এখনও পর্যন্ত ঘরের মাঠে অপরাজিত।’’ ডার্বি জয়ের প্রসঙ্গ টেনে বললেন, ‘‘শিলিগুড়িতে মোহনবাগান কখনও ইস্টবেঙ্গলকে হারাতে পারে না বলা হচ্ছিল। সেই মিথ কিন্তু আমরা ভেঙে দিয়েছি।’’ শনিবার আইজলের বিরুদ্ধে জিতলে এক ম্যাচ বাকি থাকতে আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাবে মোহনবাগান। ড্র করলে অবশ্য শেষ ম্যাচ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

সঞ্জয় স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, জেতাই একমাত্র লক্ষ্য। বললেন, ‘‘ড্র নিয়ে ভাবছিই না। আমি কখনও ড্র করার জন্য খেলি না। ফুটবলাররা কেউ চায় না শেষ ম্যাচ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে। ওরা আইজল থেকেই চ্যাম্পিয়ন হয়ে ফিরতে চায়।’’

Football Aizawl F.C. I-League Mohun Bagan
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy