Advertisement
E-Paper

সোনার মেয়ে অঙ্কুশিতাই টুর্নামেন্ট সেরা

বক্সিং নিয়ে এমনিতেই মানুষের আগ্রহ কম। মেরি কমের সৌজন্যে বক্সিং শিরোনামে এলেও ফের ঝিমিয়ে পড়েছিল মুষ্টিযুদ্ধের টান। বিশ্ব যুব মহিলা বক্সিংয়ের আসর গুয়াহাটিতে বসার পরেও আইএসএলের মতো গ্ল্যামার ছিল না তাঁর।

রাজীবাক্ষ রক্ষিত

শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৭ ২৩:০৬
৬৪ কেজি বিভাগে সোনা জেতার পরে অঙ্কুশিতার সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল, ক্রীড়ামন্ত্রী নবকুমার দোলে। —নিজস্ব চিত্র।

৬৪ কেজি বিভাগে সোনা জেতার পরে অঙ্কুশিতার সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল, ক্রীড়ামন্ত্রী নবকুমার দোলে। —নিজস্ব চিত্র।

অসমের শোণিতপুর জেলার একেবারে অনামা গ্রামটার কথা দেশ তো দূরের কথা রাজ্যের মানুষই সে ভাবে জানতেন না। কিন্তু রবিবারের বিকেলটা যেন পাঁচ বছর আগের মণিপুরের কাংথেই কম আর লাংগোল গেমস ভিলেজের ছবিটাই অবিকল তুলে এনেছিল ঢেকিয়াজুলির দরিদ্র গ্রাম মেঘাইজারনিতে। ঘরের মেয়ে অঙ্কুশিতা বড়োর সোনার লড়াই ক্রমেই পিছোচ্ছিল। অধৈর্য হয়ে পড়ছিল মেঘাইজারনি। শেষ পর্যন্ত রাত সাড়ে 8টা নাগাদ, গুয়াহাটির নবীনচন্দ্র বরদলৈ স্টেডিয়ামে রাশিয়ার ডিমিক একতেরিনাকে হারিয়ে যখন দুই মুঠো উপরে তুলল ১৭ বছরের মেয়েটা, গোটা গ্রাম, মহকুমা, জেলা থেকে রাজ্য ফেটে পড়ল আনন্দে।

বক্সিং নিয়ে এমনিতেই মানুষের আগ্রহ কম। মেরি কমের সৌজন্যে বক্সিং শিরোনামে এলেও ফের ঝিমিয়ে পড়েছিল মুষ্টিযুদ্ধের টান। বিশ্ব যুব মহিলা বক্সিংয়ের আসর গুয়াহাটিতে বসার পরেও আইএসএলের মতো গ্ল্যামার ছিল না তাঁর। কিন্তু ঘরের মেয়ে অঙ্কুশিতা যে ভাবে অপ্রতিরোধ্য গতিতে একের পর এক প্রতিপক্ষকে পরাজিত করতে থাকেন, তাতে নড়েচড়ে বসেন রাজ্যবাসী। খবর নেওয়া শুরু হয় বক্সিংয়ের। বাউট, রিং, রাউন্ড, পয়েন্টের হিসেব-নিকেশ নতুন করে শিখতে শুরু করেন অসমবাসী।

অঙ্কুশিতা ফাইনালে ওঠার পরে বক্সিং দেখার টিকিট চেয়ে হাহাকার শুরু হয়। মেঘাইজারনিতে ভিড় করেন সাংবাদিকরা। হরিয়ানার চার কন্যা জ্যোতি, শশী, নীতু, সাক্ষীরা একে একে সোনা জেতার পরে চাপ যেন আরও বেড়ে যায় মেঘাইজারনির দরিদ্র পরিবারের মেয়ে অঙ্কুশিতার উপরে। রুপোর পদকে যেন মন ভরছিল না। রাজ্য জুড়ে শুরু হয় প্রার্থনা-পুজো।

সদ্য অধিগ্রহণ হওয়া ভেঞ্চার প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক পিতা রাকেশকুমার বড়ো, মা রঞ্জিতা বড়োদের অবস্থা নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর মতোই। ২০১২ সালে মেরি লন্ডনে ব্রোঞ্জ জিতলেন আর ঢেকিয়াজুলির অঙ্কুশিতাও জেদ ধরলেন বক্সিং করবেন। প্রথমে গোলাঘাট, পরে গুয়াহাটির ‘সাই’তে তাঁর প্রশিক্ষণ শুরু হয়। পরের বছরই রাজ্য পর্যায়ে পদক আসে।

এ দিন অঙ্কুশিতার খেলা দেখতে স্টেডিয়ামে হাজির হন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ, এনইইউএফসি দলের মালিক অভিনেতা জন আব্রাহামরা। গ্রামের মানুষের মুখে গর্বের সঙ্গে ক্ষোভও। এমন চাঁদের হাট যদি প্রশিক্ষণের সময় আরও একটু সাহায্যের হাত বাড়াত, তবে হয়ত অঙ্কুশিতা আরও ভাল তৈরি করতে পারত নিজেকে।

সোনা জেতার পরেই অকাল দেওয়ালি শুরু মেঘাইজারনি গ্রাম-সহ গোটা জেলায়। গর্বের আরও বাকি ছিল তখনও। শুধু ৬৪ কিলো বিভাগে সোনাই নয়, গোটা টুর্নামেন্টের সেরা বক্সার হিসেবেও অঙ্কুশিতাকেই বেছে নেন বিচারকরা। সোনায় সোহাগা পেয়ে আহ্লাদে আটখানা গ্রামের মানুষ মোটরবাইক নিয়ে মিছিল বের করেন। রাত, হাড়কাঁপানো ঠান্ডা— সব ভুলে বাইক বাহিনীর গ্রাম প্রদক্ষিণ চলে। রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে শুরু হয় উৎসব। অঙ্কিতার মা বলেন, “আমার মেয়ে আর শুধু আমার পরিবার বা মেঘাইজারনির কন্যা নয়। ওঁ এখন গোটা রাজ্যের, সারা দেশের মেয়ে।”

মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল বলেন, “অঙ্কুশিতা অসমকে বিশ্বের বক্সিং মানচিত্রে প্রতিষ্ঠা করলেন। ভবিষ্যতের মেরি কমের ছায়া রয়েছে অঙ্কুশিতার মধ্যে। রাজ্য সরকার ওঁর উন্নতিতে, প্রশিক্ষণে সব রকম সাহায্য করবে।” বিপিএফ বিধায়ক চন্দন ব্রহ্ম নিজের দু’মাসের বেতন অঙ্কুশিতাকে উপহার দেন। বিটিসি প্রধান হাগ্রামা মহিলারি অঙ্কুশিতার জন্য পাঁচ লক্ষ টাকার পুরস্কার ঘোষণা করেন।

সব মিলিয়ে পাঁচটি সোনা, ২টো ব্রোঞ্জ পেয়ে ভারত টুর্নামেন্টে সেরা। পরের স্থানে মাত্র দুটো সোনা নিয়ে রাশিয়া। রাত যত বাড়ে, মেঘাইজারনিতে সুর তুলতে থাকে বাগাড়ুম্বা (বড়োদের নাচ-গান)। আজ আর ঘুম নয়। সারা রাত চলবে উৎসব। আর বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অঙ্কুশিতা জানিয়ে দিলেন, পরের লক্ষ্য ২০১৮ সালের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ। এশিয়াড। এবং অবশ্যই অলিম্পিক পদক। ‘অসমের মেরি কম’ (এই নামেই সবাই ডাকছেন এখন অঙ্কুশিতাকে) অবশ্য বলছেন, সবে যাত্রা শুরু করেছি। অলিম্পিকে কোয়ালিফাই করতে হলেও অনেক খাটতে হবে, উন্নতি করতে হবে।

Boxing Ankushita Boro AIBA Women's Youth World Boxing Championships অঙ্কুশিতা বড়ো
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy