ট্যুর পর্যায়ে ১০০তম জয় পেলেন কার্লোস আলকারাজ়। রবিবার চতুর্থ রাউন্ডে বেন শেল্টনকে হারিয়ে ফরাসি ওপেনের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠলেন তিনি। ফিলিপে শঁতিয়ে কোর্টে গোটা ম্যাচেই দেখা গিয়েছে উচ্চমানের টেনিস। দুই খেলোয়াড়ই নিজেদের সেরাটা দিয়েছেন। তিন ঘণ্টা ১৯ মিনিটের লড়াইয়ে আলকারাজ় জিতেছেন ৭-৬, ৬-৩, ৪-৬, ৬-৪ গেমে।
রবিবার প্রথম সেটেই তিন বার সেট পয়েন্ট বাঁচাতে হয় আলকারাজ়কে। দ্বিতীয় সেট থেকে খেলা ধরে নেন তিনি। শেল্টনের শক্তিশালী সার্ভ এবং জোরালো ফোরহ্যান্ডের সঙ্গে সমানে পাল্লা দিতে থাকেন আলকারাজ়। তৃতীয় সেট জিতে সামান্য সময়ের জন্য ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেন আমেরিকার শেল্টন। তবে চতুর্থ সেট এবং ম্যাচ জিতে আলকারাজ় বুঝিয়ে দেন, ট্রফিই তাঁর পাখির চোখ।
গত বারের রোলঁ গারোজ বিজয়ী আলকারাজ় পঞ্চম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতার লক্ষ্যে নেমেছেন। চলতি মরসুমে সুরকির কোর্টে ইতিমধ্যেই তিনটি ট্রফি জিতেছেন তিনি। মন্টে-কার্লো এবং রোমে ট্রফি উঠেছে স্পেনীয় খেলোয়াড়ের হাতেই। কোয়ার্টারে আলকারাজ়ের প্রতিপক্ষ টমি পল। মুখোমুখি সাক্ষাতে আলকারাজ় ৪-২ এগিয়ে।
এর আগে ফ্যাবিয়ান মারোজ়সান এবং দামির জুমহুরের বিরুদ্ধেও একটি করে সেট খুইয়েছিলেন আলকারাজ়। তবে শেল্টনের বিরুদ্ধে আরও কঠিন লড়াই হয়েছে। শেল্টনের গ্রাউন্ডস্ট্রোকের জবাব দিতে গিয়ে পরিশ্রম করতে হয় আলকারাজ়কে। প্রথম সেট ৬-৬ হওয়ার পর টাইব্রেকারেও এক সময় ৮-৮ হয়ে যায়। সেখান থেকে অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সেট জিতে নেন আলকারাজ়।
দ্বিতীয় সেটে আলকারাজ়ের খেলোয়াড়ি মানসিকতার পরিচয় পাওয়া যায়। নিজেই নিজেকে ‘ফাউল’ করে একটি পয়েন্ট দিয়ে দেন বিপক্ষকে। নেটের সামনে গিয়ে একটি ফোরহ্যান্ড মেরেছিলেন আলকারাজ়। শেল্টন দ্রুত এগিয়ে এসে ক্রসকোর্ট ফোরহ্যান্ড মারেন। আলকারাজ় শরীর ছুড়ে দিয়ে ‘উইনার’ মারেন। প্রথমে আম্পায়ার আলকারাজ়কে পয়েন্ট দিলেও স্পেনীয় খেলোয়াড় জানান, শটের আগেই তাঁর হাত থেকে র্যাকেট ফস্কে গিয়েছিল। ফলে বলের সঙ্গে সংযোগ হওয়ার মুহূর্তে র্যাকেট তাঁর হাতে ছিল না। গোটা স্টেডিয়াম আলকারাজ়ের এই স্বীকারোক্তিকে হাততালি দিয়ে সম্মান জানায়।
মহিলাদের বিভাগে এই দুই খেলোয়াড় প্রত্যাবর্তন করে জিতলেন। তাঁরা হলেন ইগা শিয়নটেক এবং এলিনা সোয়াইতোলিনা। ফিলিপ শঁতিয়ে কোর্টে প্রথম সেটে দাঁড়াতে পারেননি শিয়নটেক। প্রথম ন’টা গেমে ২৭টা আনফোর্সড এরর করেন তিনি। রিবাকিনার শক্তিশালী শটের জবাব ছিল না শিয়নটেকের কাছে। বেসলাইনের অনেক পিছনে দাঁড়িয়ে খেলছিলেন কাজাখস্তানের খেলোয়াড়। ফলে শিয়নটেকের টপ স্পিন কাজে লাগছিল না। ১-৬ গেমে প্রথম সেট হারেন শিয়নটেক।
খেলা শেষে মহিলাদের পঞ্চম বাছাই জানান, তাঁর মনে হচ্ছিল ইয়ানিক সিনারের বিরুদ্ধে খেলছেন। শিয়নটেক বলেন, “প্রথম সেট খুব কঠিন ছিল। দেখে মনে হচ্ছিল সিনারের বিরুদ্ধে খেলছি। রিবাকিনার শক্তির কাছে পেরে উঠছিলাম না। বুঝতে পারছিলাম, ফিরতে হলে অন্য কিছু করতে হবে। কিন্তু লড়াই ছাড়িনি। ধীরে ধীরে ছন্দ ফিরে পেয়েছি।”
প্রথম সেটের পর পাঁচ মিনিটের মেডিক্যাল বিরতি নেন শিয়নটেক। সেটা কাজে লাগে। ফেরার পর দ্বিতীয় সেটে ০-২ পিছিয়ে ছিলেন পোল্যান্ডের খেলোয়াড়। তার পরেই রিবাকিনার বিরুদ্ধে সার্ভিস ভাঙার সুযোগ পান তিনি। রিবাকিনার ভুলে সেই গেম জেতেন শিয়নটেক। তার পর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। পরের ছ’টা গেমের মধ্যে পাঁচটা জেতেন শিয়নটেক। ৬-৩ গেমে দ্বিতীয় সেট জিতে নেন তিনি।
তৃতীয় সেটে টান টান লড়াই চলছিল। দু’জনেই নিজের সার্ভিস ধরে রাখছিলেন। কিন্তু শেষ দিকে শারীরিক ক্ষমতায় পেরে উঠলেন না রিবাকিনা। ৭-৫ গেমে তৃতীয় সেট জিতে ম্যাচ জিতলেন শিয়নটেক। ফরাসি ওপেনে টানা ২৫ ম্যাচ জিতলেন তিনি। ছুঁলেন মনিকা সেলেসকে। রোলঁ গারোজে টানা সবচেয়ে বেশি ম্যাচ জেতার নিরিখে রাফায়েল নাদাল (৩৯), ক্রিস এভার্ট (২৯) ও বিয়র্ন বর্গের (২৮) পিছনে তিনি।
শিয়নটেকের মতো অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তন হয়েছে সোয়াইতোলিনারও। গত বারের ফরাসি ওপেনে মহিলাদের রানার্স ইটালির জেসমিন পাওলিনির কাছে প্রথম সেট হারেন সোয়াইতোলিনা। একটা সময় খেলা ৪-৪ ছিল। সেখান থেকে টানা দুই গেম জিতে প্রথম সেট জিতে নেন পাওলিনি। দ্বিতীয় সেটেও পিছিয়ে ছিলেন সোয়াইতোলিনা। ৫-৪ এগিয়ে থাকার সময় সোয়াইতোলিনার সার্ভিসে দুটো ম্যাচ পয়েন্ট ছিল পাওলিনির কাছে। দুটো পয়েন্ট বাঁচিয়ে সেই গেম জেতেন সোয়াইতোলিনা। পরে আবার ৬-৫ এগিয়ে থাকার সময় ম্যাচ পয়েন্ট পান পাওলিনি। সেই পয়েন্টও বাঁচান সোয়াইতোলিনা। খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। জেতেন সোয়াইতোলিনা।
আরও পড়ুন:
তৃতীয় সেটে পাওলিনিকে দাঁড়াতে দেননি সোয়াইতোলিনা। বোঝা যাচ্ছিল তিনটে ম্যাচ পয়েন্ট বাঁচিয়ে যে আত্মবিশ্বাস তিনি পেয়েছেন তা কাজে লাগাচ্ছেন। তৃতীয় সেট ৬-১ গেমে জিতে ম্যাচ জেতেন সোয়াইতোলিনা। কোয়ার্টার ফাইনালে শিয়নটেকের সামনে তিনি।
শীর্ষবাছাই সাবালেঙ্কা অবশ্য সহজেই নিজের ম্যাচ জিতেছেন। আমেরিকার আমান্ডা আনিসিমোভাকে স্ট্রেট সেটে (৭-৫, ৬-৩) হারান তিনি। এক নম্বরের মতোই খেলেন সাবালেঙ্কা। প্রথম সেটে তা-ও আমান্ডা কিছুটা লড়াই করেছিলেন। কিন্তু দ্বিতীয় সেটে লড়াই করতে পারেননি তিনি। ১ ঘণ্টা ৩২ মিনিটে ম্যাচ জিতে যান সাবালেঙ্কা। কোয়ার্টার ফাইনালে তাঁর সামনে চিনের ঝেং কুইনেন।