Advertisement
E-Paper

নেইমার নিয়ে নতুন আশা আশঙ্কার হৃদ্স্পন্দনে ব্রাজিল

নেইমার দ্য সিলভা গতকাল যখন সেন্টার সার্কল থেকে হেঁটে যাচ্ছিলেন পেনাল্টি স্পটে বল বসানোর জন্য, তাঁকে অতিক্রম করতে হল মোটামুটি ৪৮ গজ। নেইমার পরে কবুল করেছেন, ওই দূরত্বটা তখনকার মতো তাঁর কাছে মনে হয়েছিল দশ কিলোমিটার! এতটাই কম্পিত আর উদ্বিগ্ন ছিলেন। টিম ব্রাজিলেরও এক অবস্থা। ফোর্তালেজায় তাদের কলম্বিয়া ম্যাচের কিক অফ হতে আরও সাড়ে চার দিন।

গৌতম ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০১৪ ০৩:৫৮

নেইমার দ্য সিলভা গতকাল যখন সেন্টার সার্কল থেকে হেঁটে যাচ্ছিলেন পেনাল্টি স্পটে বল বসানোর জন্য, তাঁকে অতিক্রম করতে হল মোটামুটি ৪৮ গজ।

নেইমার পরে কবুল করেছেন, ওই দূরত্বটা তখনকার মতো তাঁর কাছে মনে হয়েছিল দশ কিলোমিটার! এতটাই কম্পিত আর উদ্বিগ্ন ছিলেন।

টিম ব্রাজিলেরও এক অবস্থা। ফোর্তালেজায় তাদের কলম্বিয়া ম্যাচের কিক অফ হতে আরও সাড়ে চার দিন।

কিন্তু মনে মনে তাদের মনে হচ্ছে বোধহয় অনন্তের অপেক্ষা। ব্রাজিলীয় ফুটবলাররা কাল মিক্সড জোনে স্বীকার করেছেন, নেইমারের থাইয়ের অবস্থা থেকে শুক্রবারটা ঠিক কবে গুলিয়ে যাচ্ছে!

বিখ্যাত মার্কিন নেটওয়ার্ক গতকাল রাতেই একটা অনুষ্ঠান দেখাচ্ছিল— ১৯১৪ আর ২০১৪-এ কী অদ্ভুত মিল। তাতে সিআইএ-র প্রাক্তন ডিরেক্টর জেনারেল বলছিলেন, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ঠিক যেমন প্ররোচনামূলক পরিস্থিতিতে শুরু হয়েছিল, পাকেচক্রে একশো বছর বাদে ইরাক-ইস্যু এক প্ররোচনা শুরু করেছে! আবার না একটা মহাযুদ্ধ বাঁধে!

১৯৬৬ আর ২০১৪-এ তফাত একশো বছরের নয়! কিন্তু অবিকল একই যেন ছবি। সে বার পেলেকে মেরে মেরে বিশ্বকাপের বাইরে করে দিয়েছিল ঘাতক ডিফেন্ডাররা। এ বার নেইমারের জন্য যেন একই ভাগ্যলিপি তৈরির তোড়জোড় চলছে। মেসির সঙ্গে নেইমারের তফাত হল, যেহেতু নীচে নেমে ডিফেন্স করেন, অনেকটা বেশি জায়গা জুড়ে দৌড়োন, তাঁকে মারার সুযোগ আসে বেশি। আর ক্রোয়েশিয়া ম্যাচ থেকে তাঁরই যেন সুযোগ নিচ্ছে ডিফেন্ডাররা। এক এক সময় অবাকই লাগছে তাঁর চেহারা যদি হাল্ক বা রোনাল্ডোর মতোও হত, মারটা সহ্য হত। বিশ্বকাপের জন্য দশ কেজি ওজন বাড়ানো আর পেশি উন্নত করলেও ফুটবলীয় মাপে তাঁকে প্যাংলাই বলবে লোকে।

ছয় মিনিটেই চিলি তাঁকে যে মারাত্মক ফাউল করে সেটা দেখে লুই ফিলিপ স্কোলারির কী সবর্নাশা আতঙ্ক হয়েছিল, পরে সাংবাদিক সম্মেলনে স্বীকার করলেন। তিনি পর্তুগাল কোচ থাকার সময় ডাচ ডিফেন্ডার এমনই মেরেছিলেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোকে। রোনাল্ডো খানিকক্ষণ মাঠে থাকার চেষ্টা করেও বেরিয়ে যেতে বাধ্য হন। “নেইমারকে জিজ্ঞেস করলাম, পারবে? ও বলল ঠিক পারব। অতুলনীয় সাহস ছেলেটার। বললাম তো, বয়স বাইশ। কিন্তু মাথাটা পঁয়ত্রিশের।” আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ছেন স্কোলারি।

ওই রকম ফোলা নিয়ে নেইমার পেনাল্টি মারতে অস্বীকার করলেও কিছু বলার ছিল না। ডান পায়ে অবিরাম লাগছে। ওই পায়ের তো ফ্লেক্সিবিলিটি থাকার কথা নয় পেনাল্টির মতো সুক্ষ্ম প্লেসিংয়ের কাজে। তার ওপর ওই চাপের মুহূর্তে। এর আগে বিশ্বকাপে জিকো, প্লাতিনি, বাজ্জোরা পর্যন্ত টেনশনে পেনাল্টি মিস করেছেন। সাঞ্চেজ অবধি পারলেন না। কিন্তু নেইমার দেখা গেল মানসিক ভাবে অন্য ধাতুর। সীমাহীন চাপও নিজের ভেতরকার প্রেশার কুকারে ঠিক সেদ্ধ করে নিতে পারেন। স্কোলারি তো বললেনই, “দেখে মনে হল সান্তোসে পেনাল্টি মারছে বা বন্ধুর বাড়ির বাগানে।”

মিক্সড জোনে নেইমার অবশ্য স্বীকার করে গেলেন, নিজের প্রচণ্ড নার্ভাসই লাগছিল। কিন্তু বলটা এক বার পায়ে পেয়ে যেতে আর কোনও টেনশন নেই। এমনিতে ম্যাচ থেকে উঠে তাঁর মনে হচ্ছে ফুটবলজীবনের কঠিনতম দিন কাটিয়ে উঠলেন। “প্রচুর চুল এক দিনে পেকে গেল। এক এক সময় মনে হচ্ছে মারাই বুঝি গিয়েছি,” এতই ক্লান্ত যে জয়োচ্ছ্বাসটা সে ভাবে নেই।

তাঁর অভিনেত্রী বান্ধবী আর বোন দু’জনেই কাল ছিলেন মাঠে। নেইমার যখন পেনাল্টি মারছেন, বান্ধবী চোখ বন্ধ করে কেমন প্রার্থনারত ছিলেন, রোববার ব্রাজিলের সব কাগজে তার ছবি।

এ বার গোটা ব্রাজিল জাতির প্রার্থনার সময়, নেইমার যেন শুক্রবার নামতে পারেন। মৃত্যুর মুখ থেকে জীবনে প্রত্যাবর্তন— এ ভাবে চিলি ম্যাচ ব্যাখ্যা করছে ব্রাজিলীয় মিডিয়া।

কিন্তু নেইমার খেলতে না পারা মানে তো এই লঝ্ঝড়ে ব্রাজিলের ফের মৃত্যুর দিকেই এগিয়ে যাওয়া।

fifaworldcup gautam bhattacharya bela horizonte neymer brazil
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy