রবিবারই মাঠের লড়াই। তার আগে হাতে হাত দুই কোচের। —নিজস্ব চিত্র।
সকালের যুবভারতী থেকে দুপুরের ময়দান, ডার্বি-হাওয়ায় বদলে গিয়েছে কলকাতার ফুটবল আবহাওয়া। এটিকে নয়, মানুষ আবার মেতেছে ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানে।
উত্তাপ ছড়িয়েছে সর্বত্র। টিকিটের লম্বা লাইন। বাগান তাঁবুর কয়েক হাতের মধ্যেই টিকিট যেমন ব্ল্যাক হচ্ছে, তেমনই সেই কালোবাজারি ঠেকানোর চেষ্টা করছে আয়োজক মোহনবাগান। সোশ্যাল মিডিয়ায় ইস্ট-মোহন যুদ্ধ তো আগেই শুরু হয়ে গিয়েছে। ম্যাচের আগের দিন মোহনবাগান তাঁবুতে বিকোচ্ছে পতাকা-টুপি-ব্যান্ড। ইস্টবেঙ্গল তাঁবুতে তখন উপচে পড়েছে ক্লাব সদস্যদের ভিড়। চাই টিকিট। সব যখন রেডি, তখন অপেক্ষা শুধু মাঠে নেমে পড়ার।
আর সেই নেমে পড়ার আগের উত্তাপটা যেন ছড়িয়ে পড়েছে দুই শিবিরের কর্মকর্তা, কোচ এবং ফুটবলারদের মধ্যে। কেমন সেই আঁচ?
রাত পোহালেই মহারণ। আই লিগের প্রথম ডার্বি। কিন্তু এ যেন বড্ড তাড়াতাড়ি! আফসোসটা শোনা গেল স্বয়ং সনি নর্দের মুখেই। এত তাড়াতাড়ি ডার্বি অতীতে কবে হয়েছে, মনে পড়ছে না। সোনির তো অনেকগুলো ডার্বি খেলাও হয়ে গেল। ডার্বিতে ‘সফল নন’, শুনতে হয়েছে বার বার। শেষ ডার্বিতে শিলিগুড়িতে সেই বাধা কাটিয়েও উঠেছেন। ঠিক যে ভাবে ডার্বিতে হার না মানার রেকর্ড ধরে রাখতে চান ইস্টবেঙ্গলের এডু, তেমনই নিজের সেরাটাও দিতে চান সোনি। ক্লাবের মাঠে অনুশীলন শেষ করে কোচ সঞ্জয় সেনের সঙ্গে প্রি-ম্যাচ সাংবাদিক সম্মেলনে বেশ আক্রমণাত্মকই শোনাল সোনির গলা। এমনটা সচরাচর দেখা যায় না। এই সোনি কাল মাঠে কী করবেন সেটা সময়ই বলবে। তবে সবার মতোই একটা কথা বলে গেলেন তিনি, ‘‘কাল মাঠে নেমে যে ভাল খেলবে সেই জিতবে। ডার্বি সব সময়েই আলাদা।’’
যখন ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে ম্যাচ আলাদা বলছেন সনি, তখনই পাশে বসা সঞ্জয় সেনের গলায় উল্টো সুর। তার কাছে এটা আরও একটা ম্যাচ। অন্যান্য ম্যাচের মতোই। সনির উল্টো পথে হাঁটলেন ইস্টবেঙ্গল কোচ খালিদ জামিলও। মোহনবাগানের আগেই ব্রেন্ডনকে সঙ্গে নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে গিয়েছেন খালিদ। তাঁর বক্তব্য পুরোটাই উল্টো। এত দ্রুত ডার্বি নিয়ে তিনি ভাবতে নারাজ। বলেন, ‘‘আগে না পরে, তা নিয়ে আমি ভাবতে চাই না। আমাকে সব ম্যাচই খেলতে হবে। সেটাই আসল।’’ চিন্তা যে তাঁর আছেই সেটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে চোখমুখ দেখে। কারণ, তাঁর এ বারের দলে রয়েছেন এক ঝাঁক এমন মুখ যাঁরা রবিবার প্রথম ডার্বি খেলবেন।
প্রি-ম্যাচ সাংবাদিক সম্মেলনে ইস্টবেঙ্গল কোচ খালিদ জামিল ও ফুটবলার ব্রেন্ডন। সঙ্গে মোহনবাগান কোচ সঞ্জয় সেন এবং সনি নর্দে।
সেই খালিদ জামিলই যখন পুরো ম্যাচে ভাল খেলার কথা বলছেন, তখন সঞ্জয় সেনের গলায় এক পয়েন্টের সন্তুষ্টি। সঞ্জয় বলেন, ‘‘কেউ হারের কথা ভেবে মাঠে নামে না। আমরাও তিন পয়েন্টের জন্যই নামব। যদি না পাই, তা হলে এক পয়েন্টও দীর্ঘ লিগে গুরুত্বপূর্ণ।’’ অন্য দিকে খালিদের বক্তব্য, ‘‘সচেতন হয়ে খেলতে হবে। খেলাটা শেষ করতে হবে। ভাল খেলার জন্যই সব সময় মাঠে নামি আমরা।’’
মোহনবাগান মাঠে সাংবাদিক সম্মেলনে এসে বেশ ফুরফুরে মেজাজেই পাওয়া গেল খালিদ জামিলকে। সচরাচর এমনটা দেখা যায় না। সাংবাদিকদের সব প্রশ্নে প্রায় সারা ক্ষণই মশকরা করে গেলেন। হয়তো ডার্বির আগে চাপ কাটানোর পন্থা। সঞ্জয় সেনের গলায় আত্মবিশ্বাসের সুর। এই যুবভারতীতে তাঁর রেকর্ড নেহাৎই খারাপ নয়। তবে অতীত নিয়ে কখনওই ভাবেন না বাগান কোচ। বরং কথাটা শুনে বলে দিলেন, ‘‘আপনি মনে করালেন তাই মনে পড়ল। না হলে অতীত নিয়ে আমি ভাবতে ভালবাসি না।’’ পাশে বসে তখন নিজের কোচকেই মাপছিলেন সনি।
আরও পড়ুন
যুবভারতীতে ইস্টবেঙ্গল প্র্যাকটিসে ডার্বির দামামা বাজল না
খালিদের পাশে চুপচাপ বসেছিলেন তাঁরই দলের প্লেয়ার ব্রেন্ডন। আই লিগ চ্যাম্পিয়ন আইজল এফসি থেকে কোচের হাত ধরে চলে এসেছেন ইস্টবেঙ্গলে। প্রশ্ন উড়ে যেতেই তৎপর দেখাল তাঁকে। কোচের কথার রেশ ধের ব্রেন্ডনও বলে দিলেন, ‘‘সব ম্যাচেই চাপ থাকে। তার মধ্যেই আমরা খেলি। সব ম্যাচ আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’’ বাগান অধিনায়ক সনি কিন্তু এই ম্যাচকে আলাদাই বলে দিয়েছিলেন। আবারও বললেন, ‘‘আমি যে ভাবে লাজংয়ের বিরুদ্ধে খেলব, সে ভাবে নিশ্চয়ই ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে খেলব না।’’
কিন্তু সনিকে ঘিরে যে সবুজ-মেরুনের প্রত্যাশা, তাতে খানিকটা জল ঢাললেন সনি। বাগান তাঁবুতে, স্লোগান উঠল তাঁকে ঘিরেই। তাই হয়তো বার বার বোঝাতে চাইলেন, ‘‘আমি যদি ৫ গোল করি আর ইস্টবেঙ্গল যদি ৭ গোল দেয়, তা হলে কী লাভ! তাই এটা পুরো টিমের ব্যাপার।’’ তবুও বুঝিয়ে গেলেন ডার্বি তাঁর কাছে সব সময়ই আলাদা। তাঁর কথায়, ‘‘অন্য দেশের ডার্বি খেলেছি কিন্তু কলকাতা ডার্বি স্পেশ্যাল।’’
আরও পড়ুন
ডার্বির আগে চাপে সঞ্জয়, হুঙ্কার ছাড়ছেন সমর্থকরা
মোহনবাগান রক্ষণে পরিবর্তন আনার কথাও মেনে নিলেন কোচ। কিন্তু, এখনও মানতে পারছেন না মিনার্ভা পঞ্জাবের কাছে শেষ বেলায় গোল হজম করে পয়েন্ট নষ্ট করাটা। ছেলেদের স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, প্রথম ম্যাচ বলেই ছাড় দেওয়া হয়েছে। এ বার হলে কিন্তু ভাবতে হবে। একই হাল ইস্টবেঙ্গলেরও। ঘরের মাঠে শেষবেলায় আইজলের কাছে গোল হজম করে পয়েন্ট নষ্ট করতে হয়েছে। এ বার সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি করতে চান না খালিদ। কিন্তু, তিনি নার্ভাস। কলকাতা লিগের ডার্বির আগে বলেছিলেন, তা আবারও বললেন— ‘‘সব ম্যাচেই আমি চাপে থাকি। নার্ভাস থাকি।’’
এক কথায় আসল কথাটা বলে গেলেন খালিদ, ‘‘আসলে কঠিন সঞ্জয় সেনের বিরুদ্ধে খেলা।’’
আর সঞ্জয় কী বললেন? তাঁর হুঙ্কার, ‘‘ইস্টবেঙ্গল যতই এগিয়ে থাকুক আমরা আন্ডারডগ নই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy