Advertisement
E-Paper

৩৫ বলে শতরান! রশিদ-ইশান্তদের পাড়ার স্তরে নামিয়ে আনলেন ১৪-র বৈভব, দাঁড়িয়ে দেখলেন দাদারা, জয় রাজস্থানের

আইপিএলে নজির ১৪ বছরের বৈভব সূর্যবংশীর। রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে ব্যাট করতে নেমে নতুন কীর্তি গড়ল বিহারের কিশোর। প্রমাণ করে দিল বয়স কম হলেও ব্যাট হাতে কারও থেকে কম যায় না।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২৫ ২২:৩৩
Picture of Vaibhav Suryavanshi

বৈভব সূর্যবংশী। ছবি: বিসিসিআই।

৩৫ বলে শতরান। আইপিএলে নজির ১৪ বছরের বৈভব সূর্যবংশীর। রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে ব্যাট করতে নেমে নতুন কীর্তি গড়ল বিহারের কিশোর ব্যাটার। সবচেয়ে কম বয়সি ক্রিকেটার হিসাবে আইপিএলে শতরান করল। গুজরাত টাইটান্সের বিরুদ্ধে ২১০ রান তাড়া করতে নেমে ব্যাট হাতে ঝড় তুলল বৈভব। ১৭ বলে অর্ধশতরান করে আইপিএলে কনিষ্ঠতম হিসাবে কীর্তিও গড়েছে। শুধু তাই নয়, গোটা বিশ্বে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এত কম বয়সে শতরান করার নজির আর কারও নেই। শেষ পর্যন্ত বৈভবের ব্যাট থেকে এসেছে ৩৮ বলে ১০১ রানের ইনিংস। ৭টি চার এবং ১১টি ছক্কা রয়েছে তার ইনিংসে।

আইপিএলের নিলামে বৈভবকে ১ কোটি ১০ লাখ টাকায় কিনেছিলেন রাজস্থান কর্তৃপক্ষ। তখন অনেক ক্রিকেট বিশেষজ্ঞই ভ্রু কুঁচকেছিলেন। বিহারের কিশোর ক্রিকেটারের উপর আস্থা রেখেছিলেন রাজস্থান কোচ রাহুল দ্রাবিড়। ভারতীয় ক্রিকেটের ‘দ্য ওয়াল’ বলেছিলেন, বৈভবকে পূর্ণ ক্রিকেটার হিসাবে গড়ে তুলবে রাজস্থান। দ্রাবিড় যে শুধু কথার কথা বলেননি, তা আইপিএলে সুযোগ পেয়েই প্রমাণ করে দিয়েছে বৈভব। লখনউ সুপার জায়ান্টসের বিরুদ্ধে প্রথম খেলার সুযোগ পেয়েছিল বৈভব। প্রথম বলেই শার্দূল ঠাকুরের মতো অভিজ্ঞ বোলারকে ছয় মেরেছিল। তখনই বোঝা গিয়েছিল, কোন মানসিকতা নিয়ে ব্যাট করতে নামে আইপিএলের কনিষ্ঠতম ক্রিকেটার। সোমবার ইশান্ত শর্মা, মহম্মদ সিরাজ, ওয়াশিংটন সুন্দরদের মতো বোলারদের নিয়ে এক রকম ছেলেখেলা করল বৈভব। রশিদ খানের মতো বিশ্বের অন্যতম সেরা বোলারও সুবিধা করতে পারলেন না! জুনিয়র সতীর্থের দাপট দেখে যশস্বী জয়সওয়ালের (৪০ বলে ৭০) মতো ব্যাটার ২২ গজের অন্য প্রান্তে নিজেকে গুটিয়ে রাখলেন। তাঁদের প্রথম উইকেটের জুটিতে উঠল ১১.৫ ওভারে ১৬৬ রান! গুজরাতের বোলারেরা যেখানেই বল ফেলেছেন, বৈভব অনায়াসে মাঠের বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছে। অভিজ্ঞ বোলারেরাও বুঝতে পারছিলেন না কোন লাইন এবং লেংথে বল করলে ১৪ বছরের ব্যাটারকে আটকানো যাবে। বোলিং পরিবর্তন বা ফিল্ডিং সাজানোর ক্ষেত্রে অসহায় দেখিয়েছে গুজরাত অধিনায়ক শুভমন গিলকেও।

বৈভবের বাড়ি বিহারের সমস্তিপুরের তাজপুরে। চার বছর বয়সে বাবার হাত ধরে ক্রিকেট শেখা শুরু তার। সাড়ে সাত বছর বয়সে বৈভবের বাবা সঞ্জীব তাকে নিয়ে যান পটনার এক ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে। সেখানেই কোচ সৌরভ কুমার প্রথম দেখেন বৈভবকে। অবাক হয়ে গিয়েছিলেন এত কম বয়সে তার ব্যাটিং দেখে। নেটে নামার জন্য ছটফট করত বৈভব। আর সেখানে তার বয়সি বোলারেরা প্রায় পাত্তাই পেত না। বড়দের সঙ্গে খেলানো হত বৈভবকে। আনন্দবাজার অনলাইনকে সৌরভ বলেছিলেন, “আমরা জানতাম নিলামে রাজস্থান ওর জন্য ঝাঁপাবে। প্রায় সব দলই বৈভবের খেলার ভিডিয়ো চেয়েছিল। দিল্লি আর রাজস্থান ট্রায়ালেও ডাকে। ১৯ নভেম্বর রাজস্থানের ট্রায়ালে গিয়েছিল বৈভব। পাঁচ দিনের মধ্যে ওরাই কিনে নিল ওকে।”

মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে বৈভব। বাবা কৃষক। একটি দোকানও আছে। জমি বিক্রি করে ছেলের ক্রিকেট শেখার খরচ জুগিয়েছেন সঞ্জীব। সমস্তিপুর থেকে ভোর ৪টের সময় বেরোতে হয়। পটনা পৌঁছতে সাড়ে ৭টা বেজে যায়। সেখানে কোচ মণীশ ওঝার কাছে প্রশিক্ষণ নেয় বৈভব। কাকভোরে খাবার বানিয়ে দেন বৈভবের মা। মণীশ বললেন, “সমস্তিপুরে বৈভবের বাড়ি থেকে পটনায় আমার অ্যাকাডেমির দূরত্ব প্রায় ১০০ কিলোমিটার। প্রতি দিন অনুশীলন করতে আসা সম্ভব ছিল না। এক দিন অন্তর আসত ও। তবে যে দিন আসত অন্তত ৫০০ বল খেলত।”

১২ বছর ২৮৪ দিন বয়সে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হয় মিডল অর্ডার ব্যাটার বৈভবের। ২১১ দিনের জন্য রেকর্ড গড়া হয়নি তার। ভারতীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলার নজির রয়েছে রাজপুতানার প্রাক্তন ক্রিকেটার আলিমুদ্দিনের। তার আগে ভারতের অনূর্ধ্ব ১৯ ‘বি’ দলের হয়ে ভাল পারফরম্যান্স করেছিল সে। ভাল খেলেছিল বিনু মাঁকড় ট্রফিতেও। সেই প্রতিযোগিতায় পাঁচ ম্যাচে ৪০০-র বেশি রান করে সে। গত বছর ১ অক্টোবর বেসরকারি টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার অনূর্ধ্ব ১৯ দলের বিরুদ্ধে ৫৮ বলে শতরান করে আলোচনায় উঠে আসে বৈভব। অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ের লাল বলের ক্রিকেটে ভারতের হয়ে এটাই দ্রুততম শতরান। ইনিংসে ছিল ১৪টি চার ও চারটি ছয়। স্ট্রাইক রেট ১৬৭.৭৪।

শুভমনের দলের বিরুদ্ধে ১০১ রানের ইনিংস বৈভবকে ভারতীয় ক্রিকেটে ‘তারকা’র মর্যাদা এনে দেবে। এত কম বয়সে এমন ব্যাটিং দেখে বিস্ময় লুকিয়ে রাখতে পারেননি ধারাভাষ্যকারেরাও। আইপিএলের প্লে-অফের লড়াইয়ে টিকে থাকার জন্য গুজরাতের বিরুদ্ধে জয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল রাজস্থানের জন্য। বৈভবের ব্যাটেই এল সেই জয়। প্রথমে ব্যাট করে ৪ উইকেটে ২০৯ রান করেছিলেন শুভমনেরা। জবাবে ১৫.৫ ওভারে ২ উইকেটে ২১২ রাজস্থানের। ২৫ বল বাকি থাকতে ৮ উইকেটে ম্যাচ জিতল রিয়ান পরাগের দল। এ দিনের জয়ের ফলে ১০ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে তালিকায় অষ্টম স্থানে উঠে এল রাজস্থান। হুইলচেয়ারে থাকা দ্রাবিড়কে দাঁড় করিয়ে দিল ১৪ বছরের সূর্যবংশী।

Vaibhav Suryavanshi Rajasthan Royals record
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy