রিও অলিম্পিক্সে চিনা অ্যাথলিটরা।
অলিম্পিক্সের ইতিহাসে এত বড় দল এর আগে মাত্র এক বারই নামিয়েছিল চিন। ২০০৮ বেজিং অলিম্পিকে রেকর্ড ৬৩৯ জনের দলটিকে বাদ দিলে এ বারের দলটিই ছিল সবচেয়ে বড়। দেশ ছাড়ার আগে ৪১২ জনের অ্যাথলিট দলটিকে সামনে রেখে রীতিমতো হুঙ্কার দিয়েছিল চিনের ক্রীড়ামন্ত্রক। অলিম্পিক্সের ইতিহাসে নিজেদের অন্যতম সেরা পারফরম্যান্সের গ্যারান্টির পাশাপাশি দাবি করা হয়েছিল, রিও থেকে কম করে ৩৫টি সোনা পাবে তারা। এক পক্ষকালের মধ্যে সেই দাবির বাস্তবতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। অন্যতম সেরা পারফরম্যান্স তো দূর, ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ ফল করে দেশে ফিরছেন চিনা অ্যাথলিটরা। আমেরিকা তো বটেই, এ বার পদক তালিকায় গ্রেট ব্রিটেনের পরে থেকে তিন নম্বরে শেষ করল চিন।
১৯৫২ সালে হেলসিঙ্কি অলিম্পিকে সরকারি ভাবে প্রথম দল পাঠায় চিন। অর্থনৈতিক দিক থেকে অনেকটাই পিছিয়ে থাকা কমিউনিস্ট চিন ১৯৮৪-র লস অ্যাঞ্জেলস অলিম্পিক্সের সময় থেকে আন্তর্জাতিক আঙিনায় ছাপ ফেলতে শুরু করে। মাঝে এক বার বাদ দিলে এর পর থেকে চিনের অলিম্পিক্সের ইতিহাসে শুধুই উত্থানের কাহিনি। প্রতি বারই উল্লেখযোগ্য ভাবে বাড়তে থাকে পদকের সংখ্যা। যা সাফল্যের এভারেস্ট ছোঁয় ২০০৮ সালের বেজিং অলিম্পিক্সে। সে বার ৫১টি সোনা এবং মোট ১০০টি পদক নিয়ে পদক তালিকায় এক নম্বরে শেষ করে তারা। লন্ডন অলিম্পিকে সেই সাফল্য ধরে রাখতে না পারলেও ৩৮টি সোনা-সহ চিন দু’নম্বরে শেষ করে। ব্যডমিন্টন, টেবল টেনিস, জিমন্যাস্টিক্স, ডাইভিংয়ে অপ্রতিরোধ্য চিন দাবি করেছিল রিওতে আরও ভাল পারফরম্যান্সের। কিন্তু ২৬টা সোনায় আটকে গিয়ে এ বার তিনে নেমে গেল তারা।
ঠিক কী কারণে পারফরম্যান্সের গ্রাফ নেমে গেল চিনের? উত্তরের খোঁজে রীতিমতো কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে চিনা ক্রীড়ামন্ত্রক। এ বারের পারফরম্যান্সকে ‘অলিম্পিক্সের সেরা ফ্লপ’ আখ্যা দিয়ে প্রাথমিক ভাবে চারটি ইভেন্ট ব্যাডমিন্টন, শ্যুটিং, সাঁতার এবং জিমন্যাস্টিক্সের দিকে আঙুল তুলেছে সে দেশের ক্রীড়ামহল। এর মধ্যে জিমন্যাস্টিক্সে তো ৩০ বছরে প্রথম বার সোনা নেই চিনের। জিমন্যাস্টিক্সে হতাশাজনক পারফরম্যান্সের পর জিনহুয়ার অফিশিয়াল টুইটার হ্যান্ডেলে লেখা হয়, ‘একটাও সোনা এল না। এত বড় ফ্লপ অলিম্পিক্স আর দেখেনি চিন।’ এই টুইটের সঙ্গেই সোনা জেতার সেরা দাবিদার ইউ হাওয়ের একটি ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। প্যারালাল বিম থেকে হাওয়ের পড়ে যাওয়ার সেই ছবিই সম্ভবত চিনা জিমন্যাস্টদের খারাপ পারফরম্যান্সের সবচেয়ে প্রতীকী ছবি। বেজিং অলিম্পিক্সে ১১টা এবং লন্ডন অলিম্পিক্সে ৫টা সোনা জেতা চিনা দলকে এ বার মাত্র একটি রুপো নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হল।
জিমন্যাস্টিক্স যদি ফ্লপের তালিকার শীর্ষে থাকে, তা হলে দু’নম্বরে অবশ্যই থাকবে ব্যাডমিন্টন। যে ইভেন্টে প্রায় একাধিপত্য ছিল চিনের, তা যেন হঠাত্ই প্রভাবহীন। লন্ডন অলিম্পিক্সে ৫টা সোনা-সহ মোট ৮টি পদক পাওয়া ইভেন্টে এ বার মাত্র ২টিতেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে তাদের।
ফ্লপ লিস্টের তিন নম্বরে থাকবে সাঁতার। রিও থেকে এই ইভেন্টে মাত্র একটি সোনা জিতেছে চিন। যেখানে লন্ডন থেকে পাঁচটি সোনা জিতেছিল তারা। ৪০০ মিটার ফ্রিস্টাইলে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন সান ইয়াং হেরে গিয়ে পুলেই কেঁদে ফেলেন।
শুটিংয়ের ক্ষেত্রেও ছবিটা মোটামুটি একই। বেজিং অলিম্পিক্সে পাঁচটি সোনা জেতা শুটিং দল রিও থেকে ফিরেছে মাত্র একটি সোনা নিয়ে।
খারাপ পারফরম্যান্স নিয়ে কী মত অ্যাথলিটদের? বেশির ভাগ অ্যাথলিট কিন্তু এ জন্য অমানুষিক চাপকেই দায়ী করছেন। প্যারালাল বিমে চতুর্থ হওয়া এক অ্যাথলিটের দাবি, “আমাদের রাত দু’টো-তিনটে পর্যন্ত ঘুমোতে দেওয়া হত না। পদকের জন্য সব সময় চাপ দেওয়া হত। এত পরিশ্রম আমরা নিতে পারিনি। পারফর্ম করার সময় মাথা একেবারে ফাঁকা হয়ে যেত। যন্ত্রের মতো শুধু প্র্যাকটিস করে যেতাম।”
ফল আশানুরূপ না হওয়ায় দেশে ফিরতে ভয় পাচ্ছেন বেশ কয়েক জন অ্যাথলিট। অবস্থা এতটাই খারাপ যে, টুইটারে অ্যাথলিটদের সমর্থনে প্রচার শুরু হয়েছে। এক সমর্থক লিখেছেন, “দেশ কতগুলো সোনা পেল তা নিয়ে আমি চিন্তিত নই। আমাদের অ্যাথলিটরা সুস্থ অবস্থায় বাড়ি ফিরলেই হল। ওরা সাধ্যমতো চেষ্টা করেছে।”
আরও পড়ুন
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy