Advertisement
E-Paper

রাজকীয় সেঞ্চুরিতে প্রত্যাবর্তন স্মিথের

বৃহস্পতিবারের এজবাস্টনে স্টিভ স্মিথ সত্যিই কোনও যোদ্ধার চেয়ে কম ছিলেন না। তাঁর ‘শত্রু’ তো শুধু স্টুয়ার্ট ব্রড, ক্রিস ওকস বা ইংল্যান্ডের অন্য কোনও বোলার ছিলেন না। তিনি লড়াই করেছিলেন তাঁর গায়ে লাগা বল বিকৃত কাণ্ডের কলঙ্ক মুছে ফেলতে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৯ ০৪:০৯
দুরন্ত: ফিরে আসার লড়াইয়ে সেঞ্চুরি করে স্মিথের উচ্ছ্বাস। তাঁর ১৪৪ রানে শুরুর ধাক্কা এড়াল অস্ট্রেলিয়া। এএফপি

দুরন্ত: ফিরে আসার লড়াইয়ে সেঞ্চুরি করে স্মিথের উচ্ছ্বাস। তাঁর ১৪৪ রানে শুরুর ধাক্কা এড়াল অস্ট্রেলিয়া। এএফপি

ক্যানভাসে শিল্পীর তুলির টানের মতো ব্যাটটা এক বার বুলিয়ে দিলেন বলের উপরে। সবুজ ঘাস চিরে বিদ্যুতের শিখার মতো লাল গোলাটা কভার বাউন্ডারিতে আছড়ে পড়া মাত্র ব্যাটটা আকাশের দিকে তুলে ধরলেন তিনি। যেন অতীতের কোনও এক নাইট তাঁর শত্রুকে পরাস্ত করে তলোয়ারটা শূন্যে তুলে ধরেছেন।

বৃহস্পতিবারের এজবাস্টনে স্টিভ স্মিথ সত্যিই কোনও যোদ্ধার চেয়ে কম ছিলেন না। তাঁর ‘শত্রু’ তো শুধু স্টুয়ার্ট ব্রড, ক্রিস ওকস বা ইংল্যান্ডের অন্য কোনও বোলার ছিলেন না। তিনি লড়াই করেছিলেন তাঁর গায়ে লাগা বল বিকৃত কাণ্ডের কলঙ্ক মুছে ফেলতে। তিনি লড়াই করেছিলেন এক বছর বাদে আবার টেস্ট ক্রিকেটে ফিরে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে। তিনি লড়াই করেছিলেন ধসে যাওয়া অস্ট্রেলিয়া ব্যাটিংকে একটা সম্মানজনক স্কোরে পৌঁছে দিতে।

শুষ্ক পরিসংখ্যান বলছে, স্মিথ এ দিন ২১৯ বলে ১৪৪ করেছেন। মেরেছেন ১৬টি চার এবং দুটি ছয়। পরিসংখ্যান আরও বলছে শেষ দুই উইকেটে পিটার সিডল এবং নেথান লায়নকে সঙ্গে নিয়ে স্মিথ যোগ করেন ১৬২ রান! ১২২ রানে আট উইকেট পড়ে যাওয়ার পরে দলকে তিনি পৌঁছে দেন ২৮৪ রানে। এই পরিসংখ্যানও চমকে দেওয়ার মতো। কিন্তু নিছক পরিসংখ্যানে মাপা যাবে না এই সেঞ্চুরিকে। স্মিথের এই ফিরে আসার লড়াই নিঃসন্দেহে জায়গা করে নেবে ক্রিকেটের বীরগাথায়। তাঁর ২৪তম সেঞ্চুরি হয়ে থাকবে বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ইনিংস।

স্মিথের লড়াই দেখতে দেখতে মাইকেল ভনের টুইট, ‘‘টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে অন্যতম সেরা ইনিংস। টেস্টে ফিরে এসেই নিজের প্রথম ইনিংসে এই রকম ব্যাটিং, ভাবা যায় না।’’ মুগ্ধ বীরেন্দ্র সহবাগ লিখেছেন, ‘‘কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে কী ইনিংসটা খেলে গেল স্মিথ। টেস্ট ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান।’’ গভীর রাতে শেন ওয়ার্ন লেখেন, ‘‘স্মিথের জন্য দারুণ লাগছে। রুট বাধ্য হয়েছিল প্রতিটা ফিল্ডারকে বাউন্ডারি লাইনে রাখতে। সাহস, দৃঢ়তা আর দক্ষতা ধরা পড়েছে ওর ইনিংসে।’’ এ তো গেল ক্রিকেট মহলের প্রশংসা। ইংল্যান্ডের প্রাক্তন ফুটবলার গ্যারি লিনেকারের টুইট, ‘‘কোনওমতে চোখের জল ধরে রাখতে হচ্ছে। স্টিভ স্মিথ! কী অসাধারণ ক্রিকেটার।’’

দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে বল বিকৃতি ঘটিয়ে নির্বাসিত হয়েছিলেন ক্রিকেট থেকে। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ফিরলেও এটাই ছিল সেই কলঙ্কিত ঘটনার পরে তাঁর প্রথম টেস্ট। এ দিন অস্ট্রেলিয়া দলে স্মিথের নাম ঘোষণা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এজবাস্টনের দর্শকরা বিদ্রুপ করেছেন। টস জিতে ব্যাটিং নেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক টিম পেন। ইংল্যান্ডের জিমি অ্যান্ডারসন মাত্র চার ওভার বল করে চোট পেয়ে বেরিয়ে যান। কিন্তু এক বোলার কম নিয়েও ব্রড (৫-৮৬) এবং ওকসের (৩-৫৮) সামনে ভেঙে পড়ে অস্ট্রেলিয়া। সেখান থেকে স্মিথের সেঞ্চুরি। যে সেঞ্চুরির পরেও দর্শকদের একাংশ বিদ্রুপ করেছে। কিন্তু সেই সংখ্যাটা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। ‘শত্রু’ গ্যালারিও উঠে দাঁড়িয়ে কুর্নিশ করেছে বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম সেরা এই ব্যাটসম্যানকে।

এ বারের অ্যাশেজ অনেক কারণেই ঐতিহাসিক। এই ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া সিরিজ থেকেই শুরু হয়ে গেল বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ। এই অ্যাশেজ থেকেই টেস্ট ক্রিকেটে চালু হল জার্সি নম্বর। আর এই ঐতিহাসিক অ্যাশেজকে প্রথম দিনেই চিরস্মরণীয় করে রাখলেন এক তিরিশ বছরের যুবক।

এজবাস্টনে স্টিভ স্মিথ শুধু নিজেই জিতলেন না। জিতিয়ে দিলেন ক্রিকেটকেও।

Cricket The Ashes 2019 Australia England Steve Smith
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy