Advertisement
E-Paper

শত সাফল্যেও পা মাটিতে থাকবে, মাকে কথা খেলার দুনিয়ার সেরা বাঙালির

ছড়ানো পার্কের সামনে লাল বর্ডারের হলুদ বাড়িটার দোতলার বারান্দায় তিন উদ্বিগ্ন মুখ। বেঙ্গালুরুর বিমান কলকাতায় মাটি ছুঁয়েছে সেই কোন বেলা একটায়! অথচ ঘড়ির কাঁটা তখন আড়াইটা ছুঁই ছুঁই। যাঁদের জন্য পথ চাওয়া, সেই নাতি এবং নাতবৌ কেন সল্টলেকের বাড়িতে পৌঁছলেন না, সেটাই ভাবাচ্ছে দাদু-দিদাকে। এবং মামিমাকে।

মহাশ্বেতা ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৫ ০২:৪৮
মায়ের আদর। শুক্রবার মামাবাড়িতে অনির্বাণ। —নিজস্ব চিত্র।

মায়ের আদর। শুক্রবার মামাবাড়িতে অনির্বাণ। —নিজস্ব চিত্র।

ছড়ানো পার্কের সামনে লাল বর্ডারের হলুদ বাড়িটার দোতলার বারান্দায় তিন উদ্বিগ্ন মুখ। বেঙ্গালুরুর বিমান কলকাতায় মাটি ছুঁয়েছে সেই কোন বেলা একটায়! অথচ ঘড়ির কাঁটা তখন আড়াইটা ছুঁই ছুঁই। যাঁদের জন্য পথ চাওয়া, সেই নাতি এবং নাতবৌ কেন সল্টলেকের বাড়িতে পৌঁছলেন না, সেটাই ভাবাচ্ছে দাদু-দিদাকে। এবং মামিমাকে।

অধীর আটাত্তর বছরের দিদিমা স্মৃতি সেন। বলেই ফেললেন, ‘‘রান্নাবান্না করে বসে আছি। কখন যে আসবে, কখন খাবে! বিকেলে আবার অনুষ্ঠান। আমি চাই ছেলেটা অন্তত একটা ঘণ্টা একটু বিশ্রাম পাক!’’ আমেরিকার উইসকনসিনে পিজিএ চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতীয় গল্ফকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেওয়ার পর থেকে বহির্বিশ্ব, স্পনসর আর প্রচারমাধ্যমের নানা দাবি তাঁদের আদরের বড় নাতিকে ঘিরে রেখেছে। অন্তত একটা দিন ছিনিয়ে নিয়ে তাঁকে একান্ত নিজেদের মতো পেতে চান ওঁরা। দাদু, চিকিৎসক নিমাই সেন তিরাশির ঋজু ব্রিগেডিয়ার। আফসোস করলেন, ‘‘পুরো দু’বছর পর আসছে, কিন্তু গোটা একটা দিনও থাকবে না! কালই ফিরে যাবে!’’

এরই মধ্যে এসে দাঁড়াল গাড়ি। মামাবাড়ির সামনে নামলেন সস্ত্রীক অনির্বাণ লাহিড়ী। খেলার দুনিয়ার সেরা বাঙালি। এবং নেমেই বাড়ি ঢোকার আগে ফুটপাথে দাঁড়িয়ে পড়তে হল সাক্ষাৎকার দিতে।

বিমান সংস্থার ভুলে অনির্বাণের গল্ফ কিট এ দিন কলকাতার বদলে চলে গিয়েছিল বাগডোগরা। যা ফিরে পাওয়ার অপেক্ষাতেই অত দেরি।

অনির্বাণের স্ত্রী ঈপ্সা বাড়ি ঢুকে জড়িয়ে ধরলেন মামিমা শ্রেয়া সেনকে। তার পর উপরে উঠে গেলেন দাদু-দিদাকে প্রণাম করতে। বিয়ের পর নাতবৌয়ের প্রথম কলকাতায় আসা নিয়ে দারুণ উৎসাহিত যাঁরা।

গল্ফ তারকার মা, নবনীতা বিমানবনন্দর গিয়েছিলেন ছেলে ও পুত্রবধূকে আনতে। সেখানেও মিডিয়া সামলাতে হয়েছে একপ্রস্ত। তবে বাড়িতে পা দিয়ে যেন একটু স্বস্তি পেলেন। ‘‘এ বার মনে হচ্ছে ছেলের সঙ্গে কথা বলার একটু সুযোগ পাব!’’ অসম্ভব সপ্রতিভ নবনীতা ছেলের এই সাফল্যে মোটেই আশ্চর্য নন। ‘‘বরং আমি মনে করি ও এত দিনে সেই জায়গাটা পেল, যার ও যোগ্য।’’

দোতলার খোলা ছাদে যত্নে সাজানো বাগান, পরিপাটি অন্দরমহলের দেওয়ালে যামিনী রায়, মিশরের পটচিত্র থেকে আধুনিক শিল্পসৃষ্টি। শৃঙ্খলাটাও বোঝা যায়। অনির্বাণের দুই মামাতো ভাইবোন এমন দিনেও স্কুলে ফাঁকি দেয়নি। পরিবারের প্রত্যেকে উচ্চশিক্ষিত। স্মৃতি দেবী বলছিলেন, ‘‘ছেলে গল্ফ খেলতে চায় শুনে একটু ধাক্কাই লেগেছিল। বলেছিলাম, সে কী! খেলে সবাই কি আর সচিন তেন্ডুলকর হয়? কিন্তু ঈশ্বর অনির্বাণকে সেই ভাগ্য দিয়েছেন!’’

নিজের খেলার শিখরে পৌঁছনোর পাশে সচিনের সঙ্গে অনির্বাণের আর এক মিল, পা দু’টো শক্ত করে মাটিতে থাকায়। মাকে তিনি কথা দিয়েছেন, শত সাফল্যেও পা মাটিতেই থাকবে।

এ দিনও নীল জিনস কালো টি-শার্টে সফরের ক্লান্তি নিয়ে বললেন, ‘‘সবচেয়ে গর্বের বিষয়, অবশিষ্ট বিশ্ব দলের হয়ে প্রেসিডেন্টস কাপ খেলব। তবে পিজিএ চ্যাম্পিয়নশিপ অতীত। আমি সামনে এগোতে চাই।’’ সামনে লক্ষ্য, পরের মরসুমের পিজিএ কার্ড আর মাস্টার্সে খেলার যোগ্যতা অর্জন। মাঝে দু’সপ্তাহের বিশ্রাম। তার পরে আমেরিকা যাবেন খেলতে। ফিরে অক্টোবরে দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রেসিডেন্টস কাপ। ‘‘তার পর এশীয় ট্যুরে খেলব মরসুমের শেষ পর্যন্ত।’’

ক্লান্ত। তবু হাসিমুখে ছবির পোজ দিলেন। তার পর বিদায় জানিয়ে উঠে গেলেন দাদু-দিদার কাছে।

গল্ফের ‘মেজর’কে অবশেষে কাছে পেল তাঁর পরিবার।

abpnewsletters Anirban Lahiri sport sachin tendulker
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy