দেশের মাটিতে পা রাখার আগেই রাফায়েল নাদালের স্পেনের বিরুদ্ধে ডেভিস কাপের অতি কঠিন টাই নিয়ে বিতর্ক লাগিয়ে দিলেন আমেরিকায় থাকা ভারতীয় টেনিস দলের নন-প্লেয়িং ক্যাপ্টেন আনন্দ অমৃতরাজ। বিদেশ থেকে সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিজয় অমৃতরাজের দাদা বলে দেন, ভারত নিজেদের ঘরের মাঠে নৈশালোকের স্বস্তিতে স্পেনকে খেলতে দিচ্ছে দেখে তিনি অবাক! ১৯৭৪ ও ১৯৮৭, দু’বার দেশের হয়ে ডেভিস ফাইনাল খেলা আনন্দের কাছে এআইটিএ-র এহেন সিদ্ধান্ত ‘দুর্ভাগ্যজনক’। একইসঙ্গে তাঁর অভিযোগ, ঘরের মাঠে এই গুরুত্বপূর্ণ ওয়ার্ল্ড গ্রুপ প্লে-অফ টাইয়ের জায়গা ও সারফেস বাছাইয়ের আগে দেশের টেনিস ফেডারেশন জাতীয় দলের কারও সঙ্গে আলোচনা করেনি।
যা ২০১৩-এ ভারতীয় প্লেয়ারদের ‘বিদ্রোহে’র পর থেকে নিয়ম মতো এআইটিএ করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সময় দু’তরফের মধ্যে আলোচনার পরে কর্তারা মেনে নিয়েছিলেন, এর পর থেকে ডেভিস কাপে হোম ম্যাচের জায়গা ও সারফেস ঠিক করা হবে ভারতীয় দলের ক্যাপ্টেনের সঙ্গে আলোচনা করে। অধিনায়কই জাতীয় প্লেয়ারদের সঙ্গে সে ব্যাপারে কথা বলে ফেডারেশনকে জানাবেন। তার পর এআইটিএ ভেনু নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
এআইটিএ-র সদ্য নির্বাচিত মহাসচিব হিরণ্ময় চট্টোপাধ্যায় ভারতীয় দলের ক্যাপ্টেনের অভিযোগ কার্যত মেনে নিয়েছেন। জানিয়েছেন, সত্যিই ক্যাপ্টেন বা প্লেয়ার কারও সঙ্গে ফেডারেশনের তরফে কেউ আসন্ন এই টাইয়ের খেলা শুরুর সময় নিয়ে কথা বলেনি। উল্লেখ্য, আগামী ১৬-১৮ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লির আর কে খন্না স্টেডিয়ামের হার্ডকোর্টে ভারত-স্পেন টাইয়ের প্রথম ও শেষ দিন সিঙ্গলস ম্যাচ শুরু হবে বিকেল পাঁচটায়। আর মাঝের দিন ডাবলস শুরু সন্ধে সাতটায়।
আনন্দ অবশ্য মনে করেন, ভারতের উচিত ছিল নাদালদের যথাসম্ভব বেশি গরম আর প্যাচপ্যাচে পরিবেশের মধ্যে কোর্টে নামানো। ‘‘আমার সঙ্গে ম্যাচ শুরুর সময় নিয়ে কোনও আলোচনা করা হয়নি। আমি নিশ্চিত আমার টিমের প্লেয়ারদের সঙ্গেও এআইটিএ কথা বলেনি এ ব্যাপারে। রোহনকে (বোপান্না) তো আমি বলার আগে ও জানতই না। আমিও কী বলব, আমেরিকায় বসে ডেভিস কাপের ওয়েবসাইট দেখে প্রথম ব্যাপারটা জানতে পেরেছি!’’ বলেন তিনি। সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘আমরা সাধারণত গরমের মধ্যে খেলতে পছন্দ করি। সে জায়গায় মাঝ সেপ্টেম্বরের সন্ধেতে ম্যাচ হওয়া মানে স্প্যানিশদের সুবিধে দিয়ে দেওয়া।’’
আনন্দ ভেবে কষ্ট পাচ্ছেন যে, সাধারণ ধারণা যেটা— স্পেন এতটাই শক্তিশালী, ভারতীয়দের কাছে দুপুর আর সন্ধে যে কোনও সময় খেলাই প্রায় সমান, সেটাকেই যেন দেশের টেনিস কর্তারা মর্যাদা দিচ্ছেন। ‘‘এটা দুর্ভাগ্যজনক। কারণ, উচিত ছিল নিজেদের ঘরের মাঠে আমাদের টিমকে যতটা বেশি সম্ভব সুবিধেজনক পরিস্থিতি দেওয়া। সেটা সারফেস, খেলার সময়— সব কিছু হতে পারে। এটা ডেভিস কাপ। এই টুর্নামেন্টে যে কোনও অপ্রত্যাশিত রেজাল্ট ঘটতে পারে,’’ দাবি তাঁর। দলের ক্যাপ্টেনের বিস্ফোরক মন্তব্যের সমর্থনে বোপান্নাও জানিয়ে দিয়েছেন, স্পেন টাইয়ের সারফেস বা খেলা শুরুর সময় নিয়ে এআইটিএ-র কেউই তাঁর সঙ্গে আলোচনা করেননি।
এআইটিএ-র নতুন মহাসচিব আবার বলেছেন, তাঁদের ইচ্ছে ছিল নাদালের স্পেনকে এ দেশে ঘাসের কোর্টে ফেলা। কিন্তু বছরের এই সময়টায় বর্ষা চলায় কলকাতার নাম প্রথমেই বাতিল হয়ে যায়। চণ্ডীগড়ে আন্তর্জাতিক মানের ঘাসের কোর্ট থাকলেও একটু বৃষ্টিতেই সারফেস শুকোতে অনেক সময় লেগে যায়। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক টেনিস সংস্থার নিয়মে ওয়ার্ল্ড গ্রুপ প্লে-অফ টাইয়ের স্টেডিয়ামে ন্যূনতম ৪০০০ দর্শকের আসন থাকতে হয়। যেটা দিল্লি বাদে চেন্নাই, মহারাষ্ট্র আর বেঙ্গালুরুতে আছে। কিন্তু শেষ দু’টো রাজ্য টেনিস সংস্থা এই টাইয়ের আয়োজনে তাদের অক্ষমতা জানিয়েছে। চেন্নাইয়ের কর্তা কার্তি চিদম্বরম আবার জানিয়ে দেন, দেশের একমাত্র এটিপি টুর্নামেন্ট চেন্নাই ওপেন প্রতি বছর করে তহবিলে টান পড়ে। তার উপর ডেভিস কাপের দায়িত্ব নিলে লাভের বদলে বরং ক্ষতিই হবে।
হিরণ্ময় এ দিন বলেন, ‘‘বাস্তব পরিস্থিতিটাও মাথায় রাখতে হবে। এর আগে কোরিয়া টাইয়ে চণ্ডীগড়ের গরমে আমাদের সাকেত মিনেনি আর রামকুমার রামনাথন এমন ক্র্যাম্প ধরিয়ে বসেছিল যে, ফিরতি সিঙ্গলসে বোপান্নাকে খেলাতে বাধ্য হয়েছিল ক্যাপ্টেন। আমাদের প্লেয়ারদের প্রচণ্ড গরম আবহাওয়ার সঙ্গে যোঝার মতো শারীরিক ভাবে শক্তিশালী হওয়া দরকার। আমরা দিল্লিতে ফ্লাডলাইটে স্পেন টাই খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমাদের প্লেয়ারদের স্বার্থের কথা ভেবেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy