Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
পেলে, মারাদোনার চেয়ে এগিয়ে থাকতেই পারে
Football

মেসির জাদুতে শেষ আটে বার্সেলোনা, সামনে লেয়নডস্কিদের দুরন্ত বায়ার্ন

পেলে, মারাদোনার চেয়ে লিয়োনেল মেসি কোনও অংশে পিছিয়ে নেই। বার্সেলোনা তারকা বরং এগিয়ে থাকতেই পারে।

রাজকীয়: চ্যাম্পিয়ন্স লিগে অনবদ্য গোলে মন্ত্রমুগ্ধ করে দিয়ে উৎসব মেসির। ছবি: এপি।

রাজকীয়: চ্যাম্পিয়ন্স লিগে অনবদ্য গোলে মন্ত্রমুগ্ধ করে দিয়ে উৎসব মেসির। ছবি: এপি।

সুব্রত ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০২০ ০৭:৪৪
Share: Save:

বার্সেলোনা ৩ • নাপোলি ১
(দুই ম্যাচ মিলিয়ে বার্সা ৪-২ জয়ী)

বিশ্বকাপ জয়ই শ্রেষ্ঠত্বের পরিচয়, আমি অন্তত তা মনে করি না।

পেলে, দিয়েগো মারাদোনার সঙ্গে ইয়োহান ক্রুয়েফ, জর্জ বেস্ট, জিকো, মিশেল প্লাতিনিকেও মানুষ চিরকাল মনে রাখবেন। এই কারণেই পেলে, মারাদোনার চেয়ে লিয়োনেল মেসি কোনও অংশে পিছিয়ে নেই। বার্সেলোনা তারকা বরং এগিয়ে থাকতেই পারে।

এক জন ফুটবলারের কাছে সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল মানুষের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা। ভারতীয় ফুটবলের উদাহরণ দিলেই বিষয়টা স্পষ্ট হয়ে যাবে। বলরামদা (তুলসীদাস) ও চুনীদা (গোস্বামী) দু’জনেই কিংবদন্তি ফুটবলার ছিলেন। কিন্তু দৃষ্টিনন্দন ফুটবলের কারণে জনপ্রিয়তায় অনেক এগিয়ে ছিলেন চুনীদা। মানুষ মাঠে আসেন সুন্দর ফুটবল দেখতে। এই মুহূর্তে মেসি
সুন্দর ফুটবলের মুখ।

শনিবার রাতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ ষোলোয় দ্বিতীয় পর্বে নাপোলির বিরুদ্ধে মেসি বলটা ধরেই কাট করে নাপোলির পেনাল্টি বক্সের মধ্যে ঢুকে পড়ে। তিন জনকে কাটিয়ে মাটিতে পড়ে যেতে যেতে দ্বিতীয় পোস্ট দিয়ে বল জালে জড়িয়ে দেয়। ও জানত বলের থেকে শরীরের যা দূরত্ব ছিল সেই সময়, তাতে পা ছোঁয়ালেই বলটা বাঁক খেয়ে গোলে ঢুকে যাবে। অনবদ্য গোল। এখানেই মেসির সঙ্গে অন্যদের পার্থক্য। বাকিরা ভারসাম্য হারিয়ে মাটিতে পড়ে যেতে যেতে গোল লক্ষ্য করে শট নেওয়ার ঝুঁকি নিত না।

শুধু গোল করা নয়, আক্রমণের কৌশল থেকে ড্রিবল— মেসির সব কিছুর মধ্যেই নতুনত্ব রয়েছে। ওর খেলার মধ্যে শক্তি কম শৈল্পিক ব্যাপারটা অনেক বেশি। পেলে ও মারাদোনার সঙ্গে মেসির মূল পার্থক্য খেলার ধরনে। আমার মতে মেসির লড়াইটা অনেক কঠিন। পেলে পাশে পেয়েছিলেন গ্যারিঞ্চা, ডিডির মতো একঝাঁক কিংবদন্তিকে। মারাদোনার ছিল বুরুচাগা, ক্যানিজিয়ার মতো সতীর্থ। জাভি, ইনিয়েস্তা চলে যাওয়ার পরে এখন মেসিকেই একা সব করতে হচ্ছে।

পেলে, মারাদোনার ড্রিবলিংয়ে আগ্রাসন অনেক বেশি থাকত। মারাদোনা মাঝমাঠ থেকে বল ধরে প্রচণ্ড গতিতে বিপক্ষের চার-পাঁচ জনকে কাটিয়ে গোল করতেন। পেলেকেও আমরা এ রকম প্রচুর গোল করতে দেখেছি। ৭৭ সালে ইডেনে কসমসের বিরুদ্ধে পেলের এই রূপই দেখেছি।

মেসিকে খুব কমই দেখা যায় মাঝমাঠে নেমে বল ধরে বিপক্ষের বক্সে ঢুকে পড়তে। বার্সা তারকা মূলত বলটা ধরে বিপক্ষের পেনাল্টি বক্সের কাছাকাছি অঞ্চলে। তার পরে ডিফেন্ডারদের কাটিয়ে ঠান্ডা মাথায় বল জালে জড়িয়ে দেয়। শনিবার রাতে নাপোলির বিরুদ্ধে ঠিক এ ভাবেই গোলটা করেছিল মেসি।

ক্যাম্প ন্যু-তে ম্যাচ শুরুর আগে অনেক বার্সা সমর্থকই উৎকণ্ঠায় ছিলেন। কারণ, প্রথম পর্বে নাপোলিকে বিশ্ববিখ্যাত করা মারাদোনার পুরনো ক্লাবের ম্যানেজার জেন্নারো গাত্তুসোর রণকৌশলে খেলতেই পারেনি মেসি। তার উপরে বার্সার অন্দরমহলের টালমাটাল অবস্থা। আমি কিন্তু মেসিদের জয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত ছিলাম। ১০ মিনিটে ক্লমঁ লংলের গোলে এগিয়ে যায় বার্সা। ২৩ মিনিটে গোল করে মেসি। তারকারা এই ধরনের ম্যাচকেই বেছে নেয় নিজেদের প্রমাণ করার মঞ্চ হিসেবে। দুর্ভাগ্য হ্যান্ডবলের জন্য ওর দ্বিতীয় গোলটা বাতিল হয়ে যাওয়ায়। প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার ঠিক আগে পেনাল্টি থেকে ৩-০ করে লুইস সুয়ারেস। কিছু ক্ষণের মধ্যে পেনাল্টি থেকেই ব্যবধান কমায় নাপোলির লোরেঞ্জো ইনসিনিয়া।

আমি নিশ্চিত, নাপোলির সমর্থকেরাও মেসির এই গোল দেখে মুগ্ধ। এখানেই এক জন ফুটবলারের সাফল্য। সঙ্গীত, সাহিত্য ও শিল্পের মতো মেসিও সর্বজনীন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE