Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
সিরিজ জয়ের দিনে ধুন্ধুমার

অধিনায়কের হয়ে জিমিকে পাল্টা দিয়ে এলেন অশ্বিন

বিরাট কোহালির দেশে এসে বিরাট কোহালি নিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করলে কী হয়, নির্ঘাৎ মজ্জায়-মজ্জায় টের পচ্ছেন জেমস অ্যান্ডারসন! জিমি অ্যান্ডারসন দেখে নিলেন, বিরাট কোহালি নিছক কোনও ভারতীয় ব্যাটসম্যানের নাম নয়।

চেতন নারুলা
মুম্বই শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৪:১৫
Share: Save:

বিরাট কোহালির দেশে এসে বিরাট কোহালি নিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করলে কী হয়, নির্ঘাৎ মজ্জায়-মজ্জায় টের পচ্ছেন জেমস অ্যান্ডারসন!

জিমি অ্যান্ডারসন দেখে নিলেন, বিরাট কোহালি নিছক কোনও ভারতীয় ব্যাটসম্যানের নাম নয়। তাঁর টেকনিক নিয়ে বিতর্কিত কথা বলা মানে নিজের উপর সমালোচনার কষাঘাত ডেকে আনা। আর সে সব সমালোচক শুধুমাত্র ভারতীয় নয়, বিদেশিও। গ্রেম স্মিথ কিন্তু কোনও ভারতীয় ক্রিকেটার নন!

জিমি অ্যান্ডারসন দেখে নিলেন, ভারত অধিনায়ককে টেকনিক নিয়ে আক্রমণ করলে চরম প্রত্যাঘাত নিজের উপরেও আসতে পারে। ‘কোহালি ভারতের মাটিতে বাঘ’ বললে প্রতিশোধ নিতে ছুটে আসতে পারেন কোনও এক রবিচন্দ্রন অশ্বিন। উত্তপ্ত ভাবে বলতে পারেন, জিমি, হারকে মেনে নিতে শেখো। বিরাট নিয়ে এ সব তুমি বলতে পারো না।

ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ভারত অতীতে বহু টেস্ট সিরিজ জিতেছে, ভবিষ্যতেও জিতবে। কিন্তু এ দিনের মুম্বই কোথাও গিয়ে একটু আলাদা হয়ে থাকল। কারণ, সাম্প্রতিক কালে সম্ভবত এই প্রথম সিরিজ জয় নিয়ে বিশেষ কথাবার্তা হল না। পুরোটাই ঘুরে গেল কোহালি বনাম অ্যান্ডারসন বির্তকের দিকে।

অনুরাগ ঠাকুর, গ্রেম স্মিথ, অ্যালিস্টার কুক, রবিচন্দ্রন অশ্বিন—সবাই জড়িয়ে গেলেন অ্যান্ডারসন বনাম কোহালি বিতর্কে! ভারতীয় বোর্ড প্রেসিডেন্ট তির্যক ভাবে বলে দেন, ‘‘খিসিয়ানি বিল্লি খাম্বা নোছে!’’ হিন্দি প্রবাদ। যার অর্থ, নিজের অক্ষমতা ঢাকতে না পেরে ক্ষিপ্ত হয়ে পড়া! গ্রেম স্মিথ খোঁচা দিয়ে টুইট করেন, ‘জিমি তুমি কি তা হলে শুধু ইংলিশ কন্ডিশনেই বল করতে পারো?’ সোশ্যাল মিডিয়ায় গোটা দিন এটা নিয়ে হাজার-হাজার শব্দ খরচ চলেছে। অশ্বিন অবশ্য শব্দ খরচ করেননি। সোজা কাজে নেমে পড়েছেন!

ইংল্যান্ডের শেষ চারটে উইকেট পড়া নিয়ে নাটকের নামগন্ধ ছিল না। আট ওভারেই টেস্ট শেষ। নাটক শুরু হয় অ্যান্ডারসন ক্রিজে নামামাত্র। আচমকাই দেখা যায়, অ্যান্ডারসনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন অশ্বিন। কিছু একটা বলছেন। এটুকু বোঝা যাচ্ছিল যে, কোনও মধুর সম্ভাষণ চলছে না। এর কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে হাজির হন কোহালি। আম্পায়াররাও ঢুকে পড়েন আগুন নেভাতে।

আসলে রবিবার অ্যান্ডারসনের মহা-বিতর্কিত মন্তব্যের পরই আন্দাজ করা যাচ্ছিল যে, আজ তা আরও বড় চেহারা নেবে। গতকাল কোহালি নিয়ে অ্যান্ডারসন বলে দেন যে, ভারত অধিনায়কের টেকনিকে কতটা উন্নতি হয়েছে, তা নিয়ে তিনি নিশ্চিত নন! কারণ ভারতীয় উইকেটে ইংল্যান্ডের মতো মুভমেন্ট আর গতি নেই। পিচ টেকনিকের ভুলত্রুটি ঢেকে দিচ্ছে।

সোজা অর্থ— কোহালি, তুমি ভারতীয় উইকেটের বাঘ। পরীক্ষা তোমার ইংলিশ উইকেটে হবে।

অ্যান্ডারসন যে এ রকম অগ্নিকাণ্ড বাধিয়ে দিয়েছেন, এ দিন সকালের আগে নাকি জানতেনই না কোহালি। মাঠে অশ্বিন তাঁকে ব্যাপারটা বলেন। কোহালি হেসে উড়িয়েও দেন। কিন্তু অশ্বিনকে থামানো যায়নি। চলতি সিরিজে স্পিনের যে বিষে ইংরেজ ব্যাটিংকে ছারখার করে চলেছেন, ঠিক একই মেজাজে তিনি মুখোমুখি হন অ্যান্ডারসনের।

‘‘অশ্বিন কিন্তু গালাগালি দেয়নি। আপনারা তো জানেন খারাপ কথা ব্যবহার না করেও কী ভাবে ও শোনাতে পারে,’’ পরে সাংবাদিক সম্মেলনে বলছিলেন কোহালি। যিনি উত্তেজিত মেজাজে নয়, অ্যান্ডারসন-অশ্বিন ঝামেলা মেটাতে আবির্ভূত হন পরিত্রাতার রূপে। ইংরেজ পেসারকে বলেও দেন, যা হয়েছে হয়েছে। এ বার সামনে এগনো ভাল। ‘‘এই প্রথম মাঠে কোনও ঝামেলা আমি মেটাতে গেলাম। ও যা বলেছিল, তা নিয়ে অশ্বিন বেশ তেতে ছিল। আমি হেসে উড়িয়ে দেওয়াতেও ও ছাড়েনি,’’ বলতে থাকেন কোহালি। যা শুনে সাংবাদিক সম্মেলনে হাসাহাসি শুরু হয়ে যায়। কোহালি এর পর যোগ করেন, ‘‘অশ্বিন ওকে বলেছে যে হারকে মানতে শেখো। একটাও খারাপ কথা ব্যবহার করেনি। পরে জেমসকে বললাম, এ সব ছেড়ে সামনের দিকে তাকাও।’’

তবে কোহালি একটা কাজ করেছেন। কারও নাম না করে পাল্টা শুনিয়ে রেখেছেন। বলে দিয়েছেন, তাঁর টিম জানে কী ভাবে হার মেনে নিতে হয়। ‘‘আমরা কখনও কোনও কিছু নিয়ে অভিযোগ করি না। বরং নিজেদের ভুলত্রুটি খুঁজে বার করে উন্নতির চেষ্টা করি। হার মেনে নিতে জানি আমরা।’’

অ্যালিস্টার কুক সাংবাদিক সম্মেলনে দুঃখ করে বললেন যে, একটা ঘটনায় মুম্বই টেস্টের শেষটা টক-টক হয়ে গেল। তিনি বলছিলেন, ‘‘জিমি যা বলেছে, তা অনেক বাড়িয়ে লেখা হয়েছে। ও একটা তথ্যের কথা বলেছে। যেটা হয়তো বিরাটও স্বীকার করবে। ভারতীয়রা অধিনায়কের পাশে দাঁড়াতে যা করল, এতটারও দরকার ছিল না। মুম্বই টেস্টের শেষটা খারাপ হল। যে স্পিরিটে সিরিজটা খেলা হচ্ছিল, তা মাথায় রাখলে তো বটেই।’’

কুক সিরিজের স্পিরিটকে ‘এত দিন ভাল ছিল’ বলার চেষ্টা করলেন ঠিকই, কিন্তু সত্যি তো সেটা নয়। এর আগে বেন স্টোকসের সঙ্গে কোহালির লেগেছে। এ বার অ্যান্ডারসন ভারত অধিনায়ক নিয়ে আলটপকা মন্তব্য করেছেন, কোহালির হয়ে অশ্বিন শুনিয়ে এসেছেন।

আসলে ভারত এখন ইটের বদলে আবার পাটকেল ছুড়ছে। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় জমানার পর ভারতীয় ক্রিকেটে যা অদৃশ্য ছিল!

ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংস: ৪০০। ভারত প্রথম ইনিংস: ৬৩১। ইংল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংস (আগের দিন ১৮২-৬): বেয়ারস্টো এলবিডব্লিউ অশ্বিন ৫১, বাটলার ন.আ. ৬, ওকস বো অশ্বিন ০, রশিদ ক লোকেশ বো অশ্বিন ২, অ্যান্ডারসন ক উমেশ বো অশ্বিন ২, অতিরিক্ত ১৯, মোট ১৯৫। পতন: ১, ৪৩, ৪৯, ১৪১, ১৮০, ১৮২, ১৮৫, ১৮৯, ১৯৩। বোলিং: ভুবনেশ্বর ৪-১-১১-১, উমেশ ৩-০-১০-০, জাডেজা ২২-৩-৬৩-২, অশ্বিন ২০.৩-৩-৫৫-৬, জয়ন্ত ৬-০-৩৯-১।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Confrontation R Ashwin Anderson Mumbai Test
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE