Advertisement
০৩ মে ২০২৪

কোচ অমল থেকে যাবেন বাংলার ফুটবলে

চলে গেলেন অমল দত্ত। দীর্ঘ রোগ ভোগের পর ৮৬ বছর বয়েসে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন তিনি। রেখে গেলেন অনেক স্মৃতি। খেলেছেন ইস্টবেঙ্গলে। কিন্তু প্লেয়ার অমল দত্ত নন কোচ অমল দত্ত মনে থেকে যাবে ভারতীয় ফুটবলে। সন্তোষ ট্রফি খেলার আগে দেশের হয়ে খেলে রেকর্ড করেছিলেন তিনিই।এর পর অবশ্য অরুণ ঘোষ, শিশির ঘোষরাও খেলেছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৬ ২২:০৮
Share: Save:

চলে গেলেন অমল দত্ত। দীর্ঘ রোগ ভোগের পর ৮৬ বছর বয়েসে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন তিনি। রেখে গেলেন অনেক স্মৃতি।

খেলেছেন ইস্টবেঙ্গলে। কিন্তু প্লেয়ার অমল দত্ত নন কোচ অমল দত্ত মনে থেকে যাবে ভারতীয় ফুটবলে। সন্তোষ ট্রফি খেলার আগে দেশের হয়ে খেলে রেকর্ড করেছিলেন তিনিই।এর পর অবশ্য অরুণ ঘোষ, শিশির ঘোষরাও খেলেছেন। ইস্টবেঙ্গলের হয়ে রুমানিয়া-রাশিয়া সফরে খেলেছিলেন। সেটা পাঁচের দশকের গোড়ার দিকের কথা। খেলতে খেলতেই মনে হয়েছিল এ দেশের ফুটবল সঠিকভাবে চলছে না। দেশের ফুটবলের স্বার্থেই উড়ে যান ইংল্যান্ডে, লক্ষ্য ছিল কোচিং শেখা। কিন্তু টাকা কোথায়? তখন পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী। স্ত্রীর গয়না বিক্রি করেই বিদেশ থেকে কোচিং ডিগ্রি করে ফেরা। স্ত্রী শেষ দিন পর্যন্ত ছিলেন পাশে। তার পরটা পুরোটাই ইতিহাস। ফিরে আসার পর কোচিং শুরু। বড় ক্লাব ইস্টবেঙ্গলে শুরু ১৯৬৩ সালে। মরসুমের মাঝখানে। যখন বলরাম ও অরুণ ঘোষ চাকরি পেয়ে চলে গিয়েছেন বিএনআর-এ। সুনীল নন্দী মোহনবাগানে। রীতিমতো ধুঁকছে ইস্টবেঙ্গলের ফরোয়ার্ড লাইন। প্রথম লেগ শেষে মোহনবাগান ও বিএনআর-এর থেকে অনেক পয়েন্ট পিছিয়ে। সেই সময় লাল-হলুদের হাল ধরেন অমল দত্ত।

তাঁর হাতে পরেই আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপের মতো জ্বলে উঠল ইস্টবেঙ্গল। ফিরতি লিগে জয়ের শুরু। তিনটি ম্যাচ বাকি থাকতে ডার্বি জিতে সমর্থকদের মন জয় করে নিলেন তিনি। ১৯৬৩-৬৪ মরসুমে অমল দত্তর হাত ধরেই ইস্টবেঙ্গলের ঘুরে দাঁড়ানো। কিন্তু পরের বছর ১৯৬৫তেই বাংলা ছেড়ে পাড়ি দেন ওড়়িশায়। ওড়িশার ফুটবলকে তুলে আনেন সবার সামনে। সন্তোষ ট্রফির সেমিফাইনালে খেলে অমল দত্তর হাত ধরেই। আবার কলকাতায় ফেরেন ১৯৬৯ এ। এবার মোহনবাগানে। অমল দত্তর হাতে পড়ে লিগ, শিল্ড চ্যাম্পিয়ন হয় সবুজ-মেরুন। তার পরও ১৯৭০ এ সরে যেতে হয়েছিল। মাঝের কয়েকটি বছর এলোমেলো গেলেও ১৯৭৬এ ইস্টবেঙ্গলে ফিরেই রোভার্স কাপ জয়। লিগে রানার্স এক পয়েন্টের ব্যবধানে। শিল্ডে জয়েন্ট উইনার্স মোহনবাগানের সঙ্গে।

১৯৮০তে মহমেডান। তবে নানা সমস্যায় মাঝ পথেই সরে যেতে হয়েছিল। ১৯৮২তে আবার ইস্টবেঙ্গল। লিগ চ্যাম্পিয়ন করে ডুরান্ডে যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন করেন ইস্টবেঙ্গলকে। দু’বছর পর ১৯৮৪তে আবার ইস্টবেঙ্গল। ফেডারেশন কাপে রানার্স। শিল্ডে মোহনবাগানকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় ইস্টবেঙ্গল। পরের বছরই আবার শত্রুপক্ষে নাম লেখান। ১৯৮৫তে মোহনবাগানের কোচ হিসেবে ডুরান্ড ও রোভার্স জয়। ১৯৮৬তে মোহনবাগানকে লিগ, ফেড কাপ ও ডুরান্ড চ্যাম্পিয়ন করেন। এর পর আবার ১৯৯৭এ মোহনবাগানে ফেরেন। সেটাই সেই বিখ্যাত ডায়মন্ডের বছর। যা আজও মুখে মুখে ফেরে সকলের। যদিও ফেডারেশন কাপের সেমিফাইনালে ইস্টবেঙ্গলের কাছে হেরে যেতে হয়েছিল সেবার। কিন্তু সেই সিস্টেমেই লিগ চ্যাম্পিয়ন ওই একই বছরে।

কোচ হিসেবে ভারতকে চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন সাফ কাপে। নেহরু কাপে দেশকে কোচিং করিয়েছিলেন। তবে দেশের হয়ে কোচিংটা খুবই স্বল্প সময়ের জন্য। আবার মোহনবাগানে ফিরেছিলেন ২০০৫এ। ক্লাব ফুটবলকে উজার করে দিয়েছিলেন অমল দত্ত। বাংলার কোচিংয়ে নিয়ে এসেছিলেন নতুন ব্যাকরণ। বদলে দিয়েছিলেন অনেক ফুটবলারের জীবন। অনেকের কাছেই ছিলেন দ্রোনাচার্য। মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য, শ্যামল বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, শিশির ঘোষ, দেবাশিষ রায়, সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়দের মতো ফুটবলারদের ছোট ক্লাব থেকে তুলে এনে তারকা বানিয়েছিলেন তিনিই। আজ তাঁর প্রয়াণে শোকাহত বাংলা তথা ভারতের ফুটবল।

আরও খবর

ডায়মন্ড কোচ অমল দত্ত প্রয়াত

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Amal Dutta
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE