ক্লাব কর্তা দেবব্রত সরকারকে সিবিআই গ্রেফতারের পর তাঁর সদস্যপদ বাতিলের দাবিতে বুধবার রাতে ইস্টবেঙ্গল তাঁবুতে বিক্ষোভ দেখান একদল সমর্থক। তাঁদের বক্তব্য, বছর দশেক আগে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়ার পর কোচের চাকরি গিয়েছিল সুভাষ ভৌমিকের। সুদীপ্ত সেন গ্রেফতার হওয়ার পর তাঁর সদস্যপদও বাতিল হয়। তা হলে নিতু কেন ছাড় পাবেন, প্রশ্ন তাঁদের। ঝামেলা এড়াতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ক্লাবে মোতায়েন পুলিশ। ছবি সুদীপ্ত ভৌমিক
সারদা কাণ্ডে গ্রেফতার ক্লাবের শীর্ষ কর্তা দেবব্রত সরকারকে নিয়ে হঠাৎ তৈরি হওয়া সমস্যা যাতে ফুটবলারদের উপর কোনও প্রভাব ফেলতে না পারে, সেই লক্ষ্যে আসরে নেমে পড়লেন ইস্টবেঙ্গলের অন্য কর্তারা। বৃহস্পতিবার সকালে আর্মান্দো কোলাসোর দলের অনুশীলন শেষে লাল-হলুদের সহ-সচিব শান্তিরঞ্জন দাশগুপ্ত ড্রেসিংরুমে র্যান্টি-মেহতাব-জেজেদের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলেন। রাতে শান্তিবাবু বললেন, “ক্লাবের এই দুঃসময়ে ফুটবলারদের এক জোট হয়ে থাকতে হবে। সামনে পরিস্থিতি যত কঠিনই হোক না কেন, ম্যাচে যেন তার কোনও প্রভাব না পড়ে। যে কোনও সমস্যা বা প্রয়োজন কোচকে আগে জানাতে হবে। আর কোচ ম্যানেজমেন্টকে জানাবে।”
কর্তাদের আশ্বাসে কোলাসোর দল কতটা উদ্বুদ্ধ হতে পারে, সেটা সময় বলবে! তবে ক্লাবের শীর্ষকর্তার অনুপস্থিতি যে ফুটবলারদের একাংশের মধ্যে বড় বিভ্রান্তি তৈরি করেছে, তা বোঝা যাচ্ছে ফুটবলারদের সঙ্গে কথা বললেই। নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক ফুটবলারার বলছিলেন, “সব যেন কেমন এলোমেলো হয়ে গেল! নিতুদা এত দিন মাথার উপর ছিল, কোনও চিন্তাও করতে হত না। কিন্তু এখন সমস্যা হলে কাকে গিয়ে বলব? বিপদে পড়লে যে ভাবে নিতুদা সবসময় পাশে দাঁড়াতেন, সে ভাবে অন্যরা দাঁড়াবেন তো?”
শুধু ফুটবলাররাই কেন, স্বয়ং ইস্টবেঙ্গল কোচের গলাতেও একই সুর। “ইস্টবেঙ্গলে আসার দিন থেকে আমি নিতুদাকেই চিনি। যে কোনও সমস্যায় ওঁর দ্বারস্থ হয়েছি। এমনকী এ বারও গোয়া থেকে কলকাতায় আসাটা, নিতুদার জন্যই,” আর্মান্দো অবশ্য দেবব্রতবাবু নিয়ে আর কিছু বলতে চাননি। বরং নিতু-বিতর্কের প্রসঙ্গ উঠতেই লাল-হলুদ কোচ বলে উঠলেন, “বিষয়টা নিয়ে আমি কিছুই জানি না। তাই আমার একান্ত অনুরোধ, ফুটবলারদের বা আমাকে এই নিয়ে প্রশ্ন করে বিব্রত করবেন না।”
লাল-হলুদ কোচ এবং ফুটবলারদের কথায় পরিষ্কার, ক্লাবে নিয়মিত ১২-১৩ ঘণ্টা সময় দেওয়া নিতুর উপর কতটা নির্ভরশীল ছিলেন তাঁরা। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ইস্টবেঙ্গল ফুটবল টিমকে আত্মবিশ্বাস জোগাতে, ক্লাবের অনান্য কর্তারা তৎপর হয়ে উঠেছেন। আজ বিকেলে ক্লাবের কর্মসমিতির সভায় যাঁর উপর আপাতত ক্লাব দেখ-ভালের কথা সেই ক্লাব সচিব কল্যাণ মজুমদার উদ্বেগজনক পরিস্থিতির মধ্যেও নিজেকে অপরিবর্তিত রেখেছেন। নিজের সেই পরিচিত মেজাজেই এ দিন তাঁর মন্তব্য, “ইস্টবেঙ্গল ক্লাব একটা কর্পোরেট সংস্থা। হাতির পিঠে মশা বসলে যেমন হাতির কিছু যায় আসে না, তেমন নিতু-এপিসোডে ইস্টবেঙ্গলেরও কিছু যায় আসে না। নিতু ক্লাবের কোচ না ফুটবলার যে টিমের খেলায় প্রভাব পড়বে! পেশাদারদের কাজ পারফর্ম করা। ফুটবলারদের আমরা টাকা দিই, ওরা রেজাল্ট দেবে। সহজ হিসেব!”
কল্যাণবাবুর কর্পোরেট-থিওরি আদৌ কাজে দেবে কি না, সে নিয়ে একটা সংশয় থেকেই যাচ্ছে। আর হয়তো সে জন্যই ইস্টবেঙ্গল সচিবের পথে হাঁটছেন না বাকি লাল-হলুদ কর্তারা। উল্টে সামনের ডার্বি ম্যাচের কথা মাথায় রেখে হরমনজ্যোৎ-বার্তোসদের পাশেই দাঁড়াচ্ছেন তাঁরা। ক্লাব সূত্রের খবর, আজ কর্মসমিতির সভায় ‘ক্যাপ্টেন’ নিতুর কাজ সামলানোর জন্য নতুন ক্যাপ্টেন ঠিক হবে। প্রত্যেকের কাছে জানতে চাওয়া হবে কত সময় ক্লাবের জন্য দিতে পারবেন? কর্মসমিতির সব সদস্যকে বলা হবে নিয়মিত ক্লাবে আসতে। কিন্তু এতে কতটা কাজ হবে বলা মুশকিল। কারণ নিতুর গ্রেফতারের পর অনেক কর্মসমিতির সদস্যকেই ক্লাবে দেখা যায়নি। আজ তাদের মধ্যে কতজন আসেন তা দেখার। তবে আপাতত ঠিক হয়েছে নিতুর মামলার সঙ্গে ক্লাবকে এখনই যোগ করা হবে না। পরিস্থিতি দেখার পরে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy