Advertisement
০২ মে ২০২৪

৫৩ ওভার বাকি তবু ড্রয়ের সন্ধি বাংলার

শনিবারের এই ঘটনার পরে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, কেন বাংলা ছয় পয়েন্টের জন্য ঝাঁপাবে না?

নিষ্ফল: অন্ধ্র ইনিংস শেষ। মাঠ ছাড়ছেন রামনরা। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

নিষ্ফল: অন্ধ্র ইনিংস শেষ। মাঠ ছাড়ছেন রামনরা। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৪:২৯
Share: Save:

ঘড়ির কাঁটায় একটা বেজে চল্লিশ মিনিট। ঝকঝকে আকাশ। দুই দলের অধিনায়ক মাঠের মধ্যে আলোচনা করে আম্পায়ারের কাছে গিয়ে হাত মেলালেন। স্টাম্পের বেল তুলে ম্যাচের ইতি টানলেন আম্পায়ার। তিন পয়েন্ট নিয়ে ম্যাচ শেষ করল বাংলা। অন্ধ্রপ্রদেশের পয়েন্ট এক। চাঞ্চল্যকর ভাবে ৫৩ ওভার বাকি থাকতে শেষ হয়ে গেল বাংলা-অন্ধ্র রঞ্জি দ্বৈরথ!

শনিবারের এই ঘটনার পরে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, কেন বাংলা ছয় পয়েন্টের জন্য ঝাঁপাবে না? একটা প্রথম শ্রেণির ম্যাচ ৫৩ ওভার বাকি থাকতে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, এমন ঘটনা এর আগে কবে ঘটেছে বলা কঠিন। এই অন্ধ্রপ্রদেশকেই প্রথম ইনিংসে ৬৯.২ ওভারে ১৮১ রানে শেষ করে দিয়েছিলেন বাংলার বোলাররা। ফলো অন করানো যায়নি ঠিকই, কিন্তু ১০৮ রানে এগিয়ে ছিল অভিমন্যু ঈশ্বরনের দল। এ দিন ম্যাচ যখন শেষ হয়, বাংলার রান ২১ ওভারে ৪৬। অর্থাৎ ১৫৪ রানে এগিয়ে।

ম্যাচের পরে বাংলা দলের মানসিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে পড়েছে। বলা হচ্ছে, কেন বাংলা প্রথম থেকেই আগ্রাসী ব্যাটিং করবে না? ২১ ওভারে রান রেট বাড়াতে পারলে তাড়াতাড়ি ডিক্লেয়ার দেওয়ার ভাল সম্ভাবনা থাকত। প্রয়োজনে শ্রীবৎস গোস্বামীর মতো আগ্রাসী কাউকে দিয়ে ওপেন করানো যেত। কেউ এমনও মনে করেন, বাকি ৫৩ ওভারের মধ্যে গোটা চল্লিশেক ওভার খেলতে দেওয়া যেতেই পারত অন্ধ্রকে। বাংলার হাতে চার পেসার ছিল। ফর্মে থাকা ঈশান পোড়েল ছিলেন। তা হলে কেন পুরো পয়েন্টের জন্য যাবে না?

বাংলার রঞ্জিজয়ী অধিনায়ক সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করেন, অভিমন্যুদের অবশ্যই চ্যালেঞ্জটা নেওয়া উচিত ছিল। সম্বরণের কথায়, ‘‘আমি অধিনায়ক হলে অবশ্যই পুরো পয়েন্টের জন্য ঝাঁপাতাম। চ্যালেঞ্জটা বাংলা নিতেই পারত। পরিস্থিতি আমাদের পক্ষে ছিল।’’ তবে অনূর্ধ্ব ২৩ বাংলাকে ভারত সেরা করা কোচ সৌরাশিস লাহিড়ী বলেন, ‘‘অন্ধ্র বেশ ভাল দল। ওদের অন্তত ৬০-৭০ ওভার খেলতে না দিলে আউট করা কঠিন।’’

নিয়ম অনুযায়ী ম্যাচ শেষ করে দেওয়া নিয়ে সমস্যা নেই। রঞ্জি ট্রফির নতুন নিয়মে শেষ দিনের প্রথম সেশনের পরে দুই অধিনায়ক যদি মনে করেন, ফল হওয়া সম্ভব নয়, সে ক্ষেত্রে আম্পায়ারের সঙ্গে আলোচনা করে নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই শেষ করে দেওয়া যেতে পারে ম্যাচ। শনিবার অন্ধ্রপ্রদেশের বিরুদ্ধে সেই পথেই এগিয়েছে বাংলা। কিন্তু প্রশ্ন নিয়ম নিয়ে নয়, প্রশ্ন লড়াকু মানসিকতা নিয়ে।

চতুর্থ দিন ফলো-অন বাঁচাতে অন্ধ্রপ্রদেশের প্রয়োজন ছিল ৩০ রান। অনায়াসেই তা পার করে দেন অন্ধ্রের নীচের দিকের ব্যাটসম্যানেরা। প্রথম ম্যাচের মতো এ ম্যাচেও মাথায় আঘাত পান অন্ধ্রের জ্ঞানেশ্বর। ৬৯তম ওভারে আকাশ দীপের বাউন্সার আছড়ে পড়ে তাঁর হেলমেটে। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, জ্ঞানেশ্বরের আঘাত গুরুতর নয়। লাঞ্চের পরে ব্যাট করতে নামে বাংলা। অভিষেক রামন আক্রমণাত্মক থাকলেও ছন্দে না থাকায় সেই ঝুঁকি নেননি অধিনায়ক অভিমন্যু। যার ফলে রান ওঠার গতিও আটকে যায়।

কেন ঝুঁকি নিল না বাংলা? কোচ অরুণ লালকে প্রশ্ন করা হলে তাঁর উত্তর, ‘‘আমিও শুরুতে ভেবেছিলাম দ্রুত রান করে বিপক্ষকে শেষ ৩৫ ওভার ব্যাট করাব। কিন্তু তার পরে ভাবলাম, বেশি উইকেট পড়ে গেলে কোশেন্ট-এ সমস্যা হতে পারে।’’ যোগ করেন, ‘‘রামন ও মনোজ বাদে কেউই ছন্দে নেই। তাই দু’ম্যাচে ৯ পয়েন্ট পেয়েই আমরা খুশি।’’

কোচ খুশি হলেও বাংলা দলের এই দুর্বোধ্য মানসিকতা নিয়ে কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cricket Bengal Andhra Pradesh Ranji Trophy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE