গ্যালারিতে জয়ধ্বনি থাকবে না। র্যান্টিদের প্র্যাকটিস মাঠের মতো যুবভারতীও থাকবে দর্শকশূন্য । ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।
ভারতীয় ফুটবলের ইতিহাসে যা কখনও হয়নি, সেটাই ঘটতে চলেছে কলকাতায়। নজিরবিহীন ভাবে ফাঁকা স্টেডিয়ামে দু’টো আই লিগ এবং একটা এএফসি কাপ ম্যাচ খেলতে হবে ইস্টবেঙ্গলকে। সাধারণ ফুটবলপ্রেমী মানুষ তো দূরের কথা, লাল-হলুদের সদস্যরাও ঢুকতে পারবেন না মাঠে।
কী এমন হল যে, দর্শকশূন্য মাঠে খেলতে হবে ইস্টবেঙ্গলকে?
উত্তর হল— পুরভোট!
আগামী ১৮, ২৫ এবং ২৮ এপ্রিল ইস্টবেঙ্গলের ম্যাচ যুবভারতীতে। ঘটনাচক্রে ওই তিন দিনই পুরভোট এই রাজ্যে। প্রথম দু’দিন ভোটগ্রহণ, শেষ দিন গণনা। তাই প্রশাসনের পক্ষ থেকে সোমবার ইস্টবেঙ্গল কর্তাদের প্রথমে জানিয়ে দেওয়া হয়, ম্যাচ বাতিল করতে হবে। পুরভোটের জন্য পর্যাপ্ত পুলিশ নেই। কিন্তু ম্যাচ বাতিল হলে প্রচুর আর্থিক ক্ষতির সামনে পড়তে হবে লাল-হলুদকে। যেহেতু তারা এই ম্যাচ তিনটের সংগঠক। এএফসি কাপের মতো আন্তর্জাতিক হোম ম্যাচ নির্ধারিত দিনে আয়োজন করতে না পারলে ইস্টবেঙ্গলের সাসপেন্ড হওয়ারও ভয় থাকছে। সব দিক বিবেচনা করে তাই শেষমেশ দর্শকশূন্য মাঠেই খেলা আয়োজনের প্রস্তাব দেন ইস্টবেঙ্গল কর্তারা। রাজ্যের যুগ্ম ক্রীড়া সচিব জ্যোতিষ্মান চট্টোপাধ্যায় বলছিলেন, ‘‘আর কোনও উপায় ছিল না। পুরভোটের সময় বাড়তি পুলিশ দেওয়া সম্ভব নয়। ইস্টবেঙ্গল যদি ফাঁকা গ্যালারিতে ম্যাচ করার প্রস্তাব না দিত, তা হলে ম্যাচ হতই না।’’
পুরভোট। পুলিশ নেই। গ্যালারি শূন্য— যাঁর শিকার হতে হল ফুটবলকে! গোটা ঘটনাকে লজ্জা হিসেবেই দেখছে ময়দান। ইস্টবেঙ্গল থেকে মোহনবাগানের প্রাক্তন ফুটবলাররা সরব নিন্দায়। লাল-হলুদের ঘরের ছেলে মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য বলছিলেন, ‘‘হোম অ্যাডভান্টেজ আর থাকল কোথায় তা হলে? অথচ এই মুহূর্তে আই লিগ চ্যাম্পিয়নশিপের দৌড়ে ঢুকে পড়েছে ইস্টবেঙ্গল। আমরা ফুটবলাররা তো সদ্য-সমর্থকদের জন্যই খেলি। ওরা না থাকলে আকর্ষণ-ই তো চলে যাবে। খুব দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা।’’ বাগানের ঘরের ছেলে সুব্রত ভট্টাচার্য আবার বলছিলেন, ‘‘বিদেশে শাস্তি স্বরূপ এ রকম দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে ম্যাচ হয় বলে শুনেছি। এখানে তো এক পক্ষের সমর্থক থাকত।’’ সঙ্গে তিনি আরও যোগ করলেন, ‘‘আসলে এটা ফুটবলকে অবজ্ঞা করা। আর ফুটবলের প্রতি মানুষের আগ্রহ কমিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা।’’ বিরক্ত লাল-হলুদ সচিব কল্যাণ মজুমদারও। ‘‘আমাদের দেশে ফুটবল নিয়ে কেউ ভাবে না। বিশ্বের কোনও প্রান্তে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে আমার জানা নেই। এই ভাবে চলতে থাকলে তো একটা সময় পাড়ার মাঠে তাঁবু খাটিয়ে ম্যাচ করতে হবে।’’
প্রশাসনের নজিরবিহীন সিদ্ধান্তে আক্রান্ত শুধু ফুটবলই নয়, আক্রান্ত সেই সব লাল-হলুদ সদস্যও, যাঁরা টাকা দিয়ে প্রতি বছর সদস্য কার্ড নবিকরণ করেন। তা সত্ত্বেও কেন তাঁরা তিনটে হোম ম্যাচ দেখা থেকে বঞ্চিত হবেন? বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের এক অফিসার বললেন, ‘‘আমরা সমস্যার কথা রাজ্য ক্রীড়া দফতরকে আগেই জানিয়েছিলাম। ওই তিন দিন পুলিশ দেওয়া কোনও ভাবেই সম্ভব নয়। তাই ম্যাচ নেহাত করতেই হলে ফাঁকা মাঠে করা সম্ভব। না হলে নয়।’’
ফুটবলের উপর ‘অত্যাচার’ ভারতীয় ফুটবলে নতুন ঘটনা নয়। বহু ক্ষেত্রেই দেখা যায়, কোনও বিশেষ কিছুর বিনিময়ে বলিদান দিতে হয় ফুটবলকেই। যেমন কয়েক দিন আগেই আইপিএল উদ্বোধনের জন্য আই লিগে মোহনবাগানের ম্যাচ যুবভারতী থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় বারাসতে। আবার সেই যুবভারতীতেই বাগানকে খেলতে হল পরের ম্যাচ। পেরেক, কাঠের-টুকরো আর নোংরা গ্যালারির মাঝে (আইপিএল উদ্বোধনের জের)। তবে ফাঁকা গ্যালারিতে ফুটবল ম্যাচ অবশ্যই নজিরবিহীন ঘটনা হতে চলেছে ভারতীয় ফুটবলে। পঞ্চাশের দশকের শেষে এক বার সদস্য-সমর্থকরা তিন প্রধানের ম্যাচ বয়কট করেছিলেন। ধারাবাহিক খারাপ রেফারিংয়ের প্রতিবাদে। তখনও একেবারে শূন্য গ্যালারিতে খেলা হয়েছিল কি না, মনে করতে পারছে না বঙ্গ ফুটবলমহল ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy