Advertisement
১২ অক্টোবর ২০২৪

টানাটানির সংসারে স্বপ্নপূরণের লড়াই

দার্জিলিং-এর রোজব্যাঙ্ক রাজবাড়ি এলাকার বাসিন্দা ইসমাইল রাই। তার বাবা পেশায় দিনমজুর। টানাটানির সংসার। প্রতিবেশী কর্মা লেপচার হাত ধরেই তিরন্দাজি শেখে ইসমাইল। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে খরচ বাড়ছে।

বাঁশের তৈরি ধনুক নিয়ে ইন্ডিয়ান বিভাগে তিরন্দাজি প্রতিযোগিতা। নিজস্ব চিত্র

বাঁশের তৈরি ধনুক নিয়ে ইন্ডিয়ান বিভাগে তিরন্দাজি প্রতিযোগিতা। নিজস্ব চিত্র

রাজা বন্দ্যোপাধ্যায়
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:৫০
Share: Save:

বাড়িতে নুন আনতে পান্তা ফুরনোর অবস্থা। টানাটানির সংসারে খেলার অনুশীলন চালানো হয়তো একরকমের বিলাসিতাই। তবু দমে যায়নি তারা। নিম্নমানের বাঁশের তৈরি তির-ধনুক নিয়ে চালিয়েছে অনুশীলন। আর সেভাবেই অংশ নিয়েছে নানা স্তরের প্রতিযোগিতায়। মিলেছে সাফল্যও। তবুও সমস্যায় রয়েছে উত্তরবঙ্গের সেই তিরন্দাজেরা।

যেমন কোচবিহারের মৌমিতা মুন্ডা। খোলাটা গ্রামের বাসিন্দা মৌমিতার বাবা মন্টু মুন্ডা কোচবিহার শহরে একটি হিমঘরে কাজ করেন। মন্টু মুন্ডা নিজেও বহুদিন তিরন্দাজিতে কোচবিহার জেলার প্রতিনিধিত্ব করেছেন। মোট ১২ বার রাজ্য চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন তিনি। মেয়ে মৌমিতা এখন খোলটা হাইস্কুলের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। ২০১৫-তে রাজ্য স্কুল গেমসে সাবজুনিয়ারে সোনা পেেছিল মৌমিতা। ২০১৬-তে রাজ্য ক্রীড়ায় একই গ্রুপে ব্রোঞ্জ পায় সে। বাবা মন্টু মুন্ডা কোচবিহারের তিরন্দাজির কোচ। তিনি খোলটা গ্রামে নিজের বাড়িতেই ছেলেমেয়েদের অনুশীলন করান।

কী কী লাগে তিরন্দাজির অনুশীলন করতে? মন্টুবাবু জানান, মনিপুরের একটা বিশেষ ধরনের বাঁশ থেকে তির ও ধনুক তৈরি হয়। একটা ধনুক তৈরি করতে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত লাগে। এছাড়াও তির তৈরি এবং টার্গেট তৈরিরও খরচ রয়েছে। একটা ধনুক আবার বছর দুয়েকের বেশি টেকে না। টার্গেটেরও আয়ু মেরেকেটে ছয় মাস। কিন্তু একটি টার্গেট তৈরি করতে লাগে দু’হাজার টাকা। মন্টুবাবুর আক্ষেপ, “এত খরচ করে কী ভাবে ছেলেমেয়েরা অনুশীলন করবে? ইচ্ছে থাকলেও অনেকেই বাধ্য হয়ে পিছিয়ে যাচ্ছে।”

দার্জিলিং-এর রোজব্যাঙ্ক রাজবাড়ি এলাকার বাসিন্দা ইসমাইল রাই। তার বাবা পেশায় দিনমজুর। টানাটানির সংসার। প্রতিবেশী কর্মা লেপচার হাত ধরেই তিরন্দাজি শেখে ইসমাইল। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে খরচ বাড়ছে। কতদিন আর অনুশীলন চালাতে পারবে নিজেই জানে না সে।

একই অবস্থা আলিপুরদুয়ারের শামুকতলা এলাকার বড়পুকুরিয়া গ্রামের জয়ন্ত বাস্কে, জলপাইগুড়ির ডামডিমের বাসিন্দা সুপ্রিয়া মহালি, নমমিতা দাস এবং সুশান্ত দে’রও। সুশান্ত বলেন, “আমাদের সরঞ্জাম যখন নষ্ট হয় তখন চাঁদা তুলে সব কিনি। যতদিন না জোগাড় হচ্ছে, আমাদের অনুশীলন বন্ধ থাকে।’’ রাজ্য তিরন্দাজি অ্যাসোশিয়েশন চেষ্টা করলে এই সমস্যার কিছুটা সুরাহা হবে বলেই মত সুপ্রিয়া, সুশান্তদের।

এ বার জলপাইগুড়িতে রাজ্য গেমসের তিরন্দাজিতে কোচবিহারের ৪ জন, দার্জিলিংয়ের ৬ জন, কালিম্পং থেকে ২ জন, আলিপুরদুয়ারের ১ জন এবং জলপাইগুড়ি থেকে ৩ জন অংশ নিয়েছে। কোচবিহারের ছেলেরা ভারতীয় তিরন্দাজিতে সোনা এবং দু’জন মেয়ে একই বিভাগে ব্রোঞ্জ পেয়েছে। দার্জিলিংয়ের দুই মেয়ে তাদের বিভাগে রুপো এবং কালিম্পংয়ের দু’জন ছেলেদের কম্পাউন্ড আর্চারিতে ব্রোঞ্জ পেয়েছে।

রাজ্য তিরন্দাজি অ্যাসোশিয়েশনের সম্পাদক রুপেশ কর বলেন, “কিছুদিনের মধ্যে রাজ্য জুড়ে প্রতিভা অন্বেষণের জন্য শিবিরের আয়োজন করা হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

West Bengal archer Archery poverty
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE