জলের অভাবে কি শেষমেশ জলে যেতে পারে আইপিএল-৯-এর উদ্বোধন? মহারাষ্ট্র থেকে সরতে পারে আইপিএলের ম্যাচ?
দেশের বাণিজ্য নগরীতে বুধবার সারা দিন এই প্রশ্নটাই তাড়া করে গেল দেশের ক্রিকেট মহলকে।
প্রশ্নের কারণ, মহারাষ্ট্রের সেই খরা পরিস্থিতি আর তীব্র জল কষ্ট। আর সেই সময়ই কি না আইপিএলের জন্য মুম্বই, পুণে, নাগপুরে উইকেট সংরক্ষণের জন্য ৬০ লক্ষ লিটার জলের অপচয়! যার জেরে মুম্বই হাইকোর্টে ওঠা জনস্বার্থ মামলা। এ দিন সেই মামলার শুনানির সময়ই আদালত তীব্র ভর্ৎসনা করে সরকার এবং আইপিএল সংগঠকদের। যার জেরেই মুম্বইয়ে আইপিএল উদ্বোধনের আকাশে কালো মেঘ!
এ দিন দীর্ঘ শুনানির পর আদালত মুলতুবি হয়ে গিয়েছে। বিচারপতিরা রায় দিতে পারেন বৃহস্পতিবার। আইপিএল-৯-এর উদ্বোধন নিয়ে এ রকম অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতিতে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের কর্তারা যদিও আশাবাদী শেষ বেলায় কিছু সমাধান সূত্র বেরিয়ে আসবেই। উদ্বোধন এবং ৯ এপ্রিলের প্রথম ম্যাচ সরবে না ওয়াংখেড়ে থেকে। বোর্ড সচিব অনুরাগ ঠাকুর এ দিন বলেছেন, ‘‘শেষ মুহূর্তে কোনও না কোনও সমাধানসূত্র মিলতেই পারে। না হলে বিশাল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।’’
একই রকম ইতিবাচক প্রথম ম্যাচের দুই ফ্রাঞ্চাইজি রাইজিং পুণে সুপার জায়ান্টস এবং মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের কর্তারা। দু’দলের কর্তাদেরই মনোভাব, যদি উদ্বোধনী ম্যাচ ওয়াংখেড়ে থেকে সরানোর মতো গুরুতর পরিস্থিতি তৈরি হত তা হলে বোর্ডের কাছ থেকে কিছু না কিছু এসওএস আসতই। তা বুধবার রাত পর্যন্ত দুই ফ্র্যা়ঞ্চাইজির কারও কাছেই এসে পৌঁছোয়নি। ফলে উহ্য বার্তাটি হল— আপাতত উদ্বোধনী ম্যাচ সরার কোনও সম্ভাবনা নেই।
এ ব্যাপারে ক্রিকেট মহলের কোনও কোনও অংশের অনুমান জলের জন্য কর দিয়ে ছাড় পেয়ে যেতে পারে আইপিএল। আবার কেউ কেউ বলছেন, ওয়াংখেড়েতে প্রথম দুই ম্যাচের পর মহারাষ্ট্র থেকে আইপিএল ম্যাচ সরে যাওয়ার একটা ক্ষীণ সম্ভাবনা নাকি থেকেই যাচ্ছে।
মহারাষ্ট্রের প্রবল খরা পরিস্থিতি এবং আইপিএলে পিচ সংরক্ষণের জন্য জল ব্যবহার করা নিয়ে এই সাম্প্রতিক বিতর্কের জেরে সমালোচনার তিরও ধেয়ে আসছে বিভিন্ন মহল থেকে। ক্রিকেট ঐতিহাসিক রামচন্দ্র গুহ ইতিমধ্যেই গোটা পরিস্থিতিকে ব্যঙ্গ করে টুইট করেছেন—গ্রামের মানুষ পানীয় জল পাচ্ছেন না! আইপিএলের স্পিরিটে মুম্বই হাইকোর্টকে বলাই যায়, ওরা তা হলে কিংফিশার খাক।
স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা লোকসত্তা মুভমেন্টের জনস্বার্থ মামলার শুনানি চলাকালীন এ দিন ঠিক কী বলল আদালত যার জেরে আইপিএলের আকাশে কালবৈশাখীর মেঘ! মুম্বই হাইকোর্টে বিচারপতি ভিএম কানাদে এবং বিচারপতি এমএস কার্নিককে নিয়ে গঠিত ডিভিসন বেঞ্চ মহারাষ্ট্রের ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনগুলো (মুম্বই ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন, মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন এবং বিদর্ভ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন) এবং ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডকে তীব্র ভর্ৎসনা করে বলে, ‘‘আইপিএল ম্যাচের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ মানুষের স্বার্থ। খরা কবলিত মহারাষ্ট্রের গোটা পরিস্থিতি জানার পরেও এ রকম দায়বদ্ধতাহীন ভাবে জলের অপচয় করা কেন?’’ এখানেই শেষ নয়। আদালত সঙ্গে এও বলে, ‘‘যে রাজ্যে জলকষ্ট এ রকম তীব্র আকার ধারণ করেছে সেখানে এই পরিস্থিতিতে আইপিএলের ম্যাচ সরিয়ে নেওয়াটাই যুক্তিযুক্ত।’’ আদালতের এই মন্তব্য বাইরে আসতেই শুরু হয়ে যায় যাবতীয় জল্পনা। বোর্ডের আইনজীবী যদিও এরই মধ্যে আদালতকে জানান, পিচ সংরক্ষণের জন্য ব্যবহার করা জল কখনই পানীয় জল হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।
এ ছাড়াও এ দিন আদালত মুম্বই ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের কাছে জানতে চায় আইপিএলে পিচ সংরক্ষণের জন্য কতটা জল তারা খরচ করছে। এমসিএ আইনজীবী সেই পরিমাণ ৪০ লক্ষ লিটার জানালে আদালত স্পষ্ট জানিয়ে দেয় এই পরিমাণ অনেকটাই বেশি। মামলাকারীদের তরফে এই সময় শুনানি স্থগিত রেখে মহারাষ্ট্রের সব কটি ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনকে পিচে জল দেওয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশ জানানোর আবেদন রাখা হলে আদালত মুলতুবি হয়ে যায়। বৃহস্পতিবার এ ব্যাপারে রায় দিতে পারে আদালত।
মহারাষ্ট্রে এ বারের আইপিএলে ম্যাচ রয়েছে ২০ টি। যার মধ্যে উদ্বোধন ও ২৯ মে-র ফাইনাল নিয়ে ওয়াংখেড়েত ৮টি, পুণেতে ৯টি এবং নাগপুরে রয়েছে তিনটি ম্যাচ। তবে শেষমেশ কী হবে, তা পরিষ্কার হবে বৃহস্পতিবার দুপুরের পর।