প্রশংসিত: আবিভার্বেই নজর কেড়েছেন চেস্টারপল লিংডো। নিজস্ব চিত্র
সোমবার সন্ধে। ঘড়ির কাঁটায় রাত আটটা। মোহনবাগান-পাঠচক্র ম্যাচ শেষ হয়ে গিয়েছে তার এক ঘণ্টা আগে। সমর্থকদের জয়ধ্বনির মধ্যেই ততক্ষণে তাঁবু ছেড়ে চলে গিয়েছেন এ দিনের দুই গোলদাতা কামো এবং ক্রোমা।
সবুজ-মেরুন তাঁবুর বাইরে তখনও সমর্থকদের দল স্লোগান দিচ্ছেন তাঁর নামে। তাঁবুর ভিতরে বসে যা শুনে মুখে হাসি খেলে যায় কুড়িতে পা দেওয়া চেস্টারপল লিংডোর। বলেন, ‘‘আমি তো গোল করিনি। আজ তো কামোর দিন...।’’
পাঠচক্রের বিরুদ্ধে মোহনবাগানের এই পাহাড়ি ফুটবলার গোল না করলেও এ বারের কলকাতা লিগে সবুজ-মেরুন শিবিরের অন্যতম আবিষ্কার তিনিই। মোহনবাগান কোচ শঙ্করলাল চক্রবর্তীও বলছেন, ‘‘ছেলেটা খুব বাধ্য। সব নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলে। আমাদের আক্রমণ ভাগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র চেস্টারপল। প্রথম দিন থেকেই ফুটবলের প্রতি ওর নিষ্ঠা আমার চোখে পড়ছে।’’
শিলং-এর ছেলের ছোটবেলা কেটেছে চরম আর্থিক সংকটে। পূর্ত দফতরের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মী ছিলেন চেস্টারপলের বাবা। কিন্তু মোহনবাগানের সাত নম্বর জার্সিধারী যখন সদ্য ‘টিন এজ’-এ পা দিয়েছেন তখনই বাবার অকালমৃত্যু। সে দিনের কথা বলতে গিয়ে দু’চোখের কোণা চিকচিক করে ওঠে সদাহাস্যময় এই উইঙ্গারের। বলেন, ‘‘কী ভাবে আমাদের পাঁচ ভাই দুই বোনের সংসার চলবে তা নিয়ে তখন মায়ের চোখের ঘুম চলে গিয়েছিল। সেটা ২০০৯ সাল। আমার তখন মাত্র তেরো বছর বয়স।’’ সাফাইকর্মী মায়ের রোজগারে সংসার চলত এক সময়। এখন সেই লিংডোর চোখেই স্বপ্ন পরিবারে স্বচ্ছলতা আনা। বলে দেন, ‘‘মা প্রচুর কষ্ট করেছেন। ফুটবল খেলে অনেক বড় হতে চাই। পরিবারে যেন আর অভাব না থাকে সেটাই দেখতে চাই আগামী দিনে। আর আমার চাই ভারতীয় দলের জার্সি। দেশের হয়ে খেলতে চাই আগামী দিনে।’’
আরও পড়ুন: বুমরাহর ইয়র্কারে কেমন ব্যাট চালালেন অক্ষর, দেখুন ভিডিও
শিলংয়ে গ্রামের মাঠে তাঁর খালি পায়ে গতিসম্পন্ন ফুটবল খেলা শিলং সাইতে সুযোগ দিয়েছিল। সেখানেই ফুটবলের আধুনিক পাঠ ভারতীয় ফুটবলের এই নবাগত প্রতিভার।
অ্যালেক্সিস স্যাঞ্চেজের ভক্ত চেস্টারপল এর পরে চোখে পড়েন পুণে অ্যাকাডেমির তৎকালীন কোচ রঞ্জন চৌধুরীর। যিনি এই মুহূর্তে ইস্টবেঙ্গল অ্যাকাডেমির দায়িত্বে। এ দিন টিভিতে তাঁর ছাত্রের খেলা দেখে মুগ্ধ রঞ্জনবাবু বলছিলেন, ‘‘অ্যাকাডেমির জন্য ছেলে খুঁজতে গিয়েছিলাম শিলং। সেখানেই গ্রামের মাঠে খালি পায়ে ওকে প্রথম খেলতে দেখি। গতিটা মারাত্মক।’’
ভারতীয় ফুটবলে তাঁর রাজ্যের আর এক বিখ্যাত ‘লিংডো’ ইউজিনসনের ভক্ত চেস্টারপল। রাইট উইংয়ে বল-সহ এবং বল ছাড়া গতি তাঁর সম্পদ। এর সঙ্গে জুড়তে হবে বক্সে ঠিকানা লেখা সেন্টার ভাসিয়ে দেওয়ার দক্ষতা। আউটসাইড, ইনসাইড দু’দিকেই যেতে পারেন। আক্রমণের পাশাপাশি রক্ষণেও নেমে এসে ভরসা জোগান টিমকে। মিডল থার্ড থেকে ওয়ান-টু খেলে চকিতে হানা দিতে পারেন বিপক্ষের রক্ষণে। কলকাতা লিগে শুরুর তিনটি ম্যাচেই যা মেলে ধরেছেন তিনি।
পুণে অ্যাকাডেমি থেকেই গিয়েছিলেন গোয়ার চার্চিল ব্রাদার্সে। গত বছর গোয়ান দলটির হয়ে মাঠে নেমেই চোখে পড়ে যান কলকাতার বড় দলের রিক্রুটারদের। শেষমেশ মোহনবাগান কর্তারাই জালে তোলেন চেস্টারপলকে। সে কথা জানতে চাইলে মোহনবাগান জার্সি বুকে চেপে ধরে ময়দানের নয়া তারকা বলেন, ‘‘মোহনবাগান জাতীয় ক্লাব। ছোট থেকেই এই ক্লাবে খেলার স্বপ্ন দেখতাম এক সময়। আজ তা সফল হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy