ইডেনে ক্যারিবিয়ান হাওয়া। প্র্যাকটিসে গেইল।ছবি-শঙ্কর নাগ দাস
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ছোট-বড় যে ক’টা দেশ নামছে, তাদের কাপ-যাত্রার রূপরেখা আঁকতে বসলে একটা টিমে এসে খটকা লাগবে।
টুর্নামেন্টের প্রাক্ লগ্নে স্কোয়াডের তেরো জন বিদ্রোহ ঘোষণা করে দেন দেশের বোর্ডের বিরুদ্ধে। দু’পক্ষের অতি-তিক্ত সম্পর্কের প্রেক্ষিতে নতুন জট আদৌ খুলবে কি না, নিশ্চয়তা ছিল না। বিশ্বকাপে অনুপস্থিতির জন্য এই একটা কারণই বোধহয় যথেষ্ট। কিন্তু রাস্তায় আরও বিবিধ প্রতিবন্ধকতা অপেক্ষা করে ছিল।
দলের প্রধান স্পিন-অস্ত্রের উপর আইসিসির নির্বাসনের খাঁড়া ঝুলছে। তিনি নাম তুলে নিলেন। অন্যতম ম্যাচ উইনারের চোট, সরে যেতে হল তাঁকে। আর এক ভারী নাম বোর্ডের সঙ্গে সমঝোতার পথে হাঁটলেন না। অগত্যা ভারতের বিমানে ওঠা হল না তাঁরও।
দেশের নাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এত কিছুর পরেও যারা টি-টোয়েন্টি বিশ্ব-মুকুটের দৃপ্ত দাবিদার। তার চেয়েও আশ্চর্যের, এত কিছুর পরেও যাদের ক্যালিপসো একই রকম ছন্দময়।
ভক্তদের সঙ্গে স্যামির সেলফি।
ক্লাইভ লয়েডের কড়া নজরদারি বাদ দিলে যাদের নেটে গাম্ভীর্য নয়, থাকে ঠাট্টা-ইয়ার্কি। ডারেন স্যামির শট সজোরে পশ্চাতদেশে এসে লাগলে বোলার ব্র্যাভো প্রথমে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন, পরক্ষণে ওঠে অট্টহাস্যের রোল। ক্রিস গেইল নেটে নেমেই আগে গ্যালারির দিকে ব্যাট দেখানো ঝালিয়ে নেন। প্রেক্ষাপট না জানলে দেখে বোঝার উপায় নেই, সপ্তাহদুয়েক আগেও এই টিমটা কী অবস্থায় ছিল।
‘‘আমরা তো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতেই চাই। সবাই চায় সব কিছু মসৃণ ভাবে হয়ে যাক। আমাদের ক্ষেত্রে সেটা হয়নি। কিন্তু কিছু করার নেই। তাই ও সব না ভেবে আমরা চাই মাঠে যতটা পারি দিতে,’’ টিম হোটেলে সকালে সাংবাদিক সম্মেলনে কিছুটা দুঃখ করে বলছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক ডারেন স্যামি।
তাঁদের সাম্প্রতিক অতীত ঘাঁটলে স্যামির দুঃখটা খুব স্বাভাবিক লাগবে। শ্রীলঙ্কায় ২০১২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক স্যামি-সহ তেরো জনের স্কোয়াডকে ক্যারিবিয়ান বোর্ড যে চুক্তি ধরিয়েছিল, অবাক হয়ে যাওয়ার মতো। অতীতে বড় টুর্নামেন্ট খেলে যে অর্থ পেয়েছেন তাঁরা, এই চুক্তির অঙ্ক তার চেয়ে অনেক কম। সঙ্গে কার্যত হুমকি, চুক্তি না মানলে বিশ্বকাপ খেলতে পাঠানো হবে দ্বিতীয় সারির টিম। তাতে দেশের মর্যাদা ধুলোয় লুটোলে, লুটোক।
দেশের কথা ভেবে অল্প অঙ্কের চুক্তিতেই সই করেন গেইলরা। ডারেন ব্র্যাভো ছাড়া বাকি সবাই মেনে নেন বোর্ডের শর্ত। দায়সারা ভাবে নয়, যথোপযোগী মর্যাদায় কাপ-প্রস্তুতিতে নেমে পড়ে গোটা টিম। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ‘এ’ নয়, বিশ্বকাপ ক্যাম্প করতে দুবাই পাড়ি দেয় প্রায় পুরো শক্তির ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সুনীল নারিন আর কায়রন পোলার্ডের বদলি হিসেবে ডেকে নেওয়া হয় অ্যাশলি নার্স এবং কার্লোস ব্রেথওয়েটকে।
‘‘বিশ্বকাপটা খুব তাৎপর্যের। এই ট্রফিটা জিতলে তার আলাদা একটা মূল্য থাকবে আমাদের কাছে, আমাদের দেশের কাছে। বিশেষ করে এখন আমাদের দেশে ক্রিকেটের যা অবস্থা, সেই প্রেক্ষিতে,’’ বলছিলেন স্যামি। বিশ্বকাপের আগে যিনি টিমকে খুব সহজ, এক শব্দের একটা বার্তা দিয়েছেন— ক্রিকেট। ‘‘সবাইকে বলে দিয়েছি, একবার মাঠে নেমে পড়লে কারও মাথায় যেন চুক্তি বা ও রকম কোনও চিন্তা না ঘোরে। একটাই ভাবনা নিয়ে নামব— দেশকে গর্বিত করতে হবে। আমরা সবাই প্রস্তুত।’’
সবই চলছে ম্যানেজার ক্লাইভ লয়েডের কড়া নজরদারিতে।
দুবাইয়ের ক্যাম্পে সমুদ্রসৈকতের সেশন আর ডেজার্ট সাফারি যদি প্রস্তুতির বাহ্যিক দিক হয়, তো টিমের অন্দরকে তাতাচ্ছে আরও দুটো চিন্তা। এক, বাংলাদেশে গত মাসে অনূর্ধ্ব ১৯ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিশ্বকাপ জয়। আর দুই, বিশ্বক্রিকেটে ক্যারিবিয়ান কর্তৃত্বের ইতিহাস।
স্যামির দর্শন এ রকম, ‘‘ক্রিকেট হল সেই আঠা যা গোটা ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জকে ঐক্যবদ্ধ করে রেখেছে। তাই যে কোনও টিম জিতলেই দেশের মানুষ দারুণ আনন্দ করেন। অনূর্ধ্ব ১৯ টিম আমাদের কাছে অনুপ্রেরণা। আমরাও ওদের মতো দেশকে আনন্দ দিতে চাই। আর সেটা করার একমাত্র রাস্তা হল, ৩ এপ্রিল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ট্রফিটা জেতা।’’ তাঁর মন্তব্য, ‘‘আমার দেশ প্রায় সতেরো বছর বিশ্বক্রিকেটে কর্তৃত্ব করে গিয়েছে। এখন সেটা আমরা টি-টোয়েন্টিতে করছি। আমাদের টিমে পনেরো জন ম্যাচ-উইনার রয়েছে।’’
ভারতের পরিবেশের সঙ্গে টিমের আশি ভাগের পরিচিতি, ক্রিস গেইল-আন্দ্রে রাসেল-স্যামুয়েল বদ্রির মতো টি-টোয়েন্টি বিশেষজ্ঞে বোঝাই প্রথম এগারো, লয়েড-কার্টলি অ্যামব্রোজের মতো সাপোর্ট স্টাফ। রান্নাটা দেরিতে শুরু করলে কী হবে, মশলার অভাব নেই ক্যারিবিয়ান রান্নাঘরে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy